খবর৭১ঃ পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার জন্য ভারত সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে, তা সমর্থন দিয়েছে ভারতবাসী। তবে এখন তারা কাশ্মীরের স্বাধীনতা দিতে নারাজ কেন এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বখ্যাত লেখক ও অ্যাকটিভিস্ট অরুন্ধতী রায়।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার আপফ্রন্ট অনুষ্ঠানে মুখোমুখি হয়েছিলেন ভারতীয় এই লেখক। অনুষ্ঠানে কাশ্মীর সংকট, ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যাসহ নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন আল-জাজিরার সাংবাদিক ও উপস্থাপক মেহেদী হাসান।
পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ায় ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সামরিক যুদ্ধের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অরুন্ধতী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘গণহত্যার পাটাতনে দাঁড়িয়ে ভারতবাসী যদি পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে নিজ দেশের হস্তক্ষেপকে সমর্থন করে এবং তখনকার পূর্ব বাংলার মানুষের বিচ্ছিন্ন হয়ে পৃথক রাষ্ট্র গড়ার পক্ষে দাঁড়ায়, তাহলে কাশ্মির প্রশ্নে তাদের অবস্থান ভিন্ন কেন।’
কাশ্মীরের স্বাধীনতা ও সংকট নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাশ্মির সেভাবেই পরিচালিত হওয়া উচিত, যেভাবে সেখানকার মানুষ চায়।’
এরপর আবার তাকে প্রশ্ন করা হয়, একটি গণভোটের মধ্য দিয়ে কাশ্মিরবাসী যদি ভারত-পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রের থেকে পৃথক হয়ে সার্বভৌমত্ব ও আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইত, ভারতীয় নাগরিক হিসেবে অরুন্ধতী তা সমর্থন করতেন কিনা। জবাবে অরুন্ধতী কাশ্মিরের সঙ্গে প্রতিতুলনার স্বার্থে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালিন ভারতীয় মিত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে আনেন।
কাশ্মিরবাসীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে নিজের অবস্থান জানাতে গিয়ে অরুন্ধতী জানান, ‘অঞ্চলগত অখণ্ডতা রক্ষার প্রশ্নকে ‘বৈজ্ঞানিক সত্য’র মতো করে দেখেন না তিনি। ১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘ভারতীয়রা যদি বিশ্বাস করে, বাংলাদেশের প্রশ্নে ভারতের হস্তক্ষেপ [অর্থাৎ] তখনকার পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নকরণ প্রক্রিয়ায় [যুক্ত] হওয়া সমর্থনযোগ্য… যেখানে ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হচ্ছে, সেখানে [ওই হস্তক্ষেপ] একেবারেই যথাযথ, তাহলে কাশ্মির প্রশ্নে তাদের অবস্থানের ন্যয্যতা কী।’
১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পৃথিবীর বুকে স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে। কমবেশি সব ভারতীয়ই পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশের পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার বাস্তবতাকে সমর্থন করে। তবে সেই ভারতীয়দের বেশিরভাগই কাশ্মিরের বিচ্ছিন্নতার বিপক্ষে।