বিজয় সরকারের জন্মভিটা সংরক্ষণের অভাবে বেহাল অবস্থায়

0
313

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলের অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুরস্রষ্টা চারণকবি বিজয় সরকার ১৯০৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের ডুমদি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বার্ধ্যকজনিত কারণে ১৯৮৫ সালের ৪ ডিসেম্বর পরলোকগমন করেন তিনি। মৃত্যুর দীর্ঘ বছর পেরিয়ে গেলেও যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে বিজয় সরকারের বসতভিটা। ঝোপজঙ্গল, আগাছা ও ময়লা-অবর্জনায় হারিয়ে যেতে বসেছে কবির স্মৃতিধন্য নড়াইলের ডুমদি এলাকার সৌন্দর্য। বিস্তারিত আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের রিপোর্টে, এদিকে বিজয় সরকারের বাড়িতে যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটিও সম্পূর্ণ পাকা হয়নি এতদিনে। মেঠো পথের মতোই রয়ে গেছে রাস্তাটি। বিল ও খাল বেষ্টিত ডুমদিতে সড়ক যোগাযোগের রাস্তাটি কাঁচা থাকার কারণে দর্শনার্থীরা পড়ে বিপাকে। কবির স্মৃতিধন্য বসতভিটায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে বছরের প্রায় আট মাসই নৌকার ওপর ভরসা রাখতে হয় দর্শনার্থীদের। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় ৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ডুমদিতে ভবন ও বিজয় মূর্তি  নির্মিত হলেও কোনো তত্ত্বাবধায়ক না থাকায় অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে এসব স্থাপনা। ফাটল ধরেছে ভবনের বিভিন্ন অংশে। যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে কবির ব্যবহৃত  খাটসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কোনো সংগ্রহশালা না থাকায় বিজয় সরকারের সৃষ্ট অনেক গানের কথা ও সুর হারিয়ে যেতে বসেছে। বিজয় সরকারের আত্মীয় বিভাষ চন্দ্র সিকদার বলেন, কবির বসতভিটা এলাকায় বর্তমানে আমার পরিবারই বসবাস করছে। অন্যরা ডুমদি ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন অনেক আগেই। কবির বসতভিটা ও বাসভবন দেখার কেউ নেই। খুবই এলোমেলো অবস্থা। থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। রয়েছে টয়লেট ও পানির সমস্যাও। তাই দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীরা হতাশ হয়ে ফিরে যায়। বিজয় গবেষক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে বিজয় সরকারের অসংখ্য গানের সুর। এসব গান ও সুর সংগ্রহ করে স্বরলিপি আকারে প্রকাশ করার দাবি জানাচ্ছি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে। চারণকবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক এসএম আকরাম শাহীদ চুন্নু বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বিজয় সরকারের অনেক অবদান রয়েছে। তিনি কবিগান গেয়ে যে টাকা উপার্জন করতেন, তা মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে ব্যয় করতেন। তাই ‘কণ্ঠযোদ্ধা’ হিসেবে বিজয় সরকারকে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়ার দাবিসহ জাতীয় চারণকবির স্বীকৃতি প্রদান, বিজয় সরকারের নামে নড়াইলে ফোকলোর ইনস্টিটিউট নির্মাণ ও পাঠ্যপুস্তকে কবির রচনা ও জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি। প্রকৃত নাম বিজয় অধিকারী হলেও সুর, সঙ্গীত ও অসাধারণ গায়কী ঢঙের জন্য ‘সরকার’ উপাধি লাভ করেন। বিজয় সরকার একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক ছিলেন। ১ হাজার ৮০০-এর বেশি গান লিখেছেন এবং সুর-সঙ্গীত করেছেন। এদিকে বিজয় সরকারের ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নড়াইলে দুই দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য চারণকবি বিজয় মেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (পিপিএম), এ মেলার উদ্বোধন করেন। মেলার প্রথম দিন নানা বয়সী বিজয়ভক্ত শিল্পীদের উন্মুক্ত বিজয়গীতি পরিবেশন ছাড়াও থাকবে বিজয় গীতি প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি আর সন্ধ্যায় হবে ধুয়োগান ও পটগান। মেলার দ্বিতীয় দিন পরিবেশিত হবে দেশের বিখ্যাত কবিয়ালদের কবিগান। এছাড়া মেলায় তিনজন গুণী কবিয়ালকে চারণকবি বিজয় সরকার স্বর্ণপদক প্রদান করা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here