ভারত কেন নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ?

0
283

খবর৭১: যৌন সহিংসতা, সাংস্কৃতিক ও জাতভেদের কারণে হয়রানি এবং মানবপাচারে ভারতের রেকর্ড এখন সবচেয়ে খারাপ। অর্থাৎ, ভারত এখন পৃথিবীতে নারীদের জন্য সবচেয়ে কম নিরাপদ দেশ। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের বৈশ্বিক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। নারীদের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি যাচাইয়ের জন্য ৫৫৮ জন নারী বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়েছে এই ফাউন্ডেশন।

পরিস্থিতির উন্নয়নে ব্যর্থ হওয়ায় ভারত নারীদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ হয়ে উঠেছে। ২০১১ সালে সর্বশেষ জরিপে ভারতের অবস্থান ছিল চতুর্থ। ভারতের অবস্থান আফগানিস্তান (২য়), সিরিয়া (৩য়) এবং সোমালিয়ারও নিচে। মানব উন্নয়ন সূচকে এবং সার্বিক নারী নিরাপত্তা ইস্যুতে তাদের অবস্থান যথেষ্ট নিচে নেমে গেছে।

যে ছয়টি ক্যাটেগরিতে জরিপ চালানো হয়েছে, তার সবগুলোতেই প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে। চার নম্বরের নিচে ভারত কখনও নামতে পারেনি।

থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মনিক ভিলা ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়াস্পেন্ডকে জানান, ‘ভারতে মাত্র ১০ শতাংশ নারীর জমির মালিকানা রয়েছে, অথচ পৃথিবীতে এই হার ২০ শতাংশ। নারী হত্যার হার ভারতে সবচেয়ে বেশি। ২৭ শতাংশ মেয়ের এখানে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হয়ে যায়, যে হার পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। এসব বিষয় বিবেচনা করলে ভারতের আসল অবস্থা বোঝা যায়।’

ভিলা আরও বলেন, ‘ভারত এখন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে লড়ছে। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে নারীকে এখনও নিম্নতর হিসেবে দেখা হচ্ছে।’

ভারতে নারী ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার ঘটনা ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় আট বছর বয়সী আসিফা এবং ঝাড়খান্ডে মানব পাচারবিরোধী কর্মী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে।

সরকার ধর্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তি কঠোর করেছে এবং শিশু ধর্ষণকারীদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করেছে। কিন্তু এতে করে ধর্ষণের ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে ইন্ডিয়াস্পেন্ডের এক রিপোর্টে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।

অবনতিশীল পরিস্থিতি

২৬ জুন থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার দিক থেকে ভারত এমনিতেই সবার উপরে রয়েছে। কিন্তু এ মাত্রা আরও বাড়ছে। পাঁচ বছর আগে দিল্লিতে বাসে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার পর সারা ভারত উত্তাল হয়ে ওঠে এবং সরকার সে সময় এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপরও এই অপরাধ বেড়ে চলেছে।’

২০১১ সালে যখন জরিপ চালানো হয়, তখন ভারতের অবস্থান ছিল চার নাম্বারে। তার নিচে ছিল আফগানিস্তান, কঙ্গো ও পাকিস্তান। ভারতের র‍্যাঙ্কিংয়ের এই অবনতির কারণ ছিল মূলত নারীদের ভ্রুণ হত্যা, শিশু হত্যা ও মানবপাচারের কারণে।

সাত বছর পরে ২০১৮ সালে এসে জরিপে বলা হচ্ছে, তিনটি প্রধান ইস্যুতে ভারত এখন পৃথিবীতে নারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশ। ইস্যুগুলো হলো:

যৌন সহিংসতা: এরমধ্যে রয়েছে বাসস্থানে ধর্ষণ, ধর্ষণ মামলায় ন্যায়বিচারের অভাব, যৌন হয়রানি এবং যৌনতাকে দুর্নীতির সাথে গুলিয়ে ফেলার মতো বিষয়।

সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কৃষ্টি: এরমধ্যে রয়েছে নারীদের যৌনাঙ্গ কর্তন, বাল্যবিবাহ ও জোরপূর্বক বিয়ে, শারীরিক নির্যাতন এবং মেয়ে শিশু ও মেয়ে ভ্রুণ হত্যা।

মানব পাচার: গৃহকর্মী, বলপূর্বক শ্রমে ব্যবহার এব জোর করে বিয়ে দেয়ার মতো বিষয় রয়েছে এতে।

২০১৬ সালে প্রতি ঘণ্টায় নারীদের বিরুদ্ধে ৩৯টি পর্যন্ত অপরাধের ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। ২০০৭ সালে এই সংখ্যা ছিল ২১টি। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর ইন্ডিয়াস্পেন্ডের রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সরকার নারীদের বিরুদ্ধে আইনি বৈষম্য দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে। বৈবাহিক ধর্ষণ এবং খাপ পঞ্চায়েত রীতি, যেখানে ইচ্ছেমতো বিয়ের জন্য মেয়ে বেছে নেয়া হয়- এ বিষয়গুলোকে অপরাধ সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।

নারীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার, এ প্রশ্নের জবাবে ভিলা বলেন, ‘তিনটি বিষয় রয়েছে: লিঙ্গ সমতার ব্যাপারে ছেলেদের শিক্ষা দেয়া, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রে নারীদের ক্ষমতা বাড়ানো এবং বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ করা।’
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here