“বোমা মেশিনে ঝুকিপুর্ন দহগ্রামের গুচ্ছগ্রাম”

0
243

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের বহুল আলোচিত দহগ্রাম আঙ্গোরপোতার ভুমিহীনদের জন্য নির্মিত গুচ্ছগ্রামটি ঝুকিপুর্ন হয়ে উঠেছে বোমা মেশিনের তান্ডবে। বালু পাথর উত্তোলনের ফলে ভেঙ্গে যাচ্ছে গুচ্ছগ্রামের মাঠ ও ঘর বাড়ি।
জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার বহুল আলোচিত দীর্ঘ দিনের অবরুদ্ধ দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা তিন বিঘা করিডোর গেটটি ২০১৩ সালে সারা জিবনের জন্য উন্মুক্ত করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। ইন্দ্রা- মুজিব চুক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ অবরুদ্ধ জিবনের মুক্তিই শুধু নয় এ বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিক সুবিধা ও জিবনমান উন্নয়নে নানা মুখী পরিকল্প গ্রহন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা তিস্তার চরা লের ভুমিহীনদের বসবাসের জন্য সা¤প্রতিক সময় ৮০টি পরিবারের বসবাসের জন্য একটি গুচ্ছগ্রাম তৈরী করে সরকার। সেখানে ৩০টি পরিবারের ঘর বাড়ি ফাঁকা রেখে পাশে আরো একটি আশ্রয়ন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। যদিও আশ্রয়নটি ওই কৃষি জমিতে নির্মান না করতে স্থানীয় কৃষকরা জজ আদালত থেকে মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত মামলা করেছেন। তাদের কৃষিজ জমি উদ্ধার করতে। মহামান্য হাইকোর্ট ভুমি সচিবের মাধ্যমে দহগ্রামের ভুমি রেকর্ডপত্র তলব করেছেন।
কৃষকরা জানান, ১৯৯২ সালে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মাত্র এক ঘন্টা করিডোর গেট মুক্তি পাওয়া দহগ্রামে মাঠ জরিপের কাজ শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। সে সময় বন্যার কারনে দহগ্রামের বড়বাড়ি, সৈয়দপাড়া, শালতলি প্রভুতি গ্রামের প্রায় ১৪৫০ একর জমি মাঠ জরিপ না করেই জরিপ কাজের সমাপ্ত করা হয়। যা পরবর্তিতে সরকারী খাস খতিয়ানের অন্তভুক্ত হয়। কৃষকরা বিষয়টি জানতে পেয়ে লালমনিরহাট জজ আদালতে ৩০ ও ৩১ ধারায় দুইটি মামলা ও সা¤প্রতি মহামান্য হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মামলা বিচারাধিন থাকলেও সরকারী ভাবে ওই আশ্রয়ন প্রকল্পের এক একর মাঠ ভরাট করতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অধিনে ৭০ মেঃটন গম বরাদ্ধ দেয়া হয়। প্রকল্পটির চেয়ারম্যান হিসেবে দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামাল হোসেন সদ্য নির্মিত গুচ্ছগ্রামের পাশে দুইটি বোমা মেশিনে বালু পাথর তুলে আশ্রয়নের মাঠ ভরাট কাজ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে বোমা মেশিনের তান্ডবে গুচ্ছগ্রামের মাঠ ও ঘর বাড়ি ভেঙ্গে যেতে বসেছে। ঝুকিপুর্ন হয়ে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর গুচ্ছগ্রাম।
বড়বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ফজলুল হক জানান, কৃষি জমিতে আশ্রয়ন না করতে এবং তাদের জমি ফেরত পেতে তারা মহামান্য হাইকোর্টের আশ্রয় নিয়েছেন। হাইকোর্ট কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেও কাজ বন্ধ করেনি সরকার পক্ষ। এক গুচ্ছগ্রামে থাকার লোক নেই। সেখানে আরও আশ্রয়নের প্রয়োজন কি ? প্রশ্ন তুলেন তিনি।
গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, গরিবের কথা কায় শুনে। গরিব মানুষ মরুক, পানিতে ভাসি গেলেও কারও কিছু হয় না। চেয়ারম্যান নিজেই গুচ্ছগ্রামের ঘরের পিছনে বোমা মেশিন বসাইছেন। এখন কাকে বিচার দিবু বাহে? – এমন প্রশ্ন তুলেন তিনি।
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধানে ওই জমিতে বালু ভরাট করা হচ্ছে। বোমা মেশিনে কেন? – এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নন্দী কুমার জানান, শ্রমিক দিয়ে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাঠ ভরাটে বরাদ্ধের অর্ধেক বিল ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে। তবে বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন করা সম্পুর্ন নিষিদ্ধ। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুর কুতুবুল আলম জানান, মহামান্য হাইকোর্টের একটি পত্র কৃষকরা হাতে হাতে দিয়েছেন। কিন্তু কোন অফিস কপি তিনি পাননি। অফিস কপি এলে আদালতের নির্দেশনা মেনে কাজ করা হবে। বোমা মেশিনে বালু উত্তোলন করে থাকলে খোঁজ নিয়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here