বেশিরভাগ রেলসেতুই ঝুঁকিপূর্ণ

0
430

খবর৭১ঃ বাংলাদেশ রেলওয়ের অধিকাংশ সেতুই তৈরি হয়েছে ব্রিটিশ আমলে। এসব সেতুর বেশিরভাগই ঝুঁকিপূর্ণ-জরাজীর্ণ। জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা এসব সেতুর উপর দিয়েই চলছে ট্রেন।

ফলে ঘটছে দুর্ঘটনা। সর্বশেষ সোমবার ঢাকা-সিলেট লাইনে কুলাউড়ার মনছড়া (৯নং রেলসেতু) রেলসেতুতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উপবন এক্সপ্রেস। এতে ৪ জন নিহত ও শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছেন।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রেলসেতু ভেঙে যাওয়া বা দেবে যাওয়ার এমন ঘটনা নতুন নয়। ৩ হাজার ৩৩৬ কিলোমিটার রেলপথে লাইনচ্যুতের ঘটনা প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। কিন্তু ভয়াবহ দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে রেলসেতুকেন্দ্রিক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ৭০ থেকে ১০০ বছরের কিংবা তারও বেশি পুরনো সেতুগুলো শুধু ঝুঁকিপূর্ণই নয়, চরম আতঙ্কেরও বটে। এছাড়া স্টিল কিংবা লোহার ব্রিজগুলো আরও ঝুঁকিপূর্ণ। দুই অঞ্চলে (পূর্ব-পশ্চিম) কেপিআইভুক্ত সেতু রয়েছে প্রায় ৪৫টি। সেতুগুলোর মধ্যে ৯০ শতাংশেরই মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের মতে, নির্মাণের ৫০-৫৫ বছর পর সেতুর মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

একশ’ থেকে দেড়শ’ বছরের পুরনো। ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেতু পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে সচল রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে তারা স্বীকার করেছেন, ব্রিটিশ আমলের এসব সেতু একেবারেই অনুপযোগী। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং ঘটছেও। এমতাবস্থায় সেতুগুলো সময়োপযোগী করে পুনর্নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই।

এদিকে উপবন এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা নিয়ে এদিন মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় পুরনো রেলসেতু তথা ব্রিটিশ আমলে নির্মিত সেতুগুলো পুনঃস্থাপন (রিপ্লেস) করা নিয়ে আলোচনা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান বলেন, আমার নিজের কৌতূহল থেকেই দেখেছি, জরাজীর্ণ এসব ব্রিজে কী করে কাজ করা হয়। কোন পদ্ধতিতে এসব ব্রিজ মেরামত করা হয়। প্রকৌশলী তথা শ্রমিকদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি দেখতে পাইনি। তারা পুরনো এসব ব্রিজে ‘জ্যাকেট সিস্টেম’ পদ্ধতির মাধ্যমে পিলারগুলোকে মেরামত করেন।

তবে আমি বলতে চাই, এমন পদ্ধতি নয়- রেল খাত যেভাবে উন্নত হচ্ছে তাতে ব্রিটিশ, মেয়াদোত্তীর্ণ কিংবা জরাজীর্ণ এমন কোনো রেলসেতুই রাখা ঠিক হবে না। আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি, এসব ব্রিজের কোনোটাই রাখা হবে না। পর্যায়ক্রমে সব ব্রিজ নতুন করে নির্মাণ করা হবে।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল জলিল যুগান্তরকে বলেন, এ অঞ্চলের ব্রিজগুলো যথাযথ মেরামতের মাধ্যমে ঠিক রাখতে মাঠপর্যায়ে লোক কাজ করছেন। অনেক সময় পানির তোড়ে ব্রিজের দু’পাশের মাটি সরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম নতুন যে রেলপথ হচ্ছে সেই পথের সেতুগুলো আধুনিক এবং খুবই মজবুত করে নির্মাণ করা হয়েছে। পুরনো ব্রিজগুলোকে মেরামত করে টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হয়। এসব ব্রিজ দিয়ে নির্ধারিত গতিতে ট্রেন চালানোর নির্দেশও দেয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, নামে মাত্র ব্রিজগুলো মেরামত করা হয়। কোনোমতে রং-চুন লাগিয়ে কাজ শেষ করা হয়; যার ফলে উনিশ থেকে বিশ হলেই এসব ব্রিজে দুর্ঘটনা ঘটছে। লাইন কিংবা ব্রিজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল, প্রতিদিনই এর দেখভাল করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর চলে গেলেও ব্রিজগুলোর যথাযথ উন্নয়ন করা হয়নি।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্রার হোসেন (সেতু) বলেন, পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে ১ হাজার ৬৩৯টি ব্রিজ রয়েছে; যার প্রায় ৮৫ শতাংশই ব্রিটিশ আমলের। এসব ব্রিজের কোনোটাই রড-সিমেন্ট দিয়ে তৈরি নয়।

পাথর দিয়ে তৈরি এসব ব্রিজ বছরের পর বছর ধরে মেরামত করতে হয়। এত পুরনো ব্রিজ মেরামত করেও যথাযথ করা সম্ভব হয় না। তাই নির্দেশনা থাকে এসব ব্রিজের উপর দিয়ে ট্রেন যেন গতি কমিয়ে চালানো হয়।

ঢাকা বিভাগে মোট ৫৫০টি রেলওয়ে ব্রিজ রয়েছে। এ বিভাগেরও অধিকাংশ ব্রিজ ব্রিটিশ আমলের।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতেও ব্রিটিশ আমলে নির্মিত রেলসেতু রয়েছে। এসব সেতু নিয়ে আমরা একপ্রকার শঙ্কায় থাকি। পুরনো এসব সেতু মেরামত করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করতে হয়। এসব ব্রিজ নতুন করে করতে হবে। এজন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাবনাও দিয়েছি।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (সেতু) আসাদুল হক বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেলে মোট ১ হাজার ৩৬৭টি ব্রিজ রয়েছে; যার মধ্যে পাকশি ও লালমনিরহাট বিভাগে কিছু নতুন ব্রিজ করা হয়েছে। এ অঞ্চলের পাকশি বিভাগে ৫৯৫, লালমনিরহাট বিভাগে ৪০৮ ও খুলনা বিভাগে ৩৬৪টি রেলসেতু রয়েছে। এসব ব্রিজ মেরামত করতে হলে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের প্রয়োজন।

রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) সামছুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে। পুরনো লাইন কিংবা রেলসেতু যথাযথ উপায়ে মেরামত করেই ট্রেন চালানো হচ্ছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here