বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু দুপুরে

0
285

খবর৭১ঃদুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আজ রোববার দুপুরে চিকিৎসা শুরু হবে।

বেলা ১টায় মেডিকেল বোর্ডের সব সদস্য আলোচনার মাধ্যমে তার চিকিৎসা শুরু করবেন।

এর আগে শনিবার তাকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে এ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বেলা ৩টা ১১ মিনিটে খালেদা জিয়াকে বহনকারী গাড়িবহর কারাগার থেকে রওনা হয়। বিকাল ৩টা ৪১ মিনিটে হাসপাতালের গেটে পৌঁছে।

বিএসএমএমইউতে ভর্তির পর মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা নেন।

খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউতে ভর্তির পর বিকাল পৌনে ৫টায় সি-ব্লকের কনফারেন্স রুমে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড রোববার (আজ) বৈঠকে বসবে। খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের ষষ্ঠ তলায় অবস্থান করছেন।

তার চিকিৎসার বিষয়ে আদালত থেকে একটি আদেশ জারি করা হয়েছিল। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছি। খালেদা জিয়া আসার পর বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. এমএ জলিল চৌধুরী তার সঙ্গে দেখা করেন।

চিকিৎসা শুরুর আগে যেসব ফরমালিটিজ করা প্রয়োজন, সেগুলো করা হয়েছে। রোববার বেলা ১টার পর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ডের সভা হবে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা শুরু করতে পারব।’

তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশনানুযায়ী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তিন সদস্য পরিবর্তন করা হয়েছে।

নতুন যাদের বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন- প্রখ্যাত রিউমাটোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, কার্ডিওলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি এবং অর্থোপেডিক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নকুল কুমার দত্ত। এ ছাড়া আগের বোর্ডের প্রধান ইন্টারনাল মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. আবদুল জলিল চৌধুরী এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. বদরুন্নেসা আহমেদ বোর্ডে রয়েছেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, কুশলবিনিময় করেছেন। উপাচার্য মহোদয়ও তাকে দেখতে গিয়েছিলেন, তার সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন।’ তার নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রিগেডিয়ার হারুন বলেন, জেলকোড অনুযায়ী তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়াকে ভর্তি করায় তার ‘পেশেন্ট রাইটস বা রোগীর অধিকার হরণ’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন।

তিনি বলেন, যে কোনো রোগীর নিজের পছন্দমতো চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেয়ার অধিকার রয়েছে। নিজের ইচ্ছামতো হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়াকে তার নিজের পছন্দের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে দেয়া হচ্ছে না। এটি রোগীর অধিকার হরণ।

অধ্যাপক জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে, সেখানে আদালতের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে। কারণ বোর্ডের তিন সদস্য স্বাচিপের আজীবন সদস্য। অথচ আদালত অরাজনৈতিক চিকিৎসকদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, বোর্ডে একজন চিকিৎসক আছেন, যিনি এর আগে বিএনপি মহাসচিবের বিষয়ে আদালতে ‘রং স্টেটমেন্ট’ দিয়েছিলেন। বিএনপি মহাসচিবের হার্টে রিং পরানো আছে, ঘাড়ে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। যার শরীরে স্বাভাবিকভাবে রক্ত চলাচল হয় না, এমন ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা নিয়ে ওই চিকিৎসক স্টেটমেন্টে লিখেছিলেন- ‘সুস্থ ও স্বাভাবিক’।

পরে এ নিয়ে আপিল করা হলে তাকে পরিবর্তন করা হয়। এমনকি সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহাকে অসুস্থ বানিয়ে বিদেশে পাঠানোর পেছনেও এই চিকিৎসকের হাত রয়েছে। তার অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কতটা নিরাপদ সেটি ভাববার বিষয়।

ডা. জাহিদ বলেন, খালেদা জিয়ার দুই পায়ের নি রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে। তার চোখে অস্ত্রোপচার হয়েছে। এগুলো সবারই জানা। বিএসএমএমইউতে নি রিপ্লেসমেন্ট চিকিৎসা শুরু হয়েছে কয়েকদিন হল। তাই আমাদের দাবি ছিল- একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে যেন তার চিকিৎসা হয়। আদালতের নিদের্শনা অনুযায়ী খালেদা জিয়ার পছন্দের চিকিৎসকদের দিয়ে তার চিকিৎসা করানোর কথা। অথচ আমরা যারা তার দীর্ঘদিনের চিকিৎসক, আমাদের তার কাছে যেতে দেয়া হয়নি। তিনি বলেন, তার মতো একজন রোগীর চিকিৎসার বিষয়টি যেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকে।

প্রসঙ্গত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডাদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এর পর থেকে খালেদা জিয়া নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। ওই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পাঁচ মাসের মাথায় ১২ জুলাই আপিলের শুনানি শুরু হয়।

এদিকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একটি বিশেষ বোর্ড গঠন করার নির্দেশনাসহ তার চিকিৎসাসেবা সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র দাখিলের নির্দেশনা চেয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর একটি রিট করা হয়। ওই আবেদনের ওপরই বৃহস্পতিবার আদালত চিকিৎসার আদেশ দেন। এর মধ্যে আবার গত ১৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে।

পর দিন ১৬ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন কারাপ্রধানের কাছে জমা দেয়া হয়। যেখানে স্বাস্থ্যগত পরিস্থিতি বিবেচনায় খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়ার জন্য মত দেয় মেডিকেল বোর্ড। তবে যে হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা রয়েছে, সে হাসপাতালের কথা সুপারিশ করা হয়। সে বিবেচনায় বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কথাই উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

গত বৃহস্পতিবার হাইকোটের দেয়া নির্দেশনানুযায়ী, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক আবদুল জলিল চৌধুরী ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বদরুন্নেসা আহমেদ এ বোর্ডে থাকবেন।

অন্যদিকে কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হারিসুল হক, অর্থোপেডিক বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর চৌধুরী এবং চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তারেক রেজা আলীর পরিবর্তে তিনজন নতুন চিকিৎসক মনোনীত করে দেবে সরকার।

নতুন এ তিনজনের কেউ কেন্দ্রীয় বা জেলা পর্যায়ে সরকার সমর্থক স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) বা বিএনপি সমর্থক ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) বর্তমান বা সাবেক সদস্য কিংবা সমর্থক হতে পারবেন না।

এর আগে চলতি বছরের ৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়েছিল। সেই সময় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে ফের জেলাখানায় পাঠানো হয়।

ওই ঘটনার ছয় মাস পর শনিবার চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে ভর্তি হল। উচ্চ আদালতের নির্দেশে শনিবার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here