ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসছে কোরবানির পশু

0
318

খবর ৭১ঃকোরবানির ঈদ সামনে রেখে ভারত ও মিয়ানমার দিয়ে আসতে শুরু করেছে গবাদি পশু। তবে বৈধতা না থাকায় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ঢুকছে এসব পশু।

বিগত বছরগুলোর সঙ্গে পার্থক্য হল- ওই সময়ে অনুমোদন না থাকলেও পশু আসার ক্ষেত্রে সরকারের সংস্থাগুলো নীরবতা পালন করত। আর এ বছর একটু কড়াকড়ি রয়েছে।

ফলে সীমান্তের দুই দিকেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আসছে পশু। এতে খরচ একটু বেশি পড়ছে। আর কোরবানির দিন যত ঘনিয়ে আসবে, এই প্রবণতা ততই বাড়বে। অন্যদিকে বিদেশি পশু আসায় আতঙ্কে রয়েছে দেশীয় খামারিরা। তাদের আশঙ্কা ভারতীয় গরু এলেই দাম একেবারে কমে যাবে। এতে খামারিদের লোকসানের আশঙ্কা রয়েছে।

ভারত ও মিয়ানমারের বিভিন্ন সীমান্ত থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে কোরবানি উপলক্ষে দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে ১ কোটি ১৬ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু দেশে এ বছর কোরবানির চাহিদা ১ কোটি ৪ লাখ পশু। ফলে দেশীয় পশু দিয়ে চাহিদা পূরণ হবে।

এরপর ভারত ও মিয়ানমার থেকে নির্ধারিত সময়ে আমদানি হলে তা মূল্যে প্রভাব ফেলবে। অর্থাৎ এ বছর পশুর দাম কম থাকবে। প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন কুমিল্লা ব্যুরোর আবুল খায়ের, চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মনোয়ার হোসেন জুয়েল ও টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি নুরুল করিম রাসেল ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় গরু আমদানিতে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত দেড় মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনটি করিডোর দিয়ে ছাড় করা হয়েছে ৪৭ হাজার গবাদিপশু। বিগত বছরগুলোতে এ সময় ব্যাপক গরু আমদানি হলেও এ বছর তা তুলনামূলক কম।

জেলা টাস্কফোর্স এখন পর্যন্ত তিনটি বিট-খাটালের সুপারিশ করায় সদর উপজেলা জহুরপুর ট্যাক, শিবগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর, ভোলাহাটে গিলাবাড়ী খাটাল অনুমোদন দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে বিজিবি’র তথ্য অনুযায়ী সদর উপজেলার জহুরপুরেও খাটাল অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

এর বাইরেও উচ্চ আদালতে রিটের মাধ্যমে বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমেও আরও কয়েকটি বিট খাটাল দিয়ে গরু আসা শুরু হয়েছে। এদিকে এসব বিট খাটাল অনুমোদন দেয়া হলেও আর্থিক লেনদেনের বৈধতা নেই।

ভারত থেকে আসা গরুগুলোর মূল্য পরিশোধ করা হচ্ছে মূলত হুন্ডির মাধ্যমে। ফলে পাচার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। এছাড়া রাজশাহী ও গোদাগাড়ির কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের চ্যানেল ব্যবহার করে অর্থ প্রেরণ করা হচ্ছে ভারতে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গরু আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বৈধ কোনো চুক্তি নেই। ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার ভিত্তিতে অলিখিত সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে চলছে গবাদিপশুর কারবার।

এতে প্যাডের নামে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ গরু জোড়াপ্রতি হাতিয়ে নিচ্ছে ৪০ থেকে ৫৬ হাজার ভারতীয় রুপি। এসব ক্ষেত্রে নগদ অর্থ ব্যবহার হয় না। প্রতি চালানে গরু আনা-নেয়াকারী রাখালদের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয় স্লিপ। বিভিন্ন মানের ছেঁড়া টাকা নির্ধারণ করে গবাদিপশুর সংখ্যা ও মূল্য।

আর মোটা অঙ্কের টাকা বাঁচাতে চোরাই অথবা নদীপথ ব্যবহার করে আনা হচ্ছে গরু। এছাড়া বিট খাটালগুলোতে করিডোর ফি বাবদ জোড়াপ্রতি ১ হাজার ১০০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে ৬ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। ফলে দেশে এসব গরু বিক্রি করা হচ্ছে অত্যন্ত চড়া মূল্যে।
কুমিল্লা ব্যুরো : এ বছরও ভারত থেকে চোরাই পথে কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে আসছে বিপুল সংখ্যক গরু। কৃত্রিম ও ক্ষতিকারক উপায়ে মোটাতাজা করা এসব গরু বাজারে এলে জেলার খামারি ও কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে।

অবৈধভাবে ভারতীয় গরু যেন জেলার কোরবানির হাটগুলোতে আসতে না পারে সে লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বিজিবিসহ জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। কুমিল্লায় এবার চার শতাধিক হাটে ওঠার অপেক্ষায় জেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ গরু।

ঈদের বিক্রির জন্য এসব খামারি এবং সাধারণ গৃহস্থরা গরু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। ক্ষতিকারক ওষুধে নয়, বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করছে কুমিল্লার খামারি ও কৃষকরা। কোরবানিকে কেন্দ্র করে কুমিল্লার দুই লাখ ৬০ হাজারের বেশি গরু এবং উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীদের আনা এক লাখসহ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক গরু হাটে তুলবেন বিক্রেতারা। জেলার সতের উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী চার শতাধিক হাটে এসব গরু তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামারিসহ গৃহস্থরা।
টেকনাফ (কক্সবাজার) : মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে এ আমদানি ধীরগতিতে হচ্ছে। আবহাওয়া প্রতিকূল ও বাজারে গরুর মূল্য না থাকায় এ পরিবেশ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা। কক্সবাজার জেলার টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ গবাদিপশু আমদানির করিডোর দিয়ে এসব গরু-মহিষ ঢুকছে। জুলাই মাসে ৬ হাজারের বেশি গবাদিপশু এসেছে। তবে জুলাই মাসের তুলনায় জুন মাসে দ্বিগুণের বেশি গবাদিপশু আমদানি হয়েছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানি সামনে রেখে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের করিডোর হয়ে মিয়ানমার থেকে গবাদিপশু আমদানি অব্যাহত রয়েছে। তবে তা আশানুরূপ নয়। গত জুন মাসে ১২ হাজার ৭৪০ গরু, ২ হাজার ৩৭২টি মহিষ আমদানিতে পৌনে ১ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়।

জুলাইয়ে তা কমে ৩০ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। এক মাসের ব্যবধানে পশুর মূল্য কমে যাওয়ায় আমদানি তুলনামূলকভাবে কমে যায়। ভারত থেকে বেশি পরিমাণে পশু দেশীয় বাজারে আসার কারণে পশুর দাম কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এতে ব্যবসায়ীরা লোকসানের আশঙ্কায় আপাতত মিয়ানমার থেকে পশু আমদানিও কমিয়ে দিয়েছেন। গত ২০ জুলাই একদিনে ৯০০ গবাদিপশু আমদানি হলেও পরদিন এসেছে ২৮টি পশু। তার পরের দিন কোনো গবাদিপশু আসেনি। এভাবে পশু আমদানি হ্রাস পাচ্ছে।
শাহপরীর দ্বীপ করিডোর ঘুরে দেখা গেছে, করিডোর সংলগ্ন নানা জায়গায় হাজারও গরু-মহিষ মজুদ রয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ঘোরাঘুরি করছেন। ঝিনাইদহের মহেষপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী খোকন জানান, গরুর বাজার কম জেনেই শাহপরীর দ্বীপে আসা হয়। লাইন খরচ ৩ হাজারসহ নিজ জেলাতে যেতে প্রতি গরুতে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়।
খবর ৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here