মাছের বাজারে বৈশাখী হাওয়া

0
687

খবর৭১ঃ বাঙালির দুয়ারে কড়া নাড়ছে প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আর মাত্র ১৫দিন পরেই বাঙালির ঐতিহ্যময় এ উৎসব। ইলিশের সঙ্গে পান্তা না হলে বাঙালিয়ানাই যেন বৃথা! তাই উৎসবকে সামনে রেখে রাজধানীতে ইলিশের বাজারে লেগেছে বৈশাখী হাওয়া। বর্ষবরণ উৎসবের দিন যতো এগিয়ে আসছে, ততোই উত্তাপ বাড়ছে রুপালি ইলিশের দামে। ক্রেতাদের অভিযোগ, পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের প্রধান অনুষঙ্গ ইলিশের এই ‘নগরকেন্দ্রিক’ চাহিদাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছেন এক শ্রেণির পাইকারি ও খুচরা মাছ ব্যবসায়ী। এজন্যই ইলিশের দাম চড়া।

শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ী ও গুলিস্তানের ঠাঁটারি বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় বাজারে ক্রেতা সমাগম বেশি। বাজারগুলোতে ইলিশের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। ক্রেতাদের কাছে টানতে বিক্রেতারা ডাক দিচ্ছেন ‘মামা নিয়ে যান, নিয়ে যান। দাম কমায় দিবো। সামনে আরও দাম বাড়বে। এখন নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিয়েন।’ তবে বৈশাখকে উপলক্ষ করে ইলিশের বাজার রীতিমতো চড়া। ওজন যত বেশি তার দামও আকাশচুম্বী।

কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ইলিশের উপস্থিতি ও বিক্রি দুটোই বেড়েছে। ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম চাওয়া হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা। এই ওজনের ইলিশ কিছুদিন আগেও এক হাজার থেকে এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এছাড়া নদীর ৯০০ থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। ৮০০ গ্রামের ইলিশ প্রতি কেজি এক হাজার ৬০০ টাকা এবং ৭০০ গ্রামের প্রতি কেজি এক হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এক কেজি ১০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের বড় ইলিশও কিছু বাজারে দেখা গেছে। দাম চাইছে প্রতি কেজি দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা। আর দেড় কেজি বা দুই কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকায়। তবে ৫০০ গ্রামের নিচে এক হালি ইলিশের দাম দুই হাজার টাকা। তবে বার্মিস ও সাগরের ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে কম।

এছাড়া ‘তাজা’ বলে যেসব ইলিশ বিক্রি হচ্ছে তার বেশিরভাগই কয়েক মাস আগে মজুদ করা হিমায়িত ইলিশ। বাড়তি লাভের আশায় পয়লা বৈশাখের দুই সপ্তাহ আগে থেকে সেগুলো বাজারে ছাড়া হয়েছে। এছাড়া বাজারে আমদানি করা মিয়ানমারের ইলিশও প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারের ইলিশ বিক্রেতা জয়নাল আবেদিন বাংলানিউজকে বলেন, বৈশাখ এলে ইলিশের চাহিদা বাড়ে। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। সরকার মার্চ ও এপ্রিল এ দুই মাস জাটকা ধরা নিশেষ করায় নদীতে শুধু বড় মাছ ধরতে জাল ফেলছে জেলেরা। কিন্তু বৈশাখী বাজার ধরার জন্য তারা আপাতত ইলিশ মজুদ করে রাখছে। বৈশাখের দুইদিন আগে তারা বাজারে মাছ ছাড়বে ভালো দাম ও বেশি লাভের আশায়। তাই বাজারে এখন বার্মিস ও সাগরের ইলিশে ভরা। এই ইলিশ নদীর ইলিশের তুলনায় স্বাদ ও গন্ধ কম হওয়ায় এদের চাহিদা কম। তারপরও এবার এই ইলিশ দিয়ে পহেলা বৈশাখ পার করতে হবে বাঙালিদের।

তিনি বলেন, বৈশাখের আগে নদীর ইলিশ আসলেও দাম থাকবে আকাশচুম্বি। এছাড়া বাজারে ইলিশের ক্রেতাও অনেক কম। কারণ এখন আগে থেকেই সবাই ইলিশ সংরক্ষণ করে রাখে।

কারওয়ানবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা ইমন ব্যাপারী বাংলানিউজকে বলেন, বাঙালির নববর্ষের সঙ্গে ইলিশের কোনো যোগসূত্র নেই। এটা একটা বাণিজ্যিক উপকরণ। বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশ মাছ কিনতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু সবাই কিনছে তাই কেনা। কিন্তু ব্যবসায়ীরা উপলক্ষ পেলেই দাম বাড়িয়ে দেয় অভিযোগ করে তিনি বলেন, ইলিশের এই চাহিদাকে পুঁজি করে ফায়দা লুটছেন এক শ্রেণির পাইকারি ও খুচরা মাছ ব্যবসায়ী। এজন্যই ইলিশের দাম চড়া।

যাত্রাবাড়ী বাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ভোরে পদ্মার কিছু বড় আকারের ইলিশ বিক্রি করেছেন। এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ ২ হাজার, ১২০০ গ্রামের একটি ইলিশ তিন হাজার টাকা, আর এক কেজি ৫০০ গ্রামের একটি ইলিশ ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। যার দাম এক সপ্তাহ আগেও ছিল দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা। বৈশাখের জন্য বড় আড়ৎদার ও জেলেরা মাছ সংরক্ষণ করছে। বৈশাখের এক সপ্তাহ আগে বাজারে ছাড়বে দাম বেশির আশায়। কারণ সেসময় দাম বেশি থাকে। কিন্তু এবার নদীর ইলিশের সরবরাহ একেবারেই কম। বাজারে সাগরের ইলিশই বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তাই এবার কক্সবাজার ও বার্মিস ইলিশ দিয়ে বৈশাখ করতে হবে।

যাত্রাবাড়ী বাজারে ইলিশ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী হারুণ বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে ইলিশ কিনতে আসলাম। ৮শ’ টাকা দিয়ে একটি কিনেছি। বিক্রেতা ওজন বলছে ৭শ’ গ্রাম। জানি না আসলে কতটুকু হবে। তবে দাম নিয়ে কোনো ক্ষোভ নেই। মাছটা যেন বার্মিস না হয়ে দেশী ইলিশ হয়।

ঠাঁটারিবাজারের ইলিশ ব্যবসায়ী ভগিরথ বর্মন বাংলানিউজকে জানান, মাছের বিক্রি এখনও প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। তবে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে এ দাম আরও বেড়ে যাবে। এখন আমরা আড়তের আগের মালই কিনতে পারছি। তাছাড়া এখন তো সেই হারে মাছ ধরা পড়ছে না। তাই আড়তদাররা আগের মাছ দিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করছে। আমরাও সেই আগের মাছ বিক্রি করছি।

তিনি জানান, তার দোকানে বরিশাল ও চাঁদপুর থেকে আনা ইলিশ বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি ৩শ’ গ্রাম ওজনের প্রতি পিস ইলিশ বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা। ৫শ’ গ্রাম ওজনের প্রতি পিস বিক্রি করছেন ৬শ’ টাকায়।

জানা গেছে, রাজধানীতে ইলিশ মূলত তিন ধাপ পেরিয়ে ক্রেতার হাতে পৌঁছে। প্রথম দফায় মালিকদের কাছ থেকে আড়তে আসে। তারপর আড়ত থেকে পাইকাররা মাছ কিনে নেয়। সেখান থেকে পরবর্তীতে খুচরা বাজারে মাছ বিক্রি হয়। এতো হাতবদলের কারণে দেখা যায় ইলিশের দাম ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি যোগ হয়ে যায়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here