বাসের ধাক্কায় গার্মেন্টস শ্রমিক নিহতের ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের দফায় দফায় মিছিল , বাস চলাচল বন্ধ

0
460

খবর৭১ :চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : যশোরের চৌগাছায় গত ২৬ জুন বাস চাপায় আহত গার্মেন্টস শ্রমিক অহেদুজ্জামান টনির (৩২) মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তাল গোটা উপজেলা সদর। তার সহকর্মীরা কাজ বন্ধ করে সড়কে নেমে আসে। তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তাদের সাত দফা দাবিতে চৌগাছা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির অফিস ভাঙচুর করার পাশাপাশি দুইটি বাস ভাঙচুর করে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শ্রমিকদের বিক্ষোভের কারনে বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একপর্যায় চৌগাছা থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়। পরে বেলা ১ টার দিকে বাস মালিক-শ্রমিক, গ্রার্মেন্টস শ্রমিক ও থানা পুলিশের মধ্যে চর্তুপক্ষিয় সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সমঝোতা বৈঠকে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দাবি নিয়ে আলোচনা শেষে বাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হলে বিক্ষুব্ধ গার্মেন্টস শ্রমিকরা শান্ত হয়। বৈঠক ফলপ্রসূ হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ২৬ জুন মঙ্গলবার দুপুরে চৌগাছা-যশোর সড়কের তানজিলা ব্রিকসের সামনে একটি যাত্রিবাহী বাস (যশোর-জ-০৪-০০৩৬) গামেন্টর্স শ্রমিক অহেদুজ্জামান টনিকে চাপা দিলে সে মারাত্মক আহত হয়। রাজধানী ঢাকা আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকাল তিনটায় তার মৃত্যু হয়। টনির মৃত্যুর খবর চৌগাছায় পৌছালে তার সহকর্মীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। শনিবার সকাল নয়টায় চৌগাছা কামিল মাদ্রাসা মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে জানাজায় চৌগাছার রাজনৈতিক সামাজিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি ডিভাইন গ্রুুুপের দুটি ফ্যাক্টরির শত শত শ্রমিক অংশ নেন। জানাজা শেষে চৌগাছা পৌর কবরস্থানে নিহত টনিকে দাফন সম্পন্ন করেই সহকর্মীরা ফ্যাক্টরির সামনের সড়কে গাছ ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায় তারা আরও সঙ্গবদ্ধ হয়ে উপজেলা সদরের দিকে রওনা হয়। বিক্ষোভ মিছিল থেকে বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়। এসময় সড়কের পাশে রাখা দুটি বাসও ভাংচুর করেন বলে মালিক সমিতির নেতারা দাবি করেছেন। এরপর তারা চৌগাছা মেইন বাসস্টান্ডে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। মুহুর্তের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় চৌগাছার সকল রুটে যান চলাচল। খবর পেয়ে চৌগাছা থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিক্ষুব্ধ গার্মেন্টস শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। দীর্ঘক্ষণ চেষ্টার পর গার্মেন্টস কর্মকর্তা-শ্রমিকরা সমঝোতা বৈঠকে বসতে রাজি হয়। পরে উভয় পক্ষ থানায় সমঝোতা বৈঠকে একত্রিত হন।
বৈঠকে গামেন্টর্স শ্রমিকরা ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলি হলো রাজপথেই তাদের দাবির সমাধান করতে হবে, সড়কে ফিটনেস বিহিন গাড়ি চালানো যাবে না, মালিক-শ্রমিক পক্ষকে অবরোধের স্থানে এসে সমস্যার সমাধান করতে হবে, মালিক সমিতিকে চৌগাছা-যশোর রুটের গাড়ির টাইমিং স্থল কয়ারপাড়ায় করতে হবে, অদক্ষ চালক-সহকারিকে দিয়ে গাড়ি চালানো যাবে না, স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল ও গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির সামনে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে গাড়ি চালাতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ শ্রমিক পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেখানে সকল পক্ষের সম্মতিতে পরবর্তীতে গামেন্টর্স শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নেয়। সমঝোতা বৈঠক সফল হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান। একাধিক সূত্র জানান, সড়ক দূর্ঘটনার দিনই বাসটিকে থানা পুলিশ দূর্ঘনটাস্থল থেকে থানায় নেয়। সেখান থেকে  বাসটিকে মালিকের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এটিই শ্রমিকদের বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ। গামেন্টর্স শ্রমিকরা বলেন, বাসের নির্ধারিত সময়ের কথা বলে বাস মালিক শ্রমিকরা যশোর থেকে ছেড়ে আসার পর সড়কে ধীর গতীতে চলে। কয়ারপাড়া বাজার পার হয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠে চালক। যার ফলে প্রতি নিয়ত সড়কে দূর্ঘটনা লেগেই আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চৌগাছার একজন বাস মালিক জানান, তানজিলা ব্রিকসটি শহরের মধ্যে চৌগাছা-যশোর সড়কে অবস্থিত। এই ভাটাটির মালিকপক্ষ দিনে-রাতে ভাটায় মাটি নেয়ার সময়ে চৌগাছা হাসপাতাল থেকে কয়ারপাড়া পর্যন্ত সড়কে মাটি জমে থাকে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এই মাটি ও পানিতে সড়ক খুবই পিচ্ছিল হয়ে থাকে। এ কারনে ওই সড়কে দূর্ঘটনা এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে তারা কিছু দাবি দাওয়া রেখেছেন। আমরা আজ রবিবার সমিতির সাধারণ সভা ডেকে সেখানে এ বিষয়ে এবং সমিতির অফিস ও গাড়ি ভাঙচুরের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here