বানিয়াচং আজমীরিগঞ্জ আ.লীগের ঘাঁটিতে চমক দেখাতে চায বিএনপি

0
479

মঈনুল হাসান রতন, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ঃ হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং আজমীরিগঞ্জ স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকই বিজয়ী হয়েছে। এ বিজয় ধরে রাখতে চায় নৌকার প্রার্থীরা। তবে ইসলামি দলগুলো নিয়ে আওয়ামী লীগের এ ঘাঁটিতে চমক দেখাতে মরিয়া বিএনপি। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বানিয়াচং উপজেলায় আলেম-ওলামাদের বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে। যাদের মধ্যে জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, তৌহিদী জনতার ব্যানারে আলেম-ওলামাগণ এলাকায় কাজ করেন। আবার ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক দল খেলাফত মজলিশের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা রয়েছেন এখানে। এসব কারণে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করেন জোটের প্রার্থী যেই আসেন এবার নিশ্চিত বিজয় তাদের। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান এলাকার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন। জেলার রাজনীতির পাশাপাশি নিজের নির্বাচনী এলাকায় তার অবদান স্বীকার করেন ভোটাররা। অবহেলিত জনপদে আশার আলো দেখিয়েছেন তিনি।একাদশ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন নিয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। তারপরও আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন প্রশ্নে তাকে ছাড় দিতে নারাজ বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ড. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ময়েজউদ্দিন শরীফ রুয়েল। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব ইকবাল খান চৌধুরী চমক দেখাতে পারেন। শোনা যাচ্ছে কোন্দল নিরসনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। কারন তিনি সরকারে বিভিন্ন দপ্তরে দায়িত্ব পালনকালে জেলাসহ বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ দুই উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দির, শ্বশ্মান, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট উন্নয়নে ভূমিকা রেখে এলাকায় ব্যাপক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। সাধারণ মানুষেরও ধারনা এ আসনে তাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। এদিকে ব্যারিস্টার এনামুল হক হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন। তিনি সংবাদ সম্মেলন করে প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আহমদ আলী মুকিব দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় দুজনেরই রয়েছে পরিচ্ছন্ন ইমেজ। রাজনীতির মাঠে সরব ডা. জীবন। ২০০৮ সাল থেকে এলাকায় সক্রিয়। ব্যক্তি ও পারিবারিক ইমেজ কাজে লাগিয়ে চমক দেখাতে পারেন। ডা. জীবন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শঙ্কা রয়েছে। তৃণমূলের মানুষ স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ। দেশের মানুষ ভোটারবিহীন একদলীয় নির্বাচনের কলঙ্ক দেখতে চায় না। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে হাইকমান্ডের ওপর আস্থাশীল তিনি। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থী অবশ্যই বিজয়ী হবে। জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিবের প্রার্থিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন।আহমেদ আলী মুকিব বলেন, বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জে হাওর থাকায় এলাকাটি খুবই অবহেলিত। স্বাধীনতার পর উন্নয়ন হয়নি। তাই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। দলের চেয়ারপারসন যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবো। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত গোপাল কৃষ্ণ এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) এমএ রব, ১৯৭৯ সালে বিএনপির অ্যাডভোকেট জনাব আলী বিজয়ী হন। ১৯৮৬ ও ’৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বিজয়ী হন সিরাজুল ইসলাম খান। ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদ। তার মৃত্যুতে ১৯৯৭ সালের উপনির্বাচনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শিল্পপতি নাজমুল হাসান জাহেদ। হবিগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শংকর পালও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগ্রহী। তিনি জোটগত সিদ্ধান্তের প্রতীক্ষায়। আওয়ামী লীগের নিশ্চিত আসন হিসেবে পরিচিত ওই নির্বাচনী এলাকায় বিগত ৭টি জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here