বাজেট হচ্ছে দেশি সম্পদনির্ভর

0
302

খবর৭১: স্বাধীনতার পর দেশের বাজেট প্রণয়ন হতো বৈদেশিক অনুদাননির্ভরতায়। দেশি সম্পদের জোগানের হার ছিল খুবই কম। গত ৪৬ বছরে বাজেট প্রণয়নে দেশীয় সম্পদের জোগান বেড়েছে, কমেছে বিদেশি অনুদানের হার। ক্রমেই দেশ স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাওয়ায় বাজেটে দেশি সম্পদের জোগান বেড়েছে।

স্বাধীনতার পর মোট বাজেটের বড় অংশই ছিল বিদেশি অনুদাননির্ভর। ধীরে ধীরে এই হার কমতে থাকে; বাড়তে থাকে দেশি সম্পদের জোগান। আশির দশকে এসে উন্নয়নের বাজেটের প্রায় পুরোটাই হতো বিদেশি অনুদানের ওপর ভিত্তি করে। এখন সেখানে অভ্যন্তরীণ সম্পদের জোগান বেড়েছে। এখন মোট বাজেটে ২ থেকে ৩ শতাংশ থাকে বৈদেশিক অনুদানের অংশ। এর পুরোটাই থাকে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে। বাকি ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশ আসে দেশি সম্পদ। রাজস্ব বাজেটে কোনো বৈদেশিক সহায়তা থাকে না।

আশির দশকের দিকে প্রতিবছর বাজেট করার আগে এপ্রিল বা মে মাসে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে বাংলাদেশকে নিয়ে সাহায্যদাতাগোষ্ঠীর বৈঠক হতো। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ তার চাহিদার কথা তুলে ধরত। এর বিপরীতে বিদেশিরা তাদের সহায়তার আশ্বাস দিত। এর ওপর ভিত্তি করে বাজেট প্রণয়ন করা হতো। বাজেটে বৈদেশিক সহায়তার হার কমে আসায় এখন উন্নয়ন-সহযোগীদের বৈঠক আর নিয়মিত হয় না। সরকার এই বৈঠক অনুষ্ঠানের প্রয়োজন মনে করে না।

আগে বাজেটের দেশি সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যেত আমদানি শুল্ক থেকে। আয়করসহ অন্যান্য খাত থেকে রাজস্ব পাওয়া যেত খুবই কম। স্বাধীনতার পর থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়তে শুরু করেছে। বেড়েছে অর্থনৈতিক কর্মকা-। ফলে বাজেটের অভ্যন্তরীণ সম্পদের বড় অংশের জোগানই আসছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব খাত থেকে। এর মধ্যে মোট রাজস্বের ৮৫ শতাংশেরই জোগান আসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে। বাকি ১৫ শতাংশ আসে এনবিআর-বহির্ভূত খাত থেকে।

নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ায় বৈদেশিক খাতেও সরকার নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভর করতে পারছে। সে কারণে এখন পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প দেশীয় অর্থায়নে করার মতো সাহস দেখাচ্ছে সরকার।

আগে মানুষের মধ্যে করভীতি ছিল ব্যাপক। ওই খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। ফলে দিন দিন বাড়ছে করদাতার সংখ্যা। একই সঙ্গে বাড়ছে আয়কর আদায়ের পরিমাণও। কমে আসছে আমদানি শুল্কে নির্ভরতা। ৯০ দশকে রাজস্ব আদায় আমদানিনির্ভরতার পরিবর্তে মূল্যসংযোজন কর বা ভ্যাটনির্ভরতার দিকে যায়। এর মধ্যে আয়করনির্ভরতাও বাড়ছে। সরকার রাজস্ব পদ্ধতিকে আয়করনির্ভর করতে চাচ্ছে।

১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে আয়কর আহরণের পরিমাণ ছিল ১০ কোটি ৩৬ লাখ। চলতি অর্থবছরে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। যদিও নতুন আয়কর আইন বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে শীর্ষ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় মূসককে; কিন্তু ২ বছরের জন্য নতুন মূসক আইন স্থগিত হওয়ায় তা সংশোধন করা হবে। ফলে এখন পর্যন্ত শীর্ষে থাকছে আয়করই। যদিও আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ফের মূসকই চলে আসবে শীর্ষে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশ এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে দেশের রাজস্ব আহরণের চিত্রও। দেশ যত এগোবে, মানুষের আয় যত বাড়বে, ততই আয়কর আদায় বাড়বে।

১৯৯১-৯২ অর্থবছরে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান প্রথমবারের মতো দেশে মূসক আইন চালু করেন। তখন থেকে রাজস্ব আদায়ের ধরনে পরিবর্তন আসে। পরবর্তী সময়ে বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশে রাজস্ব আদায়ের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন আসতে শুরু করে।

১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে প্রথম বাজেট দেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। আলোচ্য অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ছিল আমদানি শুল্কের লক্ষ্যমাত্রা এবং আবগারি শুল্ক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে ঠিক ৪৩ বছর পর আয়করই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার শীর্ষে উঠে আছে। অর্থাৎ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৬৫ হাজার ৯৩২ কোটি, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) খাতে ৬৩ হাজার ৯০২ কোটি এবং শুল্ক থেকে ৪৬ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের মধ্যে আয়কর আদায়ের লক্ষ্য ৮৫ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা, মূসক ৯১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা এবং বাকি শুল্ককর।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, গত সাত-আট বছরের তুলনায় কর প্রশাসনে গুণগত পরিবর্তন এসেছে। ফলে কর আদায় বাড়ছে।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, কর প্রশাসনে ব্যাপক জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে কর অঞ্চল। কর প্রশাসনকেও ধীরে ধীরে অটোমেশনের আওতায় আনা হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনভিত্তিক করা হচ্ছে। নতুন করে ১২ ডিজিটের ই-টিআইএন পদ্ধতি চালু হয়েছে। করদাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে এটি করা হচ্ছে। করদাতাদের ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হচ্ছে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here