বেনাপোল সীমান্তে একই মে দু’বাংলার ২১ উদযাপন

0
278

শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল প্রতিনিধি :
প্রতি বছরের ন্যায় এবারো বেনাপোল-পেট্রাপোল নো-ম্যানসল্যান্ডের দু’বাংলার মোহনায় পালিত হলো আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস। দিবসের প্রথম প্রহরে “ভারত-বাংলাদেশ” দু’বাংলার সর্বস্তরের মানুষ বিভিন্ন ব্যানারে উপস্থিত হন সীমান্তের শূন্যরেখায়। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি, এমন সূমধুর সুরে নো-ম্যান্সল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানান। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সীমান্ত ছাপিয়ে একই ছায়া তলে মিশে যান দুই বাংলার বাঙালিরা। দিবসটি পরিণত হয় দু’বাংলার বাংলার মিলন মেলায়। পরে অতিথিরা একে অণ্যকে ফুলেল শুভেচ্ছ জানান। নৃত্য, কবিতা আবৃতি আর সুরের মূর্ছনায় ২১-শের  ১ই মে কে প্রানবন্ত করেন দু’দেশের শিল্পী ও কলা কৌশলীরা। এসময় শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এপার বাংলার আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ, ৪৯-ব্যাটালিয়ন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল হক।

ভারতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী শ্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বঁনগা লোকসভার সংসদ সদস্য শ্রীমত্য মমতা ঠাকুর, উত্তর ২৪ পরগণা জেলা পরিষদের সভাধিপতি রেহেনা খাতুন ও শ্রী কৃষ্ণ গোপাল ব্যানার্জী, বঁনগা (দক্ষিণ) বিধানসভা বিধায়ক শ্রী সুরজিৎ বিশ্বাস ও (উত্তর) শ্রী বিশ্বজিৎ দাস, প্রাক্তন বিধায়ক ও জেলা আ লিক পরিবহন দপ্তরের সদস্য শ্রী গোপাল শেঠ, পশ্চিম বাংলার বিশিষ্ট কবি ও লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ও সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সংগীত শিল্পী অনুপম রায়, অভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সংগীত শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় ও ফতেমাতুজ্জোহরা।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি আওয়ামীলীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্রাচার্য বলেন, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন আমাদের অধিকার বোধের জম্ম দিয়েছিল। রক্তের বিনিময়ে রাস্ট্রভাষার যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বিশ্বে বিরল। অন্য জাতির এই গৌরব নেই। সেই চেতনার ধারাবাহিকতায় আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অগনিত মানুষের অংশ গ্রহনে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারতের জনগণ ও সরকার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সাথে আমাদের আত্মার সম্পর্ক, নাড়ীর সম্পর্ক। এদেশের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণতন্ত্র বিকশিত হতে শুরু করেছে। ভাষা ও ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের দুই দেশের মধ্যে উপস্থিত সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের ভিতকে আরো শক্ত করবে বলেও জানান তিনি।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, আপনারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। ভাষা আর স্বাধীনতার জন্য এত ত্যাগের নজির পৃথিবীতে অন্য কারোরই নেই। এ জন্য আপনারা গর্বিত জাতি। ভাষার টানে আমরা বাংলাদেশে ছুটে এসেছি একুশ উদযাপন করতে। দু’বাংলার মানুষ একসাথে মাতৃভাষা দিবস পালন করছে দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আপনারা ভাল থাকলে আমরাও ভাল থাকবো। দু’বাংলার মানুষ আমাদের খুব কাছের মানুষ। আমাদের পূর্ব পুরুষেরা এপার বাংলারই মানুষ ছিল। দু’বাংলার মানুষের মিলন মেলার মধ্য দিয়ে দু’দেশের বন্ধুত্ব আরো সুদৃঢ় হবে। আমার এসেছি অন্তরের টানে। বার বার ছুটে আসি। দেশ বিভক্তি হলেও ভাষার পরিবর্তন হয়নি। আমরা ওপারে থাকলেও শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ সকল ভাষা সৈনিকের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। তিনি আরো বলেন, সীমান্তের গেটে ভাষা শহীদদের ছবি টাঙিয়ে দেওয়া হবে। বনগাঁতে শহীদদের স্মরণে ব্যাংক তৈরি করা হবে।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here