ভোলায় লক্ষাধিক হেক্টর ফসল পানির নিচে, দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকদের

0
322

মিজানুর রজমান-ভোলা প্রতিনিধিঃ
ভোলায় দুই দিনের বৃষ্টিতে এক লাখ ২৩ হাজার ৬৪১ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে রয়েছে। সোম ও মঙ্গলবারের টানা বর্ষনে আক্রান্ত রবিশস্যের ফলন নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। বিশেষ করে, মাঠের খেসারী, মসুর, আলু, মুগ ডাল, মরিচ, ফেলন ও তরমুজের বেশী ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, সোমবারে মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি রবিশস্যের জন্য কিছুটা উপকারী হলেও দুইদিনের বৃষ্টি তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। ফলনের বিপর্যয়ের আশংকা করছেন চাষীরা।
তবে কৃষিবিভাগ বলছে, বৃষ্টির কারনে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে ক্ষতির পরিমান বাড়তে পারে। তবে আপাতত কৃষকদের ক্ষেত থেকে দ্রুত পানি সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভোলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কন্টোল রুমেন সূত্র জানিয়েছে, জেলায় এ বছর এক লাখ ২৩ হাজার ৬৪১ হেক্টর জমিতে রবিশস্যের আবাদ হয়েছে।
যার মধ্যে ১৭ হাজার ৮৫৬ হেক্টর খেসারি, ১৭৬৪ হেক্টর গম, ৫৮ হেক্টর কাউন, ২৫৫৫ হেক্টর ভুট্টা, ৮২১ হেক্টর আখ, ৮১১ হেক্টর মসুর, ৪ হাজার ৫৭১ হেক্টর জমিতে আলু, ৫ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি আলু, ৭ হেক্টর জমিতে মটর, ২ হেক্টর জমিতে সোলা, ২৪ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে মুগ, ৭ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে ফেলন, ৭ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে সরিষা, ৭ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে সয়াবিন, ১৭০ হেক্টর জমিতে তিল, ৯৫ হেক্টর জমিতে তিষি, ১৬ হেক্টর জমিতে সুর্যমুখী, ১৩ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম, ১৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে মরিচ, ৫৫০ হেক্টর জমিতে পেয়াজ, ৬৮০ হেক্টর জমিতে রসুন, ৯ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে তরমুজ, ৩২৫ হেক্টর জমিতে ফুট, ৫২১ হেক্টর জমিতে খিরা ও ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে শসা আবাদ হয়েছ। এছাড়াও ৯৪৫ হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। যার বেশীরভাব রবিশস্য এখন আক্রান্ত হয়েছে।
এদিকে সোম ও মঙ্গলবার জেলায় মুসলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুইদিনে সর্বমোট ৩৯. ২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এরমধ্যে মঙ্গলবার বিকাল ৩ টা পর্যন্ত ১০. ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ভোলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের অবজারভার মোঃ মনির হোসেন জানান, এ বৃষ্টি আরো দুইদিন থাকতে পারে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় কখনো কখনো ভারী আবার কখনো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে কৃষকের ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে রয়েছে। কৃষকের বিস্তীর্ন ফসলের ক্ষেতে পানি জমে আক্রান্ত হয় বেশীর ভাগ রবিশস্য।
চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনোতোষ সিকদার বলেন, বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে, তবে এখনো তেমন ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারন করা হয়নি।
চরফ্যাশনে ৪৫০ হেক্টর আলু, ৯৪৫ হেক্টর সবজি, ২০ হেক্টর ফুট, ৩৫ হেক্টর খিরা, ১৮৫৫ হেক্টর তরমুজ, ৩২০ হেক্টর সরিষা, ১৫২০ হেক্টর জমির মরিচ ও ৩০২ হেক্টর জমির ফেলন ডাল পানিতে আক্রান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, রবি ফসলের ক্ষেতে দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় এসব ফসলের সেচের প্রয়োজনীয়তা ছিলো, সোমবার বৃষ্টিতে হওয়াতে এসব ফসলের সেচ কার্য হয়ে গেছে। কিন্তু মঙ্গলবার একইভাবে বৃষ্টি হওয়াতে দুশ্চিন্তা বেড়ে গেছে কৃষকদের। কারন, দুইদিনের বর্ষনে ফসলের ক্ষতি সম্ভাবনা বেশী। এতে কাঙ্খিত পরিমান ফসল ফলন নিয়ে অনিশ্চয়তা পড়েছে।
এ ব্যাপারে ভোলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিনয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, দুই দিনের বৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি, তবে কৃষকদের ক্ষেতের পানি দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগন কাজ করছে। তিনি আরো বলেন, এ বৃষ্টি টানা আরো দুই/তিন দিন থাকলে ফসলের ক্ষতি হতে পারে।

খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here