মাধবপুরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত এলাকা থেকে কয়েকশ’ লোক প্রবেশ করায় আতঙ্ক বিরাজ

0
434
হবিগঞ্জে করোনার উপসর্গ নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীর মৃত্যু

মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধঃ হবিগঞ্জের মাধবপুরে করোনাভাইরাস সংক্রমিত এলাকা থেকে কয়েকশ’ লোক প্রবেশ করায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রশাসনও বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে।এদিকে, বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা জেলাকে করোনার ডেঞ্জার জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সরকার করোনা প্রতিরোধে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস্ ও দোকানপাট বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকেই কর্মস্থল থেকে গ্রামের বাড়ি মাধবপুর উপজেলায় শত শত লোক যে যেভাবে পারে চলে আসে। অধিকাংশই হোম কোয়ারেন্টিন না মেনে গ্রামের পাড়া ও মহল্লায় আড্ডায় লিপ্ত হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন দেখলে তারা আড়ালে চলে গেলেও ফের জড়ো হয়। কোন কোন এলাকায় ডেঞ্জার জোন থেকে আগতদের ঘুরাফেরা না করে ঘরে থাকতে বলতে গিয়ে অনেকই অপদস্ত হচ্ছেন। তবে, স্বস্তির বিষয় মাধবপুরে এখনো করোনাভাইরাস পজেটিভ পাওয়া যায়নি।জানা গেছে, মাধবপুরের কয়েক’শ মানুষ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিল্প কারখানা, গার্মেন্টস্ ও ব্যাগের কাজে কর্মরত রয়েছেন। পুরান ঢাকায় মাধবপুর উপজেলার প্রায় অর্ধশত ব্যাগ তৈরির কারখানা ও হোটেল ব্যবসা রয়েছে। এতে মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ লোক কর্মরত রয়েছেন। নারায়গঞ্জে ইটের ভাটায়ও বেশ কিছু শ্রমিক কাজ করে। গত ক’দিনে রাতের আঁধারে করোনা উপদ্রুত ওইসব এলাকায় কর্মরত মানুষজন মাধবপুর উপজেলায় নিজ বাড়িঘরে আসতে থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক।

পৌর শহরসহ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ডেঞ্জার জোন থেকে লোকজন আসায় করোনার উপজেলাবাসী ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে, উপজেলা প্রশাসন এদের তালিকা তৈরি করছে বলে জানা গেছে। চৌমুহনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আপন মিয়া জানান, নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ওয়ার্ড মেম্বার ও চৌকিদারদের মাধ্যমে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জ থেকে আগতদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে। করোনার উপসর্গ আছে কি-না এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে, পুরান ঢাকায় ব্যগের কারখানায় কর্মরত রয়েছে উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কয়েকশ মানুষ। ঢাকায় কারখানা বন্ধ থাকায় অধিকাংশই এখন গ্রামে এসেছেন। তারা ঘরে না থেকে পাড়া ও মহল্লা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাটলি গ্রামের একজন সচেতন এক নাগরিক বলেন, ঢাকা থেকে আগতরা অবাধে ঘুরছে। ঘরে থাকতে পরামর্শ দিলে ক্ষেপে যায়। তিনি জানান, বাঘাসুরা গ্রামের অনেক গার্মেন্টসকর্মী ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় ফেরি করে ব্যবসা করে। ডেঞ্জার জোন থেকে আসা লোকজনকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েও কাজ হচ্ছেনা।

বুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম মামুন বলেন, তার ইউনিয়নে ঢাকায় ব্যবসার সাথে জড়িত অনেক লোকজন রয়েছে। এদের অনেকই কিছুদিন হল বাড়ি এসেছে। প্রশাসনের নির্দেশে তাদের তালিকা হচ্ছে। কারো মধ্যে করোনা উপসর্গ আছে কি-না এ ব্যাপারে স্বাহ্য বিভাগ ও প্রশাসন খোঁজ খবর নিচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এএইচ এম ইসতাক মামুন বলেন, এ ব্যাপারে আমরা খুবই সতর্ক আছি। কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে, আশার কথা হল এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়নি এ উপজেলায়।

মাধবপুর থানার ওসি মো. ইকবাল হোসেন জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার মাধবপুরের সোনাই নদীর দক্ষিণ পাশে পুলিশের একটি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ২৪ ঘন্টা পুলিশের অবস্থান রয়েছে চেকপোস্টে। এ চেকপোস্ট বসার পর কোন যাত্রীবাহী গাড়ী ঢুকতে দেয়া হয়নি। তবে, চেকপোস্ট বসানোর পূর্বে এলাকায় কিছু লোক ঢুকেছে। তারা হোম কোয়ারেন্টিন মেনে চলছে কি-না এ ব্যাপারে নজরদারী জোরদার করা হয়েছে। মাধবপুর ট্রাফিক জোনের ইন্সপেক্টর ফারুক আল মামুন ভুইযা বলেন, করোনার সংক্রমণ রোধে সড়ক মহাসড়কে জরুরী কাজ বাদে চলাচলকারী যানবাহন ও মানুষকে ঘরে থাকতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কোন যাত্রীবাহী গাড়ি চলতে দেয়া হচ্ছে না।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আয়েশা আক্তার জানান, কমলপুর গ্রামে এমন পাঁচজনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা নিশ্চিত করা হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গ্রাম পুলিশদেরকে এমন লোকদের তালিকা করার জন্য বলা হয়েছে। তালিকা অনুয়ায়ী আইনশৃংখলা বাহিনীসহ এলাকায় গিয়ে কোয়ারেন্টিন মেনে চলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কোয়ারেন্টিন মানছেনা এমন লোক পাওয়া গেলে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here