ভূয়া বিদ্যুৎ বিলে দিনমজুরের জেল; পল্লী বিদ্যুতের ১১ জন বরখাস্ত

0
289

খবর৭১ঃ কুপি জ্বালিয়ে রাতের আঁধার তাড়াতেন দরিদ্র দিনমজুর আব্দুল মতিন (৪৫)। তার বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ ছিলো না। তবুও ১৭ মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকির মামলায় জেলে ঢুকানো হয়েছিল তাকে। এই ঘটনায় সম্পৃক্ততার দায়ে ১১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। এছাড়াও ভুক্তভোগী মতিনের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছে সংস্থাটি।

শনিবার (২০ এপ্রিল) এই ব্যাপারে আরইবি এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মুঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা অলরেডি ১১ জনকে সাময়িক বরাখাস্ত করেছি। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। শুধু নিচের দিকে কর্মচারী নয়, ডিজিএম এর বিষয়েও তদন্ত করা হচ্ছে। এই ঘটনার সঙ্গে ডিজিএম সরাসরি জড়িত না হলেও তার ব্যাপারে সমিতির কাছে প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, যারা মতিনের জায়গায় অন্য কাউকে সংযোগ দিলো, এরপর ওই লোকের নামে বিল না দিয়ে মতিনের নামে বিল পাঠাচ্ছিলো; সেই সংশ্লিষ্ট লাইনম্যান, লাইন নির্মাণ পরিদর্শক, ওয়ারিং পরিদর্শক, ম্যাসেঞ্জার, বিলিং সহকারী, জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ারসহ যারা সরাসরি জড়িত তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। এখন অধিকতর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আমি আব্দুল মতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করেছি। এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্তক করতে আগামীকাল (রবিবার) বিকাল ৪টায় আরইবি এর ৮০টি সমিতির সঙ্গে একযোগে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে।’

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘’

কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেবিদ্বার জোনাল অফিসের ডিজিএম মৃণাল কান্তিকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ১১ জনকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করায় তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। এদিকে কোম্পানিগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. হাবিবুর রহমানের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এর পরিচালক (প্রশাসন) আনোয়ার হোসেন জানান, এই ঘটনায় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল মতিনের বাড়িতে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। মতিনকে আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে আরইবি। মতিনের বাড়িতেও তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, ১৭ এপ্রিল বাংলা ট্রিবিউনে ‘বাড়িতে নেই সংযোগ, তবু বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের মামলায় কারাগারে দিনমজুর’ শিরোনামে এই সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরের দিন ১৮ এপ্রিল কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট্রে আদালত থেকে জামিন পান তিনি।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরইবি জানায়, ১৭ এপ্রিল সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদটি পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের নজরে আসে। এই ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। জানা যায়, ২০১৫ সালে মো. আব্দুল মতিনের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে তার নামে বরাদ্দ করা মিটারটি প্রতিবেশি মো. শফিকুল ইসলামের ঘরে স্থাপন করা হয়। তারপর থেকে শফিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বিদ্যুৎ বিল দেওয়া হচ্ছিলো মতিনের নামে। যা সমিতির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে উদাসীনতা ও চরম অবহেলা। বিদ্যুৎ বিল অপরিশোধিত থাকায় আবদুল মতিনের নামে মামলা করার কারণে এই অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক ঘটনার সৃষ্টি হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম দিকে মিটারের অনুমোদন পাওয়া মতিনের নামেই বিদ্যুৎ বিল জমা দিতেন মিটার ব্যবহারকারী শফিকুল। তবে গত ১৭ মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখেন তিনি। এতে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর চান্দিনা অফিসের এজিএম লক্ষ্মণ চন্দ্র পাল বাদী হয়ে মিটারের অনুমোদন পাওয়া মতিন মিয়ার নামে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গত মঙ্গলবার রাতে মুরাদনগর থানার এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আব্দুল মতিনকে গ্রেফতার করে এবং বুধবার দুপুরে তাকে কুমিল্লা আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে বৃহস্পতিবার তিনি জামিনে মুক্ত হন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here