এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট অফিস : দেশের বৃহত্তর জনগোষ্টি গ্রামে বসবাস করে । ফলে এই বৃহত্তর জনগোষ্টির জ্বালানি সংকট ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছে।প্রতিনিয়ত লাফিয়ে লাফিয়ে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম বাড়ছে । যার কারনে দেশের বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্টির পক্ষে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার অত্যন্ত ব্যয়বহুল।যে কারনে জনপ্রিয় হচ্ছে পরিবেশ বান্ধব বয়োগ্যাস প্লান্ট। এতে সাশ্রয় হচ্ছে জ্বালানির। গরুর গোবর দিয়ে এখন অনেকেই লাকড়ি (মুটে) তৈরি করছে না। এতে সময়ের অপচয় এবং শ্রম আনেক বেশি যায়।যে কারনে গ্রামেগঞ্জে শহরে-বন্দরে, গড়ে ওঠা হাজার হাজার মুরগির ফার্মের মুরগির বিষ্ঠা ও গরুর গোবর দিয়ে তৈরি হচ্ছে বয়োগ্যাস । জ্বালানি সংকটের যুগে এটি একটি আশার আলো।
এর কারনে যে কোনো মধ্যবিত্ত পরিবার উপার্জনের পাশাপাশি সাংসারিক জ্বালানি ব্যয় দারুন ভাবে সাশ্রয় করছে। মানুষের এক সময়ের অব্যবহৃত এসব উচ্ছিষ্ট দিয়েই এখন তৈরি হচ্ছে বয়োগ্যাস বা বিকল্প জ্বালানি।এ জ্বালানি ব্যবহার করে চিতলমারিতে একটি পরিবার প্রতি মাসে প্রায় ২-৩ হাজার টাকা সাশ্রয় করছে। ক্রমান্বয়ে এ গ্যাসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে চিতলমারিতে প্রায় ৩৫ টি বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে উঠেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং সহজ সর্তে ঋণ প্রদান করছে। এ সব দেখে অনেকেই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে এ প্লান্ট তৈরি করছে।
২০০৬ সাল থেকে সরকারি ভাবে বাংলাদেশে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি শুরু হয় । বর্তামানেদেশের বিভিন্ন উপজেলায় ১৩ সহ¯্রাধিক প্লান্ট তৈরি করেছে। প্রতিনিয়ত এর পরিমাণ বাড়ছে। চিতলমারী উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জানান যে পচনশীল যে কোন জৈব পদার্থ যেমন গরুর গোবর ও মুরগির বিষ্ঠা বায়ুশুন্য অবস্থায় রাখলে সেখান থেকে উৎপন্ন হওয়া গ্যাসই বায়োগ্যাস হিসেবে পরিচিত। এ গ্যাস জ্বালানি হিসেবে খুবই উপযোগী। এতে কোন গন্ধ নেই,ধোয়া হয় না, হাড়ি পাতিল ও রান্না ঘরে কালি পড়ে না, কেরোসিন ,কাঠ বা খড়কুটা লাগে না। ফলে জ্বালানি খরচ বেচে যায়। এছাড়া এ গ্যাস দিয়ে বাতিও জ্বালানো যায়।
সূত্র মতে, গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় চিতলমারীতে বায়োগ্যাস প্লান্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অনেক বাড়িতে গ্যাসের প্লান্ট তৈরি করে রান্নায় জ্বালানির পাশাপাশি প্রাতিবেশিদেরও লাইনের মাধ্যামে গ্যাস সরবরাহ করে বাড়তি অর্থ আয় করছে ।
এমনই একজন কলাতলা ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল বিশ্বাস। তিনি গত দুই বছর যাবৎ বায়োগ্যাস ব্যবহার করে জ্বালানি সাশ্রয় করছেন। কলাতলা ইউনিয়নের শহিদুল ইসলাম, মহেন্দ্রনাথ রায় , অনুপমা বিশ্বাস,মো: আসাদুজ্জামান , লাভলি বেগম, চিতলমারী সদর ইউনিয়নের দিপালি বিশ্বাস, হিজলা ইউনিয়নের মুনজুরুল আলম, আতিয়ার রহমান শেখ সহ আরও অনেকে এই বায়োগ্যাস ব্যবহার করে সুবিধা পাচ্ছেন বলে জানান
। এ ছাড়া খড়মখালীর বাসিন্দা জনাব কংকন মজুমদার বলেন ,মুলত তিনি নিজ বাড়ির আঙ্গীনায় গরুর খামার করেছেন ২০০৮ সাল থেকে। বর্তামানে খামারে ০৭টি গরু রয়েছে। ২০১৫ সালের দিকে তিনি প্রথম বায়োগ্যাসের কথা জানতে পারেন। তখন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর মাধ্যমে নিজ বাড়িতে বায়োগ্যাস প্লান্ট নির্মাণ করেন । ১০৫(ঘনফুট) সাইজের এ প্লান্টের নির্মাণ ব্যয় হয়েছে মোট ৩০ হাজার টাকা ।যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর এর মাধ্যমে তিনি সহজ শর্তে ঋণ নিয়ে কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধ করছেন এবং অফিস থেকে ৫০০০ হাজার টাকা ভর্তুকি পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন ।তিনি আরও বলেন ,বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে তিনি বর্তমানে ০২টি চুলা জ্বালাতে পারছেন । বাড়ীর যাবতীয় রান্না এবং গরুর খাদ্য জ্বালানির কাজও এই গ্যাসে চলছে । ফলে প্রতি মাসে তার ০৩টি গ্যাস সিলিন্ডার কেনার অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।
এছাড়া গ্যাস উৎপাদনের পর থাকা বর্জ্য সার (বায়োগ্যাস রেসিডিউ )কৃষি জমিতে ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছেন । এভাবে মাসে তার ৬ হাজার টাকা সাশ্রয় হচেছ ।
খবর ৭১/ ই: