মাদকবিরোধী অভিযান : রাজধানীসহ সারা দেশে নিহত ৯

0
227

খবর৭১: চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাত জেলায় নয়জন নিহত হয়েছেন।

এর মধ্যে নেত্রকোনায় অজ্ঞাতনামা দুই যুবক এবং রাজধানীর তেজগাঁও, কুমিল্লা, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, ময়মনসিংহ ও শেরপুরে একজন করে নিহত হয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতরা সবাই মাদক বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাদক কারবারিদের আটক করতে গেলে তারা পুলিশের ওপর গুলি চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি চালালে এ নিহতের ঘটনা ঘটে।

তবে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ঝিনাইদহের শামীমের স্ত্রী শামসুন্নাহার অভিযোগ করেন, গত মঙ্গলবার বিকালে একটি মাইক্রোবাসে করে আড়পাড়া বিহারি মোড়ের একটি দোকান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তার স্বামীকে। সেদিন থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

ঢাকা : রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কামরুল ইসলাম (৩৫) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা সূত্রে জানা যায়, র‌্যাব ২-এর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কামরুল মারা গেছেন।

বন্দুকযুদ্ধের পর আহতাবস্থায় কামরুলকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাত সোয়া ১টার দিকে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

লাশ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে। নিহতের বাবার নাম মানিক মিয়া। পুলিশ জানিয়েছে, মহাখালীর দক্ষিণপাড়ায় তার বাসা।

এদিকে র‌্যাবের মিডিয়া উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক এসএমএস বার্তায় জানানো হয়েছে, তেজগাঁও রেললাইন বস্তি এবং মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কামরুল ১৫টির অধিক মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামি।

কুমিল্লা : কুমিল্লায় পুলিশের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানে মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিব্ধ হয়ে কামাল হোসেন ওরফে ফেন্সি কামাল (৫১) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের মহিষমারা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত কামাল হোসেন জেলার আদর্শ সদর উপজেলার রাজমঙ্গলপুর গ্রামের হিরন মিয়ার ছেলে। ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অভিযানে অংশ নেয়া কুমিল্লা ডিবি পুলিশের এসআই শাহ কামাল আকন্দ পিপিএম।

পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধার করতে জেলার বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার এবং ডিবির ওসি নাছির উদ্দিন মৃধার নেতৃত্বে পুলিশের দুটি টিম জেলার বুড়িচং উপজেলার মহিষমারা এলাকায় অবস্থান নেয়।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী কামাল হোসেন ও তার সহযোগীরা ওই এলাকা দিয়ে মাদক পাচারকালে পুলিশ তাদের আটকের চেষ্টা চালায়।

ডিবির এসআই শাহ কামাল আকন্দ বলেন, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষায় পাল্টা ৩৪ রাউন্ড গুলি চালায়।

উভয়পক্ষের গোলাগুলির বিনিময়ে ঘটনায় মাদক বিক্রেতা ফেন্সি কামাল গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে কুমেক হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঘটনাস্থল থেকে হানিফ ও ইলিয়াস নামে দুই মাদক কারবারিকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত হানিফ (৪২) জেলার আদর্শ সদর উপজেলার ছাওয়ালপুর গ্রামের মফিজ মিয়ার ছেলে এবং ইলিয়াস (২৮) জেলার চান্দিনা উপজেলার কোরপাই গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে।

বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এক রাউন্ড কার্তুজসহ একটি পাইপগান ও ৫০ কেজি গাঁজা।

নিহত ওই মাদক কারবারির বিরুদ্ধে বুড়িচং ও কোতোয়ালি মডেল থানায় ১২টির অধিক মাদকের মামলা রয়েছে বলেও ওসি জানিয়েছেন।

কক্সবাজার : জেলার মহেশখালীতে কথিত বন্দুকযুদ্ধে এক ইয়াবা বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। উদ্ধার হয়েছে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ অস্ত্র ও গুলি।

মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ খবর পান বড় মহেশখালীর পাহাড়তলী এলাকায় দুই সন্ত্রাসী বাহিনীর মধ্যে মাদক বিক্রিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে বন্দুকযুদ্ধ চলছে।

তিনি পুলিশের একটি ইউনিট নিয়ে দ্রুত ওই এলাকায় পৌঁছান। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালায়। আধা ঘণ্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধের পর সন্ত্রাসীরা পিছু হটে।

এ সময় পুলিশ এক ব্যক্তিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। তার নাম মোস্তাক আহমদ (৩৫)। তিনি বড় মহেশখালী পাহাড়তলী এলাকার আনোয়ার পাশার ছেলে বলে এলাকাবাসী শনাক্ত করে।

পরে তাকে উদ্ধার করে মহেশখালী হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থল থেকে ৩০ রাউন্ড গুলির খোসা, ৪টি বন্দুক, ৭ রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

ওসি জানান, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী মোহাম্মদ উল্লাহ ও আরিফ উল্লাহর মধ্যে মাদক বিক্রির বিরোধের জের ধরে ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মাদক কারবারি বলে অভিযুক্ত ইউনুস আলী দালাল (৪২) নামে এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন।

পুলিশের ভাষ্য, মাদক ভাগাভাগি নিয়ে দুগ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কলারোয়ার বড়ালি রামকৃষ্ণপুর সীমান্তে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ বলেছে, ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটারগান ও ৭০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেছে।

কলারোয়া থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ বলেন, রাত পৌনে ২টায় তার কাছে খবর আসে যে বড়ালি সীমান্তে মাদক চোরাচালানিদের দুগ্রুপ মাদক ভাগাভাগি নিয়ে গোলাগুলি এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।

এ খবর পেয়ে টহল পুলিশের একটি দল নিয়ে উপপরিদর্শক সোলায়মান হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

ওসি আরও বলেন, কিছুক্ষণ পর গোলাগুলি থেমে গেলে এক ব্যক্তিকে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করতে শোনা যায়।

পুলিশ তাকে উদ্ধার করে জানতে পারে তার নাম মো. ইউনুস আলী দালাল। পরে তাকে কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত ডাক্তার শফিকুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওসি বলেন, নিহত ইউনুস আলী দালাল কলারোয়ার দক্ষিণ ভাদিয়ালী গ্রামের আবদুল্লাহ দালালের ছেলে। তিনি একজন চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় কয়েকটি মাদক মামলা রয়েছে।

ইউনুস আলীর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কলারোয়া থেকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে আড়পাড়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শামীম সরদার (৪৫) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের মাঠে ওই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

এ সময় একটি বিদেশি পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, ১৭ পিস ফেনসিডিল ও ৪৮০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বলে দাবি পুলিশের। নিহত শামীম সরদার উপজেলার শিবনগর গ্রামের মোমিন সরদারের ছেলে।

তবে নিহত শামীমের স্ত্রী শামসুন্নাহারের দাবি, গত মঙ্গলবার বিকালে একটি মাইক্রোবাসে করে আড়পাড়া বিহারি মোড়ের একটি দোকান থেকে তুলে নিয়ে যায় তার স্বামীকে। সেদিন থেকেই তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান খান বলেন, মাদক কেনাবেচা হচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আড়পাড়া এলাকায় মোবারকগঞ্জ চিনিকলের মাঠে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছোড়ে মাদক বিক্রেতারা।

এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়লে অন্যরা পালিয়ে গেলেও শামীম গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিহত শামীমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৯টি মামলা রয়েছে।

নেত্রকোনা : জেলার সদর উপজেলার মদনপুরে বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাতনামা দুই যুবক নিহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দুটি পাইপগান, তিন হাজার ৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, সাতশ তিন গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মদনপুর ইউনিয়নের মনাং নামক স্থানে সঞ্জু মিয়ার ফিশারিতে দুই মাদক বিক্রেতা অবস্থান করছিলেন। পুলিশ সেখানে অভিযানে গেলে মাদক বিক্রেতারা তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের গুলিতে অজ্ঞাতনামা দুই যুবক গুলিবিদ্ধ হন। তাদের নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়ার পথে তারা মারা যান। পুলিশ নিহতদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে।

অভিযানের সময় পুলিশ দুটি পাইপগান, ৭০৩ গ্রাম হেরোইন, তিন হাজার সাত পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে।

নেত্রকোনার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, অভিযানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুজন মাদক বিক্রেতা নিহত ও মডেল থানার তিনজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ নগরীতে বন্দুকযুদ্ধে ৩৪ বছর বয়সী রাজন মিয়া নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আশিকুর রহমান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, নগরীর পুরোহিত এলাকার হারনি মিয়ার ছেলে শীর্ষ মাদক বিক্রেতা রাজনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসহ নয়টি মামলা রয়েছে।

শুক্রবার রাত পৌনে ২টার দিকে পুরোহিত মহল্লায় রেলওয়ে কলোনির রেনু বেগমের পুকুরের পাড়ে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

ওসি বলেন, ওই এলাকায় মাদক বিক্রেতাদের অবস্থানের সংবাদে পেয়ে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় মাদক বিক্রেতারা গুলি ছুড়লে আত্মরক্ষার্থে পুলিশও গুলি ছোড়ে। এতে রাজন আহত হলে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন তার মৃত্যু হয়।

নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here