ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ: দুর্নীতিতে বরখাস্ত হলে নতুন চাকরি মিলবে না

0
432
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ: দুর্নীতিতে বরখাস্ত হলে নতুন চাকরি মিলবে না

খবর৭১ঃ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতি, জালিয়াতি বা নৈতিক স্খলনের দায়ে বরখাস্ত কর্মকর্তারা অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নতুন করে নিয়োগ পাবেন না। তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য হবেন।

কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে পারবে না। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের দায়ে বরখাস্ত কর্মকর্তাদের ডাটাবেজ তৈরি করছে। সেখানে তাদের সম্পর্কে সব তথ্য থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, এখন থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার আগে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে ডাটাবেজের তথ্য যাচাই করে দেখতে হবে।

নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতি বা নৈতিক স্খলনের দায়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন কিনা- তা দেখতে হবে। বরখাস্ত হয়ে থাকলে তিনি নিয়োগ পাওয়ার অযোগ্য হবেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বড় ধরনের দুর্নীতির নানা ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণও মিলেছে। এক ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত হয়ে অন্য ব্যাংকে চাকরি নেয়ার নজিরও আছে। দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তাদের যোগদান ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নীতিমালা করেছে।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে সততা ও নৈতিকতার মান বাড়াতে এ নীতিমালা সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এর ফলে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়ার প্রবণতা কমবে। ব্যাংক কর্মকর্তারা সৎ ও সাহসী হলে আর্থিক খাতে জাল-জালিয়াতির প্রবণতা অনেকাংশে কমে যাবে। তিনি বলেন, আর্থিক খাতে নতুন যারা নিয়োগ পাবেন তাদের ক্ষেত্রে নৈতিকতার বিষয়টিও দেখা হবে।

এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টিও দেখছে। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, উদ্যোগটি ভালো। এটি বাস্তবায়ন হলে কিছুটা হলেও ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে। তবে এটি মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে। সব ধরনের রাজনৈতিক চাপকে উপেক্ষা করে এর প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, শুধু ডাটাবেজই নয়, দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুতদের শাস্তির বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়টিও কেন্দ্রীয় ক্যাংকের তদারকি করা উচিত।

সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার সামগ্রিক উদ্যোগের সহায়ক কৌশল হিসেবে এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আর্থিক খাতে কৌশলপত্র বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ শুরু করেছে। এতদিন কাজের গতি ধীর হলেও সম্প্রতি এর গতি বেড়েছে। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজ উদ্যোগে কর্পোরেট মেমোরি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিএমএমএস) নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেছে।

এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে দুর্নীতি বা নৈতিক স্খলনের দায়ে চাকরিচ্যুতদের তালিকাসহ অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, জাল-জালিয়াতি ও নৈতিক স্খলনের ধরন ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়াও বরখাস্ত কর্মকর্তার নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, স্থায়ী ঠিকানা, চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের কারণ, তারিখ- এসব তথ্যও থাকবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব তথ্য বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিএমএমএস সফটওয়্যারে সরবরাহ করতে হবে।

একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত সব ধরনের কাগজপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকেও পাঠাতে হবে। এর ভিত্তিতেই দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের দায়ে চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের একটি ডাটাবেজ তৈরি করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ওইসব অভিযোগে কোনো কর্মকর্তাকে চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করার তিন দিনের মধ্যে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে।

একই সঙ্গে আদালত বা কর্তৃপক্ষ কোনো কর্মকর্তার শাস্তি শিথিল বা মওকুফ করলে তাও বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হবে। এর ভিত্তিতে ডাটাবেজ হালনাগাদ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এদিকে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন শাখা ও বিভাগ থেকে এ ধরনের তথ্য সংগ্রহের জন্য তাদের শৃঙ্খলা বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও দুর্নীতি এবং নৈতিক স্খলনের দায়ে বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের পৃথক একটি ডাটাবেজ থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here