বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় হৃদরোগে

0
324

খবর ৭১ঃ গোটা পৃথিবীতেই মানুষের আয়ু বেড়েছে। ১৯৫০ সালে বৈশ্বিক গড় আয়ু ছিল মাত্র ৪৬। কিন্তু ২০১৫ সাল নাগাদ তা বেড়ে ৭১ এর বেশি তে গিয়ে দাঁড়ায়।
তাই বলে অনেক দেশের অগ্রগতি সবসময় মসৃণ ছিল তেমনটি কিন্তু নয়। রোগ-বালাই, মহামারী এবং অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন ঘটনায় সেসব দেশে প্রচুর মানুষ মারা গেছে।

পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ, যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে অকাল মৃত্যুর ঘটনাও কম ঘটেনি। তবে এসব মৃত্যুর হার ০ দশমিক ৫ শতাংশেরও কম।

কিন্তু বিশ্বজুড়ে এখনো বহু মানুষ খুব অল্প বয়সে মারা যাচ্ছে এবং তারা মারা যাচ্ছে প্রতিরোধ যোগ্যে এমন নানা কারণে।
২০১৭ সালে বিশ্বে মারা গেছে প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। ১৯৯০ সালের তুলনায় যা দশগুণ বেশি। যদিও বৈশ্বিক জনসংখ্যা বেড়েছে এবং আগের চেয়ে মানুষের গড় আয়ুও বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্বের ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ মারা যায় অ-নিরাময়যোগ্য, ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদী রোগে। এগুলো কোনো সংক্রামক রোগ নয়। তবে এসব রোগের আরোগ্য লাভের গতি খুব ধীর।

বিশ্বে বর্তমানে যে রোগে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় তা হলো হৃদরোগ (কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ)। এটি হৃৎপিণ্ড ও ধমনীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং প্রতি তিনটি মৃত্যুর জন্য এই রোগ দায়ী।

দ্বিতীয় প্রধান কারণ হচ্ছে ক্যানসার। প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর জন্য দায়ী এই অনিরাময়যোগ্য রোগ। এছাড়া অন্যান্য অসংক্রামক রোগ যেমন ডায়াবেটিস, শ্বাসতন্ত্রের নির্দিষ্ট কিছু রোগ এবং ডিমেনশিয়া জীবন কেড়ে নেয়া রোগের তালিকার শীর্ষে রয়েছে।

এখনও প্রতিরোধযোগ্য বিভিন্ন রোগে বিপুল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর কারণ আসলেই হতাশাব্যঞ্জক।

২০১৭ সালে ডায়রিয়ার কারণে মারা গেছে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ যা শীর্ষ দশটি মৃত্যুর কারণের একটিতে পরিণত করেছে। কোনও কোনও দেশে এই রোগেই মারা গেছে সবচেয়ে বেশি মানুষ।

ওই একই বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নবজাতকের অসুস্থতা জনিত জটিলতার কারণে জন্মের প্রথম ২৮ দিনের মধ্যে মারা গেছে ১৮ লাখ শিশু।

যদিও এই মৃত্যুর ধারাবাহিকতা দেশ থেকে দেশে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। জাপানে জন্মের ২৮ দিনের মধ্যে ১০০০ শিশুর মধ্যে একটিরও কম মারা যাচ্ছে। কিন্তু সেই তুলনায় বিশ্বের দরিদ্রতম অনেক দেশে প্রতি ২০ জনে একটি শিশু মারা যাচ্ছে।
ধনী ও দরিদ্র দেশগুলিতে একইভাবে সড়ক দূর্ঘটনা মৃত্যুর উচ্চহারের জন্য দায়ী। ২০১৭ সালে ১২ লাখ মানুষ মারা গেছে সড়কে।

যদিও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে অনেক উচ্চ আয়ের দেশে সড়কে মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে। তবে পৃথিবী জুড়ে সড়ক দূর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় একইরকম রয়ে গেছে।

অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে। একই সঙ্গে প্রায় দ্বিগুন হয়েছে খুনের ঘটনাও। ব্রিটেনে আত্মহত্যা ১৬ গুণ বেড়েছে এবং ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল এটি।

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এবং নিজ নিজ দেশের উন্নতির সাথে সাথে লোকজনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে কি?

একটা সময় এখনকার চেয়ে সংক্রামক রোগে বহু লোক মারা যেত। ১৯৯০ সালে প্রতি তিনজনের একজনের মৃত্যুর কারণ ছিল সংক্রামক এবং ছোঁয়াচে রোগ। কিন্তু ২০১৭ সালে এসে তা কমে প্রতি পাঁচজনে একজনে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে শিশুদের সংক্রামক রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি রয়েছে। এই ১৯ শতকেই বিশ্বে প্রতি পরিবারে তৃতীয় সন্তানটি পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা গেছে। তবে যখন থেকে টিকা কর্মসূচি এবং পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, স্বাস্থ্য-সুরক্ষা এবং নিরাপদ পানির বিষয়ে উন্নতি হয়েছে তখন থেকে শিশু মৃত্যুর হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে গেছে।

ধনী দেশগুলোতে বর্তমানে শিশু-মৃত্যু তুলনামূলকভাবে বিরল, যদিও গরীব অঞ্চলে এখনো শিশু মৃত্যুহার এই বিশ শতকের প্রথমার্ধে ব্রিটেন এবং সুইডেনের সমান এবং তা ধরে রাখার চেষ্টা চলছে। আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি বিরাট সাফল্য হচ্ছে বৈশ্বিক শিশু মৃত্যুহার কমিয়ে আনা।

সাম্প্রতিক দশকগুলিতে প্রতি বছর শিশু মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেছে সংক্রামক এবং সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দুর্দান্ত সাফল্যের মাধ্যমে। অন্যদিকে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর ঘটনা স্থানান্তরিত হয়েছে বয়স্কদের মধ্যে। বৃদ্ধদের সংখ্যা বাড়ায় এবং দীর্ঘ মেয়াদী নানা অসুস্থতার কারণে অনেক দেশে বয়স্কদের আত্মীয়স্বজন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা সংক্রান্ত ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে অনেক দেশের ভেতরে উদ্বেগ বাড়ছে।

চলমান উন্নয়নকে বিচলিত করে দিতে পারে আকস্মিক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। ১৯৮০ সালের এইচআইভি/এইডস সঙ্কটের ঘটনা এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

এই মহামারি বিশ্বের সমস্ত অঞ্চলে দেখা দিয়েছিল, কিন্তু মানুষের আয়ুষ্কালের ওপর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রভাব দেখা যায় সাব-সাহারীয় আফ্রিকায়।

অ্যান্টি-রেট্রোভাইরাল থেরাপি, চিকিৎসা এবং এর প্রতিরোধ বিষয়ক শিক্ষা-এগুলোর সমন্বয়ে, এইডস-সম্পর্কিত অসুস্থতায় মৃত্যু বিশ্বে গত দশকে অর্ধেকে নেমে গেছে।

এমনকি ধনী দেশগুলোতেও ধারাবাহিক অগ্রগতি কারো দ্বারা প্রদত্ত নয়। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে আয়ু সামান্য কমে গেছে মূলত ওপিওইড মাদক সঙ্কটের কারণে। নতুন মায়েদের ক্ষেত্রেও আয়ুষ্কাল বাড়েনি।

প্রায় দশটির মতো দেশ রয়েছে যেখানে আজকের দিনেও অল্পবয়সী কোনও মাকে সন্তান জন্মদানের সময় কিংবা পরে মৃত্যুর মুখে পড়তে হতে পারে, এর মধ্যে ও যুক্তরাষ্ট্রও রয়েছে।

বর্তমানে সামগ্রিক চিত্রটি অবশ্য ইতিবাচক: মানুষ আগের চেয়ে বেশিদিন বাঁচতে পারছে- যদিও কিছু মানুষ বিশেষ করে শিশুরা প্রতিরোধযোগ্য অসুখে মারা যাচ্ছে। তবে এটাও সত্য যে এখনো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।

স্যানিটেশন, পরিচ্ছন্নতা, পুষ্টি, টিকাদান কর্মসূচি এবং মৌলিক স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে আরও উন্নতি এসবই এজন্য গুরুত্বপূর্ণ। চলমান স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি চালিয়ে যেতে হলে কী কী কারণে মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বিশ্ব জুড়ে সড়ক দূর্ঘটনাতেও মারা যায় বহু মানুষ।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here