মাদকসেবী’কে ধরতে গিয়ে মেডিকেলছাত্রের স্ত্রীর শ্লীলতাহানি পুলিশের

0
340

খবর৭১: খুলনায় মাদকসেবী বলে অভিযুক্ত এক তরুণকে আটক করতে গিয়ে তার স্ত্রীকে (বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রী) বোরকা ও নেকাব ছিঁড়ে পুলিশ শ্লীলতাহানি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর পর ওই তরুণীকে থানায় নিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশের এক কর্মকর্তার সুপারিশে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।

তবে পুলিশের দাবি, মাদকসেবী স্বামীকে পালাতে সহযোগিতা করেছে তার স্ত্রী এবং তার সঙ্গে কোনো ধরনের শ্লীলতহানির ঘটনা ঘটেনি।

নগরীর সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার ময়লাপোতা এলাকায় গত ২৯ মে এ ঘটনা ঘটে।

মাদকসেবী বলে অভিযুক্ত তরুণের নাম মাসুদ উদ্দীন রাসেল। তিনি ওই এলাকার ডা. মো. নাসিম উদ্দীনের ছোট ছেলে। পেশায় তিনি কম্পিউটার, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন সেট মেরামতকারী। তার সঙ্গে অনেক পুলিশের সখ্য রয়েছে।

ঘটনার দিন ইফতারির আগে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ২০ সদস্যের একটি পুলিশ দল রাসেলের ময়লাপোতার বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ বাসভবনের তৃতীয় তলার কলাপসিবল গেট ধরে ধাক্কা দিতে থাকে।

রাসেল জানান, ইফতারির সময় হওয়ায় এবং স্ত্রী বোরকা পরতে যাওয়ার কারণে গেট খুলতে দেরি হয়। গেট খোলার পর পরই দুই মহিলা পুলিশ তার স্ত্রীর দুই হাত ধরে এবং এক পুরুষ সদস্য তার স্ত্রীকে চড়-থাপ্পড় মারেন। বোরকার ভেতর মাদক আছে বলে নেকাব ছিঁড়ে ফেলেন। এর পর তার দেহতল্লাশি করা হয়। তিনি আরও বলেন, তার স্ত্রীকে টেনেহিঁচড়ে সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটক রাখা হয়। রাসেলের অভিযোগ, তার নামে কোনো মামলা না থাকলেও কয়েক বছর ধরে ঈদের সময় পুলিশ তার বাসায় এ ধরনের অভিযান চালায়।

রাসেলের স্ত্রী ও মেডিকেল কলেজছাত্রী বলেন, পুলিশ তার মুখের নেকাব টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে।

জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতেই পুলিশের শ্লীলতাহানি এবং মারধরের শিকার স্ত্রীকে নিয়ে রাসেল খুলনা জেনারেল হাসপাতালে যান। চিকিৎসা শেষে হাসপাতালের রশিদে ‘পুলিশ কেস’ হিসেবে সিলও দেয়া হয়।

ঘটনার বিষয়ে সোনাডাঙ্গা থানার ওসি মমতাজুল হক যুগান্তরকে বলেন, রাসেলকে পালানোর সুযোগ করে দেয়ায় এবং দরজা খুলতে দেরি করায় পুলিশ সদস্যরা তার স্ত্রীর ওপর চড়াও হয় এবং থানায় নিয়ে তাকে আটক রাখা হয়। তার সঙ্গে কেউ খারাপ ব্যবহার করেনি। পরে থানার সাবেক ওসি তৈমুরের সুপারিশে রাসেলের স্ত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে জানান ওসি।

অভিযানকারী পুলিশ দলের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) নেতৃত্বে ২০ পুলিশ সদস্য রাসেলের বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিলেন। এতে পাঁচ নারী সদস্য ও ১৫ পুরুষ পুলিশ সদস্য ছিলেন।

মাদক সেবনের জন্য অভিযুক্ত রাসেলের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা মমতাজুল হক। তিনি বলেন, রাসেলরা ওই এলাকার প্রভাবশালী এবং তার বাবা ডা. মো. নাসিম উদ্দীন খুলনার একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি। তাদের নগরীতে অন্তত পাঁচটি বহুতল ভবন রয়েছে। রাসেলের এক ভাই কানাডা ও এক ভাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী।

মাদক সেবনের অভিযোগে রাসেলকে ধরতে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালাতে গেলে তাকে বাসায় পাওয়া যায় না বলে জানান ওসি। তবে তার বিরুদ্ধে থানায় এ সংক্রান্ত কোনো মামলা না থাকার কথাও স্বীকার করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র সোনালী সেন যুগান্তরকে বলেন, সোনাডাঙ্গা থানা এলাকায় মাদকসেবীর স্ত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে শুনেছেন। তবে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। বিষয়টি নিয়ে তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলেছেন।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here