ভারতের পর বাংলাদেশে আঘাত হানবে ‘তিতলি’

0
256

খবর৭১ঃভারতে আঘাত হেনে বাংলাদেশের দিকে আসবে ঘূর্ণিঝড় তিতলী। তবে তার প্রভাব হবে দুর্বল বলে জানিয়েছেন আবাহাওয়াবিদরা। তারা বলেছেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এরপর এটি ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে ঘূর্ণিঝড়, গভীর নিম্নচাপ ও পরে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে স্থলভাগ দিয়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের দিকে আসার সম্ভবনা রয়েছে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর প্রচণ্ড উত্তাল থাকায় সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত জারি রয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার কারণে নিরাপত্তার জন্য অভ্যন্তরীণ রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ‘তিতলি’র প্রভাবে ঢাকাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিও হচ্ছে।

বুধবার আবহাওয়ার সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ আরও সামান্য উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় হ্যারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৮০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৫০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭২০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গোপালপুরের কাছ দিয়ে ভারতের উড়িষ্যা-অন্ধ্র উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০ কি.মি. যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১৪০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ।

আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি খুব শক্তিশালী ও প্রশস্ত। এটি বৃহস্পতিবার সকালে ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ ও উড়িষ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। স্থলে উঠে আস্তে আস্তে এটার তীব্রতা কমে যাবে। এরপর এটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে ওই প্রভাবটা আমরা পাব। আমরা অবশ্যই এখনই প্রভাব পাচ্ছি। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দমকা বাতাসও হচ্ছে।’

ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’র বিশাল ব্যাপ্তি থাকায় এটির মূল অংশ ভারতের উপকূলে আঘাত হানার সময় বাংলাদেশেও এর প্রভাবে থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আরেকজন আবহাওয়াবিদ।

উড়িষ্যা ও অন্ধ্র প্রদেশ উপকূলের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের ধেয়ে আসার পরিপ্রেক্ষিতে উড়িষ্যাতে রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ: ঘূর্ণিঝড় তিতলি’র প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত ও বৈরি আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে সকল প্রকার পণ্যখালাস বন্ধ রয়েছে। তবে বন্দরের জেটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল এছাড়া বৃষ্টিও থামছে না। এ অবস্থায় গভীর সাগরে থাকা মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস করা নিরাপদ নয়। তাই দুপুর থেকে বহির্নোঙরে সব ধরনের খোলাপণ্য খালাস বন্ধ আছে। তবে বন্দর জেটিতে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’

পাহাড়ে মাইকিং : ঘূর্ণিঝড় তিতলি’র প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারি বর্ষণের কারণে ভূমিধসের আশঙ্কায় নগরের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল মঙ্গলবার থেকে নগরে মাইকিং করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। বুধবার দুপুরেও নগরের মতিঝর্ণা, বাটালি হিল ও দক্ষিণ খুলশী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাহলিলুর রহমান বলেন, বৈরি আবহাওয়ার কারণে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত লোকজনকে সরে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরুরি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যে কেউ সেখানে আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here