ভোটারদের স্মৃতিচারণায় জীবন্ত হয়ে উঠেছিলেন ‘ছক্কা ছয়ফুর

0
288

খবর৭১ঃ
এমনিতে তাকে নিয়ে আলোচনা নেই। বছরের পর বছর নিজের কাছের মানুষজন ছাড়া আর কেউ তাকে খুব একটা মনে রাখেন না, আলোচনাতো বহুদূর। তবে উপজেলা নির্বাচন এলেই কিন্তু বয়স্কদের স্মৃতিতে জীবন্ত হয়ে উঠেন তিনি। আহ! ব্যাটা আছিল ছক্কা ছয়ফুর! বলতে বলতে জমিয়ে তুলেন আড্ডা-আসর।

কারণ, নিঃস্ব রিক্ত এই মানুষটিকেই সমব্যাথি হয়ে সিলেট সদর উপজেলার মানুষ একবার উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছিলেন। সিলেটের অনেক বাঘা বাঘা প্রার্থীও পাত্তা পাননি তার কাছে। জামানত হারিয়েছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী একজন ছাড়া অন্য সবাই।

পেশায় সাধারণ একজন রন্ধন শিল্পী হলেও ছিলেন প্রতবাদী একজন। সরকারের যেকোন সিদ্ধান্তকে তার অন্যায্য মনে হলেই হয়েছে। ঐতিহাসিক কোর্টপয়েন্টে মাইক টানিয়ে প্রতিবাদী আর জ্বালাময়ী বক্তব্য শুরু করে দিতেন।

তার বক্তব্য শুনতে ভীড় জমে যেতো। মাইকের খরচটাও দিয়ে দিতেন জমায়েত হওয়া শ্রোতারা। হাততালি দিয়ে জানাতেন অভিনন্দন।

রান্না-বান্নার মাধ্যমে আয় রোজগার ভালো না হলে ঠেলাগাড়ি নিয়ে নেমে পড়তেন রাস্তায়।

নির্বাচনমুখী মানুষ ছিলেন ছয়ফুর রহমান। ইউপি নির্বাচন থেকে শুরু করে একেবারে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হতেন।

আশির দশকের শুরুতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলেন। সেই নির্বাচনে সারাদেশে ৬০ জনের বেশী প্রার্থী ছিলেন। তিনি হয়েছিলেন অষ্টম। মজা করে ছয়ফুর বলতেন তিনি দেশে ৮ম রাষ্ট্রপতি। যুক্তিটাও দারুন অভিনব। সেদিন তারচেয়ে এগিয়ে থাকা অপর ৭ প্রার্থীর মৃত্যু হলে তিনিই হতেন দেশের রাষ্ট্রপতি!

১৯৯০ সালের উপজেলা নির্বাচনে যথারীতি প্রার্থী হলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। বগলে হ্যান্ডমাইক নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়লেন। একা একাই রাস্তার মোড়ে মোড় পাড়া-মহল্লা ঘুরে জ্বালাময়ী সব বক্তব্য রাখতে শুরু করলেন।

প্রচারণা চলাকালীন একদিন টিলাগড়ে তার উপর হামলার ঘটনা ঘটলো। প্রতিদ্বন্দ্বী এক প্রার্থীর সমর্থকরা তার উপর হামলা চালালে বিদ্যুতের মতো খবরটি সারা উপজেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়লো। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠেলেন। তারপক্ষে তরুণ যুবক শিক্ষার্থীরাসহ সবাই নির্বাচনী ময়দান চষে বেড়াতে লাগলেন।

তাকে ৫শ’ টাকা দিয়ে নিজেদের জনসভায় নিয়ে যেতেন পরিবারটিকে যাতে উপোষ করতে না হয়। ভোট গননার পর দেখা গেলো বাজিমাৎ করে ফেলেছেন ছয়ফুর। ডাব প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৫২ হাজার ভোট।

তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ইফতেখার হোসেন শামীম। তিনি পেয়েছিলেন ৩০ হাজার ভোট।

অবশ্য বেশীদিন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা হয়নি তার। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের অনাস্থার মুখে পড়তে হয়েছিল।

এরপর ৯১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার গঠন করলে তারা উপজেলা পদ্ধতিটিই বাতিল করে দেয়। নিজের বাড়িতে ভোটারদের বসার জায়গা নেই, তাই প্রথমবার রিলিফের টাকায় সেটুকু করতে তিনি প্রকাশ্যে রেজিস্ট্রি মাঠে জনগনের মতামত চেয়েছিলেন তিনি। তা আদায়ও করে নিয়েছিলেন।

এরপর লোকজন তাকে ছক্কা ছয়ফুর ডাকতে শুরু করে। তিনি দুটি বইও লিখেছিলেন। ‘বাবুর্চি প্রেসিডেন্ট হতে চায়’ ও ‘পড় বুঝ বল’ নামক তার বই দুটি নিয়েও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে।

বাবুর্চিগিরি ছাড়াও জীবনধারণের জন্য তিনি একসময় নৌকার মাঝি হিসাবেও কাজ করেছেন।

সোমবার ৫ম উপজেলা নির্বাচনের দিন সিলেট সদর উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্রে বা নগরীর হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোয় বয়স্কদের আলোচনায় ছিলেন এ সুবক্তা। অনেকেই মেতেছিলেন তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণায়। ছক্কা ছয়ফুর বহু বছর আগে রোগে ভোগে মৃত্যুবরণ করলেও উপজেলা নির্বাচন এলেই তিনি জীবন্ত হয়ে উঠেন সাধারণ মানুষের স্মৃতিচারণায়।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here