মাদারীপুরে খুনিদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ

0
319

মাদারীপুর প্রতিনিধি ॥
মাদারীপুরে স্ত্রীর পরোকীয়া জের ধরে স্বামীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত পরোকীয়া প্রেমিক ও আপন মায়ের বিচারের দাবীতে আদালতে মামলা করেছে নিহতের ছেলে। স্থানীয়রা অভিযুক্তদের বিচার দাবী করে শনিবার দুপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে অভিযুক্তরা। ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজরাপুর গ্রামে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র ও মামলার বিবরনে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজরাপুর গ্রামের কামাল মুন্সির স্ত্রী নাছিমা বেগমের সাথে পরোকীয়া প্রেম ছিলো একই গ্রামের সামসু খানের ছেলে মামুন খানের। এই সম্পর্কের কারনেই স্বামীকে না জানিয়ে মামুনকে ৫ লক্ষ টাকা ধার দেয় নাছিমা। বিভিন্ন সময় ধারের টাকা ফেরত চাইলেও টাকা ফেরত দেয়নি মামুন। এরপর টাকা ধার দেয়ার বিষয়টি নাছিমার স্বামী জেনে যায়। এরপর নাছিমা এবং মামুনকে বিভিন্ন সময় গালমন্দ করে কামাল। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে খুনের পরিকল্পনা। পরে গত ২০ এপ্রিল ঘুমের ঘরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে কামাল মুন্সিকে। এ সময় মামুনকে হত্যায় সহযোগিতা করেন কামাল মুন্সর স্ত্রী নাছিমা বেগম।
জানা গেছে, গত ২০এপ্রিল গভীর রাতে মাদারীপুর সদর উপজেলা হাজরাপুর গ্রামের রহিম মুন্সির ছেলে কামাল মুন্সি (৪৮) মারা যায়। মৃত্যুর পরে তার স্ত্রী নাছিমা বেগম (৪০) তার সন্তানদের হত্যাকান্ডের বিষয় না জানিয়ে হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে প্রচার করে দাফন কাজ সম্পন্ন করে। এর পরে কামাল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান তার মা নাছিমা বেগমের মোবাইল ফোন ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে একটি কল রেকর্ড পায়। সেই কল রেকর্ডে ফাঁস হয়ে যায় হত্যা কান্ডের তথ্য। এই কল রেকর্ডের সূত্রে ধরেই গত বৃহস্পতিবার মাদারীপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মা ও তার পরোকীয়া প্রেমিক মামুন খান (৩৫) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে নিহত কামাল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান। মামলার অন্য আসামীরা হলেন মামুনের ভাই সুমন খান ও মামুনের বাবা সামসু খান।
এ ব্যাপারে নিহত কামাল মুন্সির স্ত্রী নাছিমা বেগম বলেন, ‘মামুন বিদেশ যাওয়ার সময় ওকে ৪ লক্ষ টাকা এনে দেই। বিভিন্ন সময় টাকা চাইলে টাকা দেয় না। পরে আমার স্বামীকে জানাই। স্বামীকে জানালে মামুন আমাকে হুমকি দেয় মেরে ফেলার। একদিন রাতে আমাদের ঘরে ঢুকে আমার স্বামীকে হত্যা করে মামুন। হত্যার বিষয়টি তখন প্রকাশ করলেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নাছিমা বলেন, হত্যার ঘটনা প্রকাশ করলে আমাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়, তাই আমি হত্যার বিষয় প্রকাশ করি নি।’
নিহতের ছেলে মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমার মায়ের মোবাইল ঘাটাঘাটি করতে গিয়ে একটি কল রেকর্ড পাই। সেই কল রেকর্ড শুনেই বাবার খুনের বিষয়টি নিশ্চিত হই। কল রেকর্ড শুনে আমি জেনেছি আমার বাবাকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি বাবার মৃত্যুর দিন তাবলিগে গিয়েছিলাম। আমার বাবাকে যারা খুন করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা সবাই স্বাভাবিক ছিলো। হঠাৎ করে নাছিমার মোবাইল ফোনে তার ছেলে একটি কল রেকর্ড পায়। সেই রেকর্ডে হত্যার পরিকল্পনার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। এর পর থেকেই মামুন পলাতক রয়েছে। এই ঘটনায় কঠোর বিচার হওয়া উচিত। যা দেখে আর কেউ যেন এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস না পায়।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, এই ঘটনায় কোর্টে একটি মামলা হয়েছে। বিচারক লাশ উত্তোলন করে ময়না তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। ময়না তদন্তে এবং আমাদের তদন্তে যদি হত্যার বিষয় প্রমান হয় তাহলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
এদিকে হত্যার বিচার দাবী করে শুক্রবার দুপুরে মানববন্ধন এবং বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয়রা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নিহত কামাল মুন্সির ছেলে মেহেদী হাসান স্থানীয় ইউনিয়র পরিষদের সদস্য আনোয়ার মোল্লা, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here