বিএনপি-জামায়াত থেকে মুখ ফিরিয়েছে জনগণঃ প্রধানমন্ত্রী

0
417

খবর ৭১ঃ সীমাহীন দুর্নীতি ও অপশাসনের কারণে বিএনপি-জামায়াত থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার জার্মানির মিউনিখে এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় থাকতে যে দুর্নীতি করেছে, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজা পেয়েছে, এতিমের অর্থ আত্মসাতের সাজা পেয়েছে তাই জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ’

‘অগ্নিসন্ত্রাস, সাজাপ্রাপ্তদের নেতৃত্ব এবং জামায়াতকে ধানের শীষ মার্কা দিয়ে প্রার্থী করায় জনগণ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।তাদের ভোট দেয়নি।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং তার ছেলে তারেক রহমানের দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া এবং বিএনপি শাসনামলে দেশের দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদের বিস্তারের কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর দীর্ঘদিন যারা ক্ষমতায় ছিল তারা দেশকে কিছুই দিতে পারেনি। বরং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অকথ্য অত্যাচার নির্যাতন করেছে। সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার এবং সৈনিকদের হত্যা করেছে।’

এবারের নির্বাচন শান্তিরপূর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ার তথ্য তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। একাদশ সংসদ নির্বাচন, তাতে বিএনপির ভারাডুবি এবং দেশের উন্নয়নসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে একেবারে গ্রাম থেকে শুরু করে শহরে, সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ভোট দিয়েছে। এমনকি ব্যবসায়ীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসে তারা আমাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে যেটা অতীতে কখনো হয়নি।’

স্বাধীনতা সংগ্রামের মত ভাষা আন্দোলন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে ইতিহাস থেকে ‘সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা হয়েছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য কি জানেন, ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে যেমন খুব চালাকির সাথে মুছে ফেলা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে স্বাধীনতা অর্জনে তার যে অবদান সেটাও কিন্তু একসময় মুছে ফেলা হয়েছিল।

‘এমনকি বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়াটাও যেন একটা অপরাধ- এরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল ১৯৭৫ এর ১৫ অগাস্টের পর।’

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, তখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র।

‘আমাদের ভাষা আন্দোলনে, রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা অর্জনের ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে অবদান রয়েছে সে অবদানের কথা সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলা হয়েছে।’

প্রবাসীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের যতটুকু অর্জন তার পেছনে প্রবাসীদের বিরাট অবদান রয়েছে। এ অবদান শুধু রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেই না, এ অবদান অর্থনৈতিক উন্নয়নেরও ক্ষেত্রেও।’

বর্তমান সরকার দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগদান করতে তিন দিনের সরকারি সফরে জার্মানির মিউনিখে পৌঁছেন। টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তার প্রথম বিদেশ সফর।

তার প্রথম বিদেশ সফরে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী তাকে জার্মানির মিউনিখ শহরে নাগরিক সংবর্ধনা দেয়।

এর আগে মিউনিখ বিমান বন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদ। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফর সঙ্গীদের নিয়ে মিউনিখের শেরাটন আরাবেলা হোটেলে যান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শেরাটন হোটেলের বলরুম মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দিতে বুধবার থেকেই ইউরোপের নানা দেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা মিউনিখে এসে পৌঁছান।

জার্মানিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ইমতিয়াজ আহমেদের পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রীর নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ইউরোপীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্রী অনীল দাশ গুপ্ত, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ।

২০১৭ সালে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ দিয়েছিলেন। এবারের সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নিরাপত্তা হুমকি ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে দুটি সেশনে প্রধানমন্ত্রীকে আলোচনার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন।

শুক্রবার মিউনিখের ব্যাভেরিয়া হোফ হোটেলে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের বর্তমান সভাপতি ভলফগ্যাং ইসিঙ্গার জানিয়েছেন, ১৫ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি এবারের ৫৫তম সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় ৪০ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং ১০০ জন মন্ত্রীসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।

রবিবার সকালে আবুধাবির উদ্দেশে মিউনিখ ত্যাগ করবেন প্রধানমন্ত্রী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here