ভোটার তালিকা হালনাগাদে ইসি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক-চতুর্থাংশ পিছিয়ে

0
461
ভোটার তালিকা হালনাগাদে ইসি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এক-চতুর্থাংশ পিছিয়ে

খবর৭১ঃ ভোটার তালিকা হালনাগাদে নতুনদের অন্তর্ভুক্তিতে লক্ষ্যমাত্রার এক-চতুর্থাংশ পিছিয়ে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিদ্যমান ভোটার সংখ্যার ১০ শতাংশ হারে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল।

কিন্তু এ পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ অর্জন হয়েছে। এ হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি ইসির মাঠ প্রশাসন। এবারও পুরুষের চেয়ে নারী ভোটার সংখ্যা কম পাওয়া গেছে।

হালনাগাদ কার্যক্রমে ভোটার তালিকায় প্রায় ১০ লাখ মৃতের তথ্য পেয়েছে তথ্য সংগ্রহকারীরা। এছাড়া ১৬১ জন জীবিতকে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেয়ার তথ্য পেয়েছে ইসি। ওই ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এদিকে ভোটার তালিকা প্রকাশের সময়সীমায় পরিবর্তন আনতে ভোটার তালিকা বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব করেছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ (এনআইডিডব্লিউ)। প্রস্তাব অনুযায়ী, খসড়া ভোটার তালিকা ২ জানুয়ারির পরিবর্তে ১৫ জানুয়ারি এবং চূড়ান্ত তালিকা ৩১ জানুয়ারি পরিবর্তে ১ মার্চ প্রকাশের কথা বলা হয়েছে।

ইসি সচিবালয় ও এনআইডিডব্লিউ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে তালিকায় ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটার রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্যার কারণে কয়েকটি জেলায় হালনাগাদ কার্যক্রম চালাতে সমস্যা হয়। কিছু কিছু এলাকায় প্রচারও কম হয়েছে।

তথ্য সংগ্রহকারীরা অনেক বাসায় গিয়ে নাগরিকদের না পাওয়ায় তাদের তথ্য সংগ্রহ করতে পারেননি। এছাড়া আগামী ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের কথা রয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত অনেক নাগরিক নিজেই ভোটার হতে আগ্রহী হবেন। সব মিলে শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি পৌঁছানো যাবে। তবে অভিযোগ আছে, অনেক এলাকায় তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি যাননি। এটিও তথ্য সংগ্রহ কম হওয়ার একটি কারণ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বলেন, হালনাগাদ নিয়ে মাইকিং, বিজ্ঞাপনসহ নানাভাবে প্রচার করেছি। মোবাইল এসএমএস দিয়েও সচেতন করেছি। তারপরও নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহের হার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম। তবে খসড়া তালিকা প্রকাশ পর্যন্ত সময় আছে। তখন পর্যন্ত অনেকে নাম নিবন্ধন করতে পারবেন। ভোটার তালিকা বিধিমালা সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়টি এখনও কমিশন সভায় তোলা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে নির্বাচন কমিশনের ৫১৯টি উপজেলা ও থানা নির্বাচন কার্যালয়ের মাধ্যমে ধাপে ধাপে নতুন ভোটারদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এবার ২০০১-২০০৪ সাল পর্যন্ত যাদের জন্ম তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ হিসাবে এবার ১৫ বছর বয়সীদেরও তথ্য সংগ্রহ করছে ইসি। এতে বিদ্যমান ভোটার সংখ্যা ১০ শতাংশ হারে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য নিয়েছে। তবে আগাম তথ্য সংগ্রহ করা হলেও ১৮ বছর পূর্ণের আগে কেউ ভোটার হতে পারবেন না।

ইসির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, যেসব উপজেলায় তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়েছে এবং যেসব উপজেলায় এ কার্যক্রম চলছে এমন ৪৫৪টি উপজেলায় ১০ শতাংশ হিসাবে সর্বমোট ৮৬ লাখ ২৯ হাজার ৪৪৭ জনের তথ্য সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। সোমবার পর্যন্ত ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৭ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ হিসাবে ১০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার ৭ দশমিক ৪৯ শতাংশের তথ্য পেয়েছে ইসি। ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪০ জন নাগরিককে তাদের বাড়িতে পায়নি ইসির তথ্য সংগ্রহকারীরা। তাদের নাম অনুপস্থিত ভোটার হিসেবে রেজিস্টারে নিবন্ধন করেছে ইসি। বাকিদের বিষয়ে ইসির কাছে কোনো তথ্য নেই। আরও দেখা গেছে, তথ্য সংগ্রহ করা ৬৪ লাখ ৬৬ হাজার ৭৩৭ জনের মধ্যে ৪৮ লাখ ৬১ হাজার ৫২৫ জনের ডাটা ইসির সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এছাড়া এবারও ভোটার তালিকায় নারীদের উপস্থিতি কম রয়েছে।

এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ৪৮ লাখ ৬১ হাজার ৫২৫ জনের মধ্যে পুরুষ ২৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫৪৩ জন। আর নারী ২১ লাখ ৭৩ হাজার ৯৮২ জন। এ হিসেবে পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ১৩ হাজার ৫৬১ জন কম পাওয়া গেছে। ভোটার তালিকায় বিদ্যমান ভোটারের মধ্যে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭০ জন মৃত পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৩৩ জনের নাম বাদ দিতে ডাটা এন্ট্রি দেয়া হয়েছে। বাকিদের নামও এন্ট্রি দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ১ লাখ ১৪,৫২১ জন তাদের ভোটার এলাকা স্থানান্তরের জন্য আবেদন করেছেন।

ভোটার বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব : এদিকে ভোটার তালিকা প্রকাশের সময়সীমা পরিবর্তন করতে ভোটার তালিকা বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। সম্প্রতি জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ প্রস্তাব করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই সভায় খসড়া তালিকা প্রকাশের সময় ২ জানুয়ারির পরিবর্তে ১৫ জানুয়ারি ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দিন ১ মার্চ প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া খসড়া তালিকার ওপর দাবি আপত্তি জানানোর সময় ১৬ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারি এবং এসব দাবি-আপত্তি ১-৭ ফেব্রুয়ারি নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে। বাকি সময় ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুতের জন্য রাখা হয়েছে। ভোটার বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাবের যৌক্তিকতা হিসেবে প্রতি বছর ১ মার্চ ভোটার দিবসে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করা এবং শীত মৌসুম থাকায় ডিসেম্বরে নির্বাচন থাকায় জানুয়ারিতে খসড়া প্রকাশে সমস্যার কথা বলা হয়েছে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন কর্মকর্তা বলেন, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের এ প্রস্তাব ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এর ১১ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিধিমালা সংশোধন করতে হলে আইনেরও সংশোধন প্রয়োজন হবে। ১৬১ জন জীবিতকে মৃত দেখিয়ে তালিকা থেকে নাম বাদ : ইসি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন এলাকার ১৬১ জন জীবিত নাগরিককে মৃত দেখিয়ে ভোটার তালিকা থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি কমিশন পর্যন্ত গড়িয়েছে। কমিশন ওইসব ঘটনায় তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করতে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here