খবর৭১ঃ শাহীন হায়দার, একটি সংঘবদ্ধ প্রতারণা চক্রের মূল হোতা। সে বিডি জবসে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে হাজারের বেশি বেকার মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
ওই জালিয়াতির টাকা দিয়ে লন্ডনে একটি রেস্টুরেন্ট ও রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছে সে।
অনলাইন ভিত্তিক দেশের শীর্ষ স্থানীয় চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান বিডি জবসে বিভিন্ন সময় বিজ্ঞাপন দিয়ে, বিদেশে লোক পাঠানোর নামে প্রতারণায় জড়িত থাকার সুবাদে মূলহোতা শাহীন হায়দারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা।
গ্রেপ্তাররা হলো- শাহীন হায়দার, তাজুল, হাসান ও শ্যামল। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সিম জব্দ করা হয়।
বুধবার বিকেলে রাজধানীর শ্যামলীর তেজগাঁও বিভাগের ডিসি অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার(ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার।
তিনি বলেন, একটি সংঘবদ্ধ অসাধু প্রতারক চক্রের সদস্যদের সঙ্গে বিডি জবসের কয়েকজন কর্মী সরাসরিভাবে জড়িত। প্রতারক চক্র যখন তাদের বিজ্ঞাপন আপলোড করতে বলতো, তখন তারা বিজ্ঞাপন আপলোড করতো। আবার বিজ্ঞাপন ডাউন করতে বললে ডাউন করতো।
মাঝে মাঝে প্রতারক চক্রটির কাছে বিজ্ঞাপন আপলোডের নামে বিডি জবসের কর্মীরা অধিক টাকাও দাবি করত বলে জানিয়েছেন বিপ্লব কুমার সরকার।
যে কোন চাকরির বিজ্ঞাপন আপলোড করার আগে ওই প্রতিষ্ঠানের সব নথিপত্র যাচাই বাছাই করে বিজ্ঞাপন ছাপানোর নিয়ম থাকলেও বিডি জবস তা করেনি বলে প্রাথমিক তদন্তে বের হয়ে এসেছে।
বিল্পব সরকার বলেন, আমরা বিডি জবস কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি, তাদের প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতিমধ্যেই আমাদের অফিসে উপস্থিত হয়েছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের গাফিলতি পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শুধু তাই নয়, মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা অন্যের বায়োমেট্রিক সিম অবৈধভাবে বিক্রি করে। এসব সিম দিয়েই প্রতারক চক্র জালিয়াতি করে। আমরা মোবাইল সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, রকেট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। কারো কোনো গাফিলতি পাওয়া গেলেই তাদের আটক করা হবে।
ডিসি বিপ্লব আরও বলেন, এই চক্রের মূলহোতা শাহীন হায়দারের নেতৃত্বে দশ থেকে পনেরো জন প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। চক্রটিকে মোবাইলের বায়োমেট্রিক সিম সরবরাহ করত হাসান ও তাজুল। তারা অন্যের এনআইডি (জাতীয় পরিচয় পত্র) ও মোবাইল সিম প্রতারক চক্রের কাছে পনেরো থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকায় সিম বিক্রি করত। শ্যামল ভুয়া অফার লেটার, কনফার্মেশন লেটার, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স বানাতো। প্রতারক চক্রটি ব্যবহৃত সিম দিয়ে শুধুমাত্র ভুক্তভোগীদের ফোন দিত।
বিদেশে লোক পাঠানোর নামে চক্রটি কখনো ‘আলি বিন গ্রুপ’ বা ‘এবিএ গ্রুপ’ বা কাতারভিত্তিক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের স্টোর ম্যানেজার কিংবা কমার্শিয়াল ম্যানেজারের পদে বাংলাদেশ থেকে লোভনীয় বেতনে স্বপরিবারে কাতার যাওয়ার অফার বিডি জবসের বিজ্ঞাপনে দিত। বিজ্ঞাপনের লিংকের মাধ্যমে আবেদন করলে আগ্রহী প্রার্থীকে ই-মেইল অ্যাড্রেস দিতে বলা হত। প্রতারক চক্রটি পাঁচ থেকে সাতদিন পর ওই পদে আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচিত হয়েছেন এমন একটি লেটার প্রার্থীর ই-মেইলে পাঠাতো। এবং জানিয়ে দিত কাতারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির একজন প্রতিনিধি বর্তমানে বাংলাদেশে আছে এবং তার মোবাইল নম্বর দিয়ে দিত।
পরে আগ্রহী ব্যক্তি ওই প্রতিনিধিকে ফোন দিলে সে বিভিন্ন ভাষায় কখনো ইংরেজী কখনো আরবীতে কথা বলত। এবং প্রার্থীদের ব্যস্ততা দেখাত এবং জানাত পদ খালি নেই বলে ফোন কেটে দিত।
এর দুএকদিন পর আবেদনকারী ফোন করলে কিংবা না করলে তিনি নিজে ফোন করে একটা বিকাশ নাম্বার দিত এবং আবেদনকারী সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট স্ক্র্যানকপি এবং কাতার দূতাবাসের সত্যায়ন ফি বাবদ সাড়ে সাত থেকে দশ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলে প্রার্থীর ই-মেইলে অফার লেটার, কনফার্মেশন লেটার, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পাঠানো হতো। এসবের মধ্যেও কাতারের দুই সপ্তাহের হোটেল বুকিং, পাসপোর্ট ও ভিসা প্রসেসিং, এয়ার টিকিটের বাবদ প্রার্থীর কাছ থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে নিত। এরপর প্রার্থী টিকিট কবে পাবে এসব বিষয়ে ফোন দিলে নম্বর বন্ধ পেত।
বিপ্লব কুমার বলেন, গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা হয়েছে। আসামিদের আদালতে পাঠানোর পর রিমান্ড আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত আমাদের এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরো তথ্য বের হয়ে আসবে।
খবর৭১/এসঃ