খবর৭১: বর্তমান সরকারের সময় ব্যাংকিং খাত থেকে দুই লাখ কোটি টাকা লুটপাটের যে অভিযোগ করেছে বিএনপি তার সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ চেয়েছে ক্ষমতাসীনদল আওয়ামী লীগ।
শনিবার (১২ মে) ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন। তথ্য দিতে না পারলে বিএনপিকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপির শাসনামলে ব্যাংকের টাকা চুরির সংস্কৃতি শুরু হয়। শুরু হয় ঋণ খেলাপী সংস্কৃতি। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বিচারাধীন ৩২টি পাচার মামলার বেশির ভাগই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। এখানে যেসব উল্লেখযোগ্য নেতা রয়েছেন তাদের মধ্যে তারেক জিয়া, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, মোর্শেদ খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দুদক কর্তৃক দায়েকৃত বিদেশে অর্থপাচার ও মানিলন্ডারিং মামলা চলমান রয়েছে এবং লুৎফজ্জামান বাবর, আলী আসগর লবী, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ ও তার স্ত্রীসহ অনেক বিএনপি নেতাদের বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।’
রাজ্জাক বলেন, “দুই লাখ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, এই তথ্যের উৎস দিতে হবে। এর সঙ্গে কারা জড়িত সে তথ্যও দিতে হবে। ঢালাওভাবে বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা। ‘সম্পূর্ণ মিথ্যচারের মাধ্যমে খালেদা জিয়া জেলে’ এইগুলো থেকে জাতির দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা।”
সরকারি ব্যাংকের ২৫ শতাংশ ঋণ ২০/২২ জন লোকের কাছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটাও সত্য নয়। তারা আমাদের সময়ে ঋণ নেয়নি। ২০/২৫ জনের কথার তথ্যও সঠিক নয়। যে তথ্য আছে তারা দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যবসায়-শিল্পের সঙ্গে জড়িত। শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত। গণতান্ত্রিক অর্থনীতিতে কিছুটা মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে যায়-এটা অস্বীকার করা যাবে না।’
বর্তমান সরকারের সময়ে সংঘঠিত দুর্নীতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘দুর্নীতি অভিযোগ আনা আর প্রমাণিত হওয়া। যেগুলো দুদকে রয়েছে, সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ পর্যন্ত দুদকে হাজিরা দিয়েছেন। আইন, বিচারবিভাগ এবং দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমরা এটুকু বলতে পারি, সরকার বা দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কেউ যদি দুর্নীতি পরায়ণ প্রমাণীত হয়-সে মনোনয়ন পাবে না, দল থেকে বহিস্কার হতে পারে। সে বিষয়ে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খেলাপী ঋণের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে দাবি করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০০৬ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা এবং এ সময় খেলাপী ঋণের বা শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১৭ সালে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে খেলাপী বা শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। যেখানে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪২২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বাড়ার কথা থাকলেও এর পরিমাণ ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে যা এই সেক্টরের উন্নয়নকেই নির্দেশ করে।’
আওয়ামী লীগের এই নেতার দেওয়া তথ্য মতে, ‘২০০৬-০৭ সালে জিডিপি’র পরিমাণ ছিল ৪,৭২,৪৭৭ কোটি টাকা এবং এসময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১,৫২,৮৫৮ কোটি টাকা যা জিডিপি’র ৩২% এবং শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমান ছিল জিডিপি’র ৪.৩৪%। অপরদিকে ২০১৭-১৮ সালে জিডিপি’র পরিমাণ ছিল ২২,৩৮,৪৯৮ কোটি টাকা এবং এসময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭,৯৮,১৯৬ কোটি টাকা যা জিডিপি’র ৩৫.৬৬% এবং খেলাপী বা শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপি’র ৩.৩২%।’
অভিযোগ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৪-২০১৫ সালের বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না হলে এর পরিমাণ আরও অনেক কম হতো। এছাড়া দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও বৃদ্ধি পেতো। এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল তার রেশ শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, মো. আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, নির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।
খবর৭১/এস: