খবর৭১:১৭ মে চট্টগ্রামের মোমিন রোডের একটি মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে বের হওয়ার সময় হাবিবুর রহমানকে ধরে নিয়ে যায় সাদাপোশাকের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর বলা হয়, তাকে নিয়ে ‘মাদকবিরোধী’ অভিযানে গেলে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনি নিহত হয়েছেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ‘হাবিবুরের সহযোগীরা গোপন আস্তানায় লুকিয়ে ছিল এবং র্যাবের ওপর তারা প্রথমে গুলিবর্ষণ করে।’
বাংলাদেশের চলমান এসব বন্দুকযুদ্ধ নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম টেলিগ্রাফ। এতে বলা হয়েছে, মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বিরোধীদের ‘গুপ্তহত্যা’ করা হচ্ছে।
মাদকবিরোধী অভিযানের নামে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ এখন বাংলাদেশের প্রতিদিনের ঘটনা। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো একে তুলনা করছে, ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের সহিংস অভিযানের সঙ্গে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত এসব অভিযানে কমপক্ষে ১২০ জন মানুষ নিহত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ইয়াবার বিস্তার রুখতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে।
কিন্তু নিহতের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের। সেই সঙ্গে অভিযোগ উঠেছে, আগামী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক বিরোধীদের ভয় দেখানো হচ্ছে এই অভিযানের মাধ্যমে।
হাবিবুর রহমানের পরিবার টেলিগ্রাফকে জানিয়েছে, ৪২ বছরের হাবিবুরকে মসজিদ থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নাম না প্রকাশের শর্তে তার এক আত্মীয় বলেন, ‘মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসার পরই তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে তাকে হত্যা করা হয়েছে।’
ওই আত্মীয় আরো বলেন, ‘তিনি মাদক বিক্রেতাও ছিলেন না, মাদকাসক্তও ছিলেন না। তাকে হত্যা করার কারণ, তিনি সরকারবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ভূমি ইস্যুতে প্রতিবাদ করেছিলেন।’
বাংলাদেশের এসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে শেষ পর্যন্ত মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে মার্কিন দূতাবাস। রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘অবশ্যই এসব মানুষের মৃত্যুতে আমি উদ্বেগ জানাচ্ছি। গণতন্ত্রে প্রত্যেকের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার পাওয়ার অধিকার আছে।’
দেশকে মাদকমুক্ত করার প্রত্যয় জানিয়ে মে মাসের শুরুর দিকে অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, মাদকের কোনো ‘গডফাদারকে’ ছাড় দেয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘কোনো নিরাপরাধ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে না বা টার্গেট করা হচ্ছে না। যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তা মীমাংসা করা হবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও কোনো ধরনের অন্যায়ের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এগুলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নয়। নিজেদের রক্ষায় আমাদের বাহিনী অস্ত্র ব্যবহারে বাধ্য করা হচ্ছে।’
বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, যে দেশে মাদক ব্যবসার সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও পুলিশ জড়িত, সেখানে এই অভিযান বিরোধীদের ভয় দেখাতে এবং যারা এ সম্পর্কে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানে তাদের দমনে ব্যবহৃত হবে।
সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এই অভিযানকে ‘অবৈধ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, পুলিশ এখানে বিচারক, আইনজীবী ও সাজা কার্যকর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিচ্ছে। মাদক ব্যবসা থামাতে এই অভিযানের ভূমিকাকে সামান্য বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার মতে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই অভিযানের মাধ্যমে সম্ভবত বিরোধীদের ভয় দেখানো হচ্ছে।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচন এগিয়ে আসছে, সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের নামে এবং অন্য উপায় ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আরো বাড়তে পারে।
খবর৭১/জি: