বাবাকে গলাটিপে হত্যা করে ঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখে ছেলে!

0
412

খবর৭১ঃনিজের বাবাকে হত্যা করে রান্নাঘরের মেঝেতে পুঁতে রাখে ছেলে। ৩ মাস আগে স্ত্রী ও সন্তান যুক্তি করে সানাউল্লা বিশ্বাস ওরফে সানাইকে গলাটিপে হত্যা করে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রান্নাঘরের মেঝে খুঁড়ে সেই লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়ার থোকসা থানা পুলিশ।

ঘটনাটি উপজেলার বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছেলে পুলিশের কাছে বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে।

হত্যায় জড়িত নিহতের স্ত্রী রানী খাতুনসহ অন্যরা আত্মগোপন করেছেন। নিহত সানাউল্লা ওরফে সানাই মৃত আফসার বিশ্বাসের ছেলে।

উপজেলা বেতাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক সদস্য ও নিহতের ভাই আব্দুল বারিক জানান, সানাউল্লা কখনো ফেরিওয়ালা কখনো দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। ফেরিওয়ালার কাজে বাড়ি থেকে বের হয়ে এক থেকে দেড় মাস বাইরে থাকতেন।

তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ করে তার ছোট ভাই সানাউল্লা বিশ্বাস নিখোঁজ হন। কয়েক দিন পর তার স্ত্রী রানী খাতুন দুই মেয়ে সনিয়া ও তানিয়াকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। নিহতের একমাত্র ছেলে রানা বিশ্বাস উপজেলার ভবনীপুড়েরর বাড়িতে থেকে যান। ভাইয়ের সন্ধানে বারিক নিজে কয়েক দফায় রানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েকদিন আগে বাড়িতে তালা লাগিয়ে রাতের আঁধারে রানা পাশের গ্রাম মুকশিদপুরে (শ্বশুরবাড়ি) আত্মগোপন করেন। এতে বারিকের সন্দেহ ঘনিভূত হলে তিনি নিজে খোকসা থানায় ৩০ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ করেন।

অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহতের ছেলে আত্মগোপনে থাকা রানাকে স্থানীয়রা আটক করে। তখন রানা তার বাবাকে হত্যার কথা স্বীকার করলে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ছেলের স্বীকারোক্তিতে রাতেই নিহতের বাড়ির রান্নাঘরের মেঝে খুঁড়ে সানাউল্লার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহতের ভাই আব্দুল বারিক জানান, সানাউল্লা তার বড় মেয়ে সোনিয়াকে কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের দুই মাসের মাথায় তার সংসার ভেঙে যায়। সেখান থেকে দেনমোহরের ৭২ হাজার টাকা নিয়ে সোনিয়াকে ছাড়িয়ে আনা হয়। এরপর কুষ্টিয়াতে নতুন করে বিয়ে দেয়া হলে সেখানেও সংসার টিকে না। সেখান থেকেও বাবার বাড়ি ফিরে আসার সময় দেনমোহরের ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে আসেন সোনিয়া। সেই টাকাগুলো সোনিয়ার খালুর কাছে রাখা হয়।

তিনি আরও জানান, কিছুদিন পর ওই টাকা সোনিয়া ও তার মায়ের কাছে দিয়ে দেন ওই আত্মীয়। ওই টাকা নিয়ে পরিবারিক বিরোধের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে স্ত্রী-সন্তানরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে রান্নাঘরের মেঝেতে পুঁতে রেখেছিল।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নূরানী ফেরদৌস বলেন, সানাউল্লা সঙ্গে পরিবারের সবার অশান্তি চলছিল। এ অবস্থায় বাবার সঙ্গে ঝগড়া শুরু হলে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে ছেলে রানা বাবাকে ধাক্কা দেন। ওই সময় বাবা খাটের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাত পান। এরপর রানা বাবার গলাটিপে হত্যা করেন। লাশ লুকিয়ে রাখতে বাড়ির রান্নাঘরের মেঝেতে প্রায় চার ফুট গর্ত খুঁড়ে সেখানে চাপা দিয়ে রাখেন। পুলিশ রানাকে গত বৃহস্পতিবার বিকালে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে বাবাকে হত্যার পর লাশ মাটিচাপা দেয়ার কথা স্বীকার করেন রানা।

খোকসা থানার ওসি এবিএম মেহেদী মাসুদ জানান, নিহত সানাউল্লা ওরফে সানাইয়ের ভাইয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিখোঁজের ছেলে রানা বিশ্বাসকে আটক করে পুলিশ। ছেলের রানার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের রান্নাঘরের মেঝে থেকে সালাউল্লার লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহতের ভাইয়ের দেয়া অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেয়া হয়েছে। এটি একটি চাঞ্চল্যকর মামলা বলেও জানান ওসি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here