মাইক্রোসফট’র ব্রান্ড এ্যাম্বাসেডর কুড়িগ্রামের ফাতেমা

0
288

 

আরিফুল ইসলাম সুজন ( কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফাতেমা মাইক্রোসফটের ব্রান্ড এ্যাম্বাসেডর হয়ে শুধু সবাইকে চমকে দিলেন না; আলোচনায় উঠে এলেন নিজের জীবনের কাহিনী শুনিয়ে। দিনমজুর বাবা’র সংসারে ৪ বোনসহ ৬ জনের টানাটানির সংসারে চতুর্থ শ্রেণিতেই পড়াশুনার পাঠ চুকে যায় ফাতেমার। অন্যের বাড়িতে ঠাঁই হয় গৃহকর্মী হিসেবে।
ফাতেমা জানায়, ৯ বছর বয়সে আমি অন্যের বাড়িতে কাজের মেয়ে হিসেবে বাবা-মা-বোনদের ছেড়ে চলে যাই। এরপর দু’বছর সেখানে কাজ করি। এসময় বাবা আমাকে বাড়িতে ফিরে নিয়ে আসলে আশান্বিত হই আবার স্কুলে যেতে পারবো বলে। কারণ পড়তে আমার খুব ভাল লাগত। কিন্তু বাসায় এসে শুনি আমাকে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। বিয়ের তোড়জোড় চলছিল। এসময় কয়েকজন যুবক এসে বিয়ে বন্ধ করে দিল। তাদের এক কথা সরকার বাল্যবিয়ে বন্ধে আইন করেছে। আমার বিয়ে দেয়া চলবে না। ওরা ছিল স্থানীয় বেসরকারি সংগঠন আশার আলো পাঠশালার কর্মি। আমার বাবা-মা বিয়ে বন্ধ করে দিল। আশার আলো পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বিশ্বজিত বর্মণ বাবা-মাকে বুঝিয়ে ওধের পাঠশালাতে আমাকে ভর্তি করাল। এরপর আমার জীবনটা বদলাতে শুরু করে। আমি এখান থেকে প্রাথমিক, জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষায় সফলতার সাথে পাশ করে কলেজে ভর্তি হই। এখন পর্যন্ত আশার আলো পাঠশালা আমাকে সহযোগিতা করে আসছে। ফাতেমা আরও জানায়, কলেজে পড়ার পাশাপাশি আমি পাঠশালাতে মাইক্রোসফটের দেয়া ল্যাবে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এসময় এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্টসহ ব্যাসিক কম্পিউটারে দক্ষ হয়ে উঠি। এরমধ্যে ২০১৬ সালে এখানে আসেন মাইক্রোসফট এর নেপাল, ভূটান এবং বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সোনিয়া বশির কবির। তিনি আমার দক্ষতা দেখেন এবং জীবনের গল্প শোনেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে মাইক্রোসফট এর তত্ত্বাবধায়নে আমাকে নিয়ে একটি ডুকুমেন্টারী তৈরী করেন। যেটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রচার করেন তারা। এরপর আমাকে তাদের ব্রান্ড এ্যাম্বাসেডর মনোনিত করা হয়। এ্যম্বাসেডর নিযুক্তির বিষয়টি তারা চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বজিত স্যারের মাধ্যমে আমাকে জানান । এ সংবাদে আমি অত্যন্ত খুশি। আমার বাবা-মা এবং পরিবারের সবাই খুশি।

ফাতেমা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার পূর্ব রামখানা গ্রামের আয়নাল হক এবং ফরিদা বেগমের ২য় সন্তান। দারিদ্রতার মাঝে বেড়ে উঠা ফাতেমা নিজের অদম্য ইচ্ছা শক্তি এবং আশার আলো পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বিশ্বজিত বর্মনের সহযোগিতায় সে এখন স্বপ্নকে হাতের মুঠোয় পেয়েছে। বর্তমানে সে রায়গঞ্জ ডিগ্রী কলেজে ১ম বর্ষে অধ্যয়ণরত এবং আশার আলোর ওয়ার্ল্ড উইনার আর্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজের কম্পিউটার প্রশিক্ষক। এখানে সে নিয়মিত শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বাল্যবিয়ের সমস্যায় থাকা মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। তার প্রত্যাশা আইটি শিক্ষক হয়ে নিজেকে সুবিধাবি ত মেয়েদের সহোগিতা করা এবং বাল্যবিবাহ রোধে কাজ করে যাওয়া।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here