ভোলা মনপুরায় স্কুল রুমে সংখ্যালঘু শিক্ষিকাকে ধর্ষনের চেষ্টা

0
234

মিজানুর রহমান
ভোলা প্রতিনিধি:
ভোলার মনপুরায় উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এনাম হাওলাদারের বিরুদ্ধে হারিচ রোকেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যালঘু সহকারি শিক্ষিকাকে স্কুল রুমে জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও ছাত্রলীগ নেতা এনাম হাওলাদার ওই স্কুলের চিলিকোঠায় দখল করে গত দেড় বছর অবস্থান করছে বলে জানান স্কুলের শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার। বর্তমানে ছাত্রলীগ নেতার ভয়ে শিক্ষিকা স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
৩১ মার্চ শনিবার সকাল সাড়ে ৯ টায় উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের সরকারি হারিচ রোকেয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে এই ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটে।
এদিকে সোমবার অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার বিচারের দাবীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা প্রশাসন, উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা। এর আগে রোববার এই ঘটনায় অভিযোগকারি সংখ্যালুঘু শিক্ষিকা শিউলি রাণী দাস অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্ঠার অভিযোগে উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও ইউপি চেয়ারম্যান কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগকারী শিক্ষিকা জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার সময় তিনি স্কুলের লাইব্রেরীতে অবস্থান করছিলেন। এই সময় ছাত্রলীগ নেতা এনাম হাওলাদার বিস্কুট নেওয়ার কথা বলে লাইব্রেরীতে প্রবেশ করে কু-প্রস্তাব দেয়। পরে লাইব্রেরী থেকে চলে যেতে বললে ছাত্রলীগ নেতা দরজা বন্ধ করে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়। একপর্যায়ে ধর্ষনের চেষ্টা চালায়। পরে ডাক-চিৎকার শুরু করে আমি ছাত্রলীগ নেতাকে ঝাপটা ফেলে দিয়ে বের হয়ে আসলে দেখি ৩-৪ জন ছাত্র-ছাত্রী ভয়ে কাঁদছে। পরে নিচে এসে দেখি গেটে তালা মারা। পরে কান্নাকাটির শব্দ শুনে এলাকার একজন বৃদ্ধ এসে ছাত্রলীগ নেতাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। তখন ওই ছাত্রলীগ নেতা এই ঘটনায় কোথায় বলতে নিষেধ করেন। এমনকি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। একপর্যায়ে সহকর্মী শিক্ষক মতিন ও মিজান স্যার আসলে তাদের ঘটনাটি অবহিত করলে তাদের পরামর্শে প্রধান শিক্ষককে অবহিত করি। পরে ছাত্রলীগ নেতার পিতা ঘটনা শুনে সুরাহা করে দিবেন বলে আমাকে বলেন। তিনি আরোও অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ নেতা এনাম হাওলাদার গত দেড় বছর যাবত স্কুলের ছাদের চিলিকোঠা দখল করে রাত্রি যাপন করে। এমনকি তার ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা এনাম হাওলাদারের মুঠোফোন গত দুই দিন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ছাত্রলীগ নেতার পিতা ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর মেম্বার জানান, কথা কাটাকাটি হয়েছে অন্য কিছুই না। আমি বিষয়টি সুরাহা করে দিবো বলে শিক্ষিকাকে বলেছি। তবে তিনি স্কুল দখল করে অবস্থান নেওয়ার ব্যাপারটি এড়িয়ে যান।
এব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুদ্দিন সাগর জানান, ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে অভিযোগকারী শিক্ষিকার স্বামী এ্যাডভোকেট নীলোৎপল দাস জানান, ছাত্রলীগ নেতার হুমকীতে তার স্ত্রীর স্কুলে যাওয়া বন্ধ রয়েছে। তিনি এই ঘটনার বিচারের দাবীতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানা অফিসারসহ সকল দপ্তরে লিখিতোভাবে জানিয়েছেন।
উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মনোয়ারা বেগম জানান, এই ঘটনা শিক্ষক সমাজ মর্মাহত। আমরা এই ঘটনায় বিচারের দাবীতে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা অফিসার ইনচার্জ, শিক্ষা অফিসে স্মারকলিপি দেই।
এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মিজানুর রহমান জানান, অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতার কাছ থেকে স্কুল দখল মুক্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল আজিজ ভূঁঞা জানান, শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ ও শিক্ষক নেতাদের স্মারকলিপি পাওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে মনপুরা থানাকে জানানো হয়েছে।
এব্যাপারে মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহীন খান জানান, ঘটনাটি শিক্ষিকার কাছ থেকে মৌখিক শুনেছি। এছাড়াও ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিখিতভাবে জানিয়েছেন। শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here