বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের স্থবিরতা দীর্ঘ হতে পারে

0
448

খবর ৭১ঃ অভ্যন্তরীণ উৎস বিশেষ করে ব্যাপক হারে জাতীয় সঞ্চয় পত্র বিক্রির (চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে মোট সঞ্চয় পত্র বিক্রির পরিমাণ ৩৯ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬.০৮ শতাংশ বেশী) মাধ্যমে সরকারের বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগযোগ্য অর্থের চাহিদার হ্রাস নির্দেশ করে। ফলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের বর্তমান স্থবিরতা দীর্ঘায়িত হতে পারে। এমন আশংকা করেছে স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ’উন্নয়ন অন্বেষণ’। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির মাসিক প্রকাশনা ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা’য় এ আশংকার কথা উল্লেখ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি আরো বলছে, উচ্চ বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের ফলে সরকারের অনুন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতের বরাদ্দকে সংকুচিত করে অর্থনীতির উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিকে বাঁধার সম্মুখীন করছে। তাদের মাসিক প্রকাশনায় বলা হয়, ক্রমবর্ধমান ঋণের স্থিতি ও ঋণ পরিশোধে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি দেশে উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিনিয়োগ হ্রাস ও আন্ত:প্রজন্ম ঋণের বোঝা বৃদ্ধি করছে। প্রকাশনাটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোট অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের স্থিতি পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় যথাক্রমে ১৫.১২ ও ৮.৫৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে অভ্যন্তÍরীণ ঋণের স্থিতি পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৩২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। নীট বৈদেশিক সাহায্যের প্রবৃদ্ধি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১৭.৫৪ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২.১০ শতাংশ হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি ২০১৩-১৪ অর্থবছর থেকে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। জিডিপি’র অনুপাতে অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১৫.৪৫ শতাংশ ছিল, যা পরবর্তী অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৪-১৫, ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যথাক্রমে ১৫.৫, ১৫.৭৮ ও ১৫.৮১ শতাংশ হয়। চলতি অর্থবছরে প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এই হার ১৪.৬৫ শতাংশ হয়, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে ১৪.৩০ শতাংশ ছিল। অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে উন্নয়ন অন্বেষণ বলছে, অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৯.৮৪ কোটি টাকা হয়েছে। যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ে ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৫.৪২ কোটি টাকা ছিল। বার্ষিক অভ্যন্তরীণ ঋণের স্থিতি ২০০৯-১০ অর্থবছর (১ লাখ ১৬ হাজার ৮২৩.৮৪ কোটি টাকা) থেকে ২০১৬-১৭ র্অথবছর (৩ লাখ ৯ হাজার ৬৮১.৮৭ কোটি টাকা) পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকাশনায় বলা হয়, বৈদেশিক ঋণের উপর প্রদত্ত সুদের পরিমাণ সাম্প্রতিক সময়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের (সুদ ও আসল) পরিমাণ ২০১১-১২ অর্থবছরে ৯৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ২৯৪ মিলিয়ন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে হ্রাস পেয়ে ১ হাজার ৫০ মিলিয়ন ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আবার বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ১৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়। অন্যদিকে, বৈদেশিক ঋণের উপর প্রদত্ত সুদের পরিমাণ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ২০২ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়। ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারের ঋণ লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির দিকে দৃষ্টি দিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটে সরকারের ঋণ লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়, যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৯ লাখ ৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ছিল। প্রতিষ্ঠানটি বাজেট ঘাটতি ও ঋণের প্রতিকূল প্রভাব মোকাবেলার লক্ষ্যে বিদ্যমান মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির পূনঃনিরীক্ষণ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি বিচক্ষণ ও কার্যকরী ঋণ ব্যবস্থাপনা নীতি কাঠামো গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করে।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here