বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী পলাশ আহমেদ সোনারগাঁওয়ের ছেলে

0
388

জহিরুল ইসলাম মৃধা,সোনারগাঁও প্রতিনিধিঃ  আমি পলাশকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম এবং সর্বদায় দোয়া করেছি আল্লাহ ভাল হলে তাকে দুনিয়াতে রাখিও না হয় দুনিয়া থেকে তুলে নাও এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পিয়ার জাহান সরদার। গত শুক্রবার সকালে দুবাই যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বিদায় নিয়ে যায়। বিমানে উঠার আগে পলাশ তার ষ্ট্রেটাসে লিখেছিলেন “ঘৃনা নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে”। গত রবিবার দুপুর একটা তিন মিনিটে সে এ স্টেটাসটি দিয়েছে। তার ফেইসবুক একাউন্টে নাম লিখা আছে মাহিবি জাহান।
দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজ ছিনতাইকারী মূলহোতা মাহাদীর (পলাশ) পরিচয় মিলেছে। তার নাম মাহমুদ পলাশ (২৩)। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের ছেলে পলাশ।
পলাশের বাবা জানান, ২০১১ সালের দিকে স্থানীয় তাহেরপুর আলিম মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করে। এরপর সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হলেও পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে বিদেশে থাকতেন। প্রথমে কুয়েত এবং পরে সৌদি আরবে ছিলেন তিনি।
তিনি আরো জানান, সে ৫ বছর পূবে ওমর আলী স্কুল এন্ড কলেজের ১০ ম শ্রেনীর ছাত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। শিক্ষার্থী বাবা একটি অপহরনের মামলা দায়ের করলে সেই মামলায় ২০ দির কারাভোগের পর ছাড়া পায়। সম্প্রতি উপজেলা সম্ভুপুরা ইউনিয়নের চরকিশোরগঞ্জ এলকার নিহর ৩ থেকে ৫ জনকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে পতারনা করেছেন। প্রবাসে থাকার সময় তার পাঠানো টাকা-পয়সা নিয়ে উছৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন পলাশ। এর মধ্যে নাচগান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র শিল্পে জড়ান তিনি। কয়েকটি শর্টফিল্মও তৈরি করেন বলেও জানান তিনি। শর্টফিল্মও নাম ছিল ’কবর”। একটা সময় বাসা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন পলাশ। বাড়িতে তেমন যেতেন না। মাঝে মধ্যে টাকার প্রয়োজন হলে বাড়ি যেতেন। বছর খানেক আগে সে চিত্র নায়িকা সিমলাকে বিয়ে করেন। দুইবার সিমলাকে নিয়ে সোনারগাঁওয়ে আমার বাসায় এসেছিল পলাশ। আমি এ বিয়ে মেনে নিতে পারিনি। সে এর আগে ২০১৪ সালে বগুড়ায় একটি বিয়ে করে। ওই স্ত্রীর নাম মেঘলা। সেখানে আয়ান নামে আড়াই বছরের একটি ছেলে আছে তার। তবে সিমলার সাথে বিয়ে হওয়ার পর ২০১৭ সালে প্রথম স্ত্রী তাকে তালাক দেয়।
নিহত পলাশের পিতা গত সাত বছর আগে বিদেশ থেকে স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসেন তিনি। এলাকায় একটি মুদি দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। পলাশরা চার ভাইবোন। বড় বোন পলি, ছোট বোন জিন্নাত ও জান্নাত । স্ত্রী রেনু আক্তার গৃহিণী।
পলাশের বাবা আরোও বলেন, গত ২০-২৫ দিন আগে বাড়িতে আসে পলাশ। সাধারণত বাড়িতে সে এত দিন থাকতো না। গত ২০-২৫ দিনে অনেকটা পাল্টে যায় সে। মসজিদে যাওয়া-আসা করতো, এমনকি আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার বাসা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় তার মাকে বলে যায়- ভ্রমণ ভিসায় সে দুবাই যাবে।
তবে দুবাই যাওয়ার বিষয়ে আমাকে কিছু বলেননি পলাশ। তবে, ছেলের উছৃঙ্খল জীবন নিয়ে তিনি এতটাই অতিষ্ঠ ছিলেন যে, তিনি চেয়েছেন হয় ছেলে ভালো হোক, না হয় মারা যাক। অবশেষে বাবার ক্ষোভে বলা সেই ইচ্ছাই পূরন হলো।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, “পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে রোববার রাতে একটি তথ্য আসে যে মেহেদী বা মাহাদী হাসান নামের বা এ ধরনের কেউ দুবাই যাবে এমন কেউ সোনারগাঁওয়ের আছে কিনা। পাশাপাশি মৃতদেহের একটি ছবি পাঠানো হয়েছিল। ওই ছবি নিয়ে তিনি রাতে পলাশদের বাড়িতে গেলে তার পরিবার পরিচয় নিশ্চিত করেন।
তাহেরপুর সহকারী শিক্ষক নুরনবী জানান, সে মাদ্রাসা পড়ার সময় বেশ দুরন্ত প্রকৃতির ছিল। এ জন্য তাকে মাদ্রাসা থেকে একবার বের করে দেওয়া হয়েছিল। এদিকে, এলাকাবাসী সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই অনেকটা নারী লোভী ছিল পলাশ। সে মাদ্রাসায় পড়াকালীন সময়ে স্থানীয় অন্য একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীও সাথে দেখা করতে বোরকা পড়ে মাদ্রাসায় ঢুকে এবং মেয়ের সাথে রাত্রী যাপন করে। এছাড়া বাবা বিদেশ থাকার সুবাদে মাকে বোলবাল বুঝিয়ে টাকা নিয়ে মেয়েদের সাথে আমোদ ফুর্তি করে বেড়াতো।
বিমানে উঠার আগে পলাশ তার ষ্ট্রেটাসে লিখেছিলেন “ঘৃনা নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে”। গত রবিবার দুপুর একটা তিন মিনিটে সে এ স্ট্রেটাসটি দিয়েছে। তার ফেইসবুক একাউন্টে নাম লিখা আছে মাহিবি জাহান। ফেইজবুকে সে নিজের প্রফেশন হিসেবে লিখেছেন তিনি বৃটিশ এয়ারওয়েজের ইনফরমেশন টেকনোলাজি বিজনেস এনালিষ্ট। শিক্ষাগত যোগ্যতা দেওয়া আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাবলিক এডমিনিস্টেশন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। তিনি ইউনাইটেড কিংডম গ্লাসগোতে বসবাস করেন। ফেইসবুকে নায়িকা শিমলার সাথে অসংখ্য অন্তরঙ্গ ছবি রয়েছে। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে ফেইজবুকে পলাশ শিমলার সাথে একটি অন্তরঙ্গ ছবি দিয়ে লেখেন “ এ হচ্ছে আমার বউ যে আমার হাজার ভুলের মাঝে, আমাকে সহ্য কওে পার কওে দিল একটি বছর দোয়া করবেন যাতে সারাটা জীবন এ পাগলিটা আমি এক সাথে থেকে যেন মনতে পারি। বউ অনেক ভালবাসি তোমায় আর কষ্ট দেবো না। শুভ বিবাহ বার্ষিকী আদরের পুতুল বউ আমার।
খবর৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here