বিএসটিআই’র আইনজীবীর বক্তব্যে অসন্তোষ ও তিরস্কার প্রকাশঃ হাইকোর্ট

0
794
বিএসটিআই’র আইনজীবীর বক্তব্যে অসন্তোষ ও তিরস্কার

খবর৭১ঃ

চৌদ্দটি কম্পানির পাস্তুরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে বিএসটিআই’র দেওয়া প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএসটিআই’র আইনজীবীর এই বক্তব্যে হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এই বক্তব্যের কারণে বিএসটিআই’র আইনজীবীকে তিরস্কার করেছেন আদালত। একইসঙ্গে আদালতের আদেশ ছাড়া দুধ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য ও বিজ্ঞাপন প্রচার না করতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেন।

বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে উভয়পক্ষের আইনজীবীর সময় আবেদনে আদালত আগামী ১৪ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

আদালতে বিএসটিআই’র পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন মো. তানভির আহমেদ।

এদিন আদালত বিএসটিআই’র আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা দুধ নিয়ে প্রতিবেদন দিলেন। এরপর এটা নিয়ে আমরা কোনো আদেশও দিলাম না। এমনকি এই প্রতিবেদনের সত্যতাও পরীক্ষা হয়নি। তারপরও আপনি মিডিয়ায় যেয়ে বললেন, প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর এরপর প্রাণ আমাদের (হাইকোর্ট) উদ্ধৃতি দিয়ে মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিলো। ওই বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের একমাত্র খাদ্যমান নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসটিআই সকল দুধের মান পরীক্ষা করে আদালতে রিপোর্ট পেশ করে। উক্ত রিপোর্টে প্রাণ দুধকে সম্পূর্ণ নিরাপদ বলা হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

আদালত বলেন, যে প্রতিবেদনে কোনো শুনানিই হলো না, আদালত কোনো আদেশ দিলো না। তারপরও আদালতকে জড়িয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার হলো। এখন বলুন, এই দুধ খেয়ে যদি কেউ অসুস্থ হয় বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তবে তার দায় কে নেবে? এরপর আদালত বিএসটিআই’র আইনজীবীকে বলেন, কোনো বিভ্রান্তিকর তথ্য দেবেন না। দুধ নিয়ে কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করবেন না।

বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ডায়েরিয়াল ডিজিস রিসার্চ, বাংলাদেশ’র (আইসিডিডিআরবি) গবেষণা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই গবেষণায় বলা হয়, বাজারে থাকা ৭৫ শতাংশই পাস্তুরিত দুধে ভেজাল ধরা পড়ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি। এই প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ। এই রিট আবেদনে গতবছর ২১ মে এক আদেশে বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে বাজারে থাকা পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে খাদ্য ও স্বাস্থ্য সচিব এবং বিএসটিআই’র মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এই নির্দেশের পর গত ২৫ জুন বিএসটিআই’র আইনজীবী আদালতে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। কিন্তু কোনো শুনানির আগেই সেদিন তিনি গণমাধ্যমকে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, চৌদ্দটি কম্পানির পাস্তরিত দুধে আশঙ্কাজনক বা ক্ষতিকর কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। এই প্রতিবেদনে আদালত সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

একইদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদ ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার এক সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে যে, বাজারে চলমান সাতটি পাস্তুরিত ও তিনটি অপাস্তুরিত দুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ১০টি নমুনাই বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। পাস্তুরিত দুধের সাতটি নমুনার কোনোটিতেই কাঙ্ক্ষিত মাত্রার ‘সলিড নট ফ্যাট’ পাওয়া যায়নি।

বিএসটিআই স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী দুধে ‘ফ্যাট ইন মিল্ক’ ৩.৫ শতাংশ থাকার কথা থাকলেও এগুলোতে আছে ৩.৬ থেকে ৩.৬১ শতাংশ। এসব দুধে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। পাস্তুরিত দুধের সব কটিতে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক লেভোফ্লক্সাসিন, সিপ্রোফ্লক্সাসিন ও এজিথ্রোমাইসিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া রয়েছে ফরমালিন ও ডিটারজেন্টের উপস্থিতি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here