বাগেরহাটে বোরো ধানের বাম্পার ফলন বিক্রি নিয়ে হতাশ কৃষক

0
280

এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট অফিস:যতদূর চোখ যায় শুধু সোনালি ধানের শীষ। মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে আধা পাকা ধানের শীষের সমারোহ। কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলার স্বপ্নে এখন বিভোর কৃষক। বাগেরহাটের ৯ উপজেলার বোরো ধানের হয়েছে বাম্পার ফলন। শুরু হয়েছে ধান কাটার উৎসব।কিন্তু ধান বিক্রি নিয়ে হতাশ কৃষকরা। একদিকে শ্রমিক সংকট অপরদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় থেমে নেই তাদের কর্মযজ্ঞ। দিনরাত পরিশ্রম করে ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।বাগেরহাটের ৯ উপজেলায় এবছর নতুন জাতের বিনাধান-১৪ পরীক্ষামূলক চাষে ফলন হয়েছে ব্যাপক।
বাজারে চালের উচ্চ মূল্যই কৃষকদের বোরো আবাদে আকৃষ্ট করেছে। গত দুই মৌসুমেই ধানের দাম বেশি থাকায় তারা এবার কোন জমিই পতিত রাখেনি। কারণ আলুর চেয়ে এখন ধান বেশ লাভজনক। তাছাড়া কৃষকরা সঠিক সময়ে জমিতে সেচ দিতে পেরেছে। সার ব্যবস্থাপনাও ছিল পর্যাপ্ত। জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ ছিল না বললেই চলে।
কর্মকর্তারা আরো বলছেন, গত বছর বন্যার পর ফসলের মাঠ যেমন উর্বর হয়েছে, তেমনি এবার আবহাওয়াও ছিল বোরো চাষের জন্য অনুকূল। সেই সঙ্গে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল। পাশাপাশি ছয় লাখ কৃষককে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। যার ফলে এবার শুধু বোরো আবাদই বাড়েনি, ফলনও খুব ভাল হয়েছে। এখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে কৃষক বোরোর এই বাম্পার ফলন ঘরে তুলতে সক্ষম হবে।
এখন চলছে চলছে ধান কাটার উৎসব। শুধু ব্রি-২৮ নয়, এখন ব্রি-২৯ ধানও কাটা শুরু হয়ে গেছে। ধান কাটাকে কেন্দ্র করে কিষান-কিষানীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে গ্রামীণ জনপদ। কর্ম ব্যস্ততায় এখন বিল-মাঠে বইছে বাংলার সেই চিরাচরিত রূপ। একদিকে বাম্পার ফলন অন্যদিকে ফসল হারানোর সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাওয়ায় কৃষকরা ধান কাটা, মাড়াই-ঝাড়াই ও ধান গোলায় তোলার কাজে এতটুকু সময় নষ্ট করতে নারাজ। গত বছরের ফসল হারা কৃষকরা এখন আর পেছনে ফিরতে চায় না।
কৃষক গুরুপদ বৈরাগী, মোঃ কামরুল মুন্সী, দুলাল মন্ডল, মোঃ আনিসুর রহমান, আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘এবার যে ধান হয়েছে তা ঠিকমতো ঘরে তুলতে পারলে এবং সরকার দাম ভাল দিলে টমোটোসহ অন্যান্য ফসল বিনষ্টের দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলতে পারব। তবে এখন সামনের কয়েকটা দিন খুব গুরুত্ব¡পূর্ণ। এই সময় ঝড়, শিলাবৃষ্টির ভয় আছে। ভালোয় ভালোয় পার করতে পারলে মনে শান্তি আসবে।’
উৎপাদিত ধানের দাম নিয়েও কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ও অস্বস্তি দুই-ই দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে সরকারীভাবে প্রতিমণ ধানের দর ১০৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু চিতলমারী উপজেলায় সরকারী কোন ধান ক্রয়কেন্দ্র বা খাদ্য গুদাম না থাকায় কৃষকদের পড়তে হচ্ছে নানা বিপাকে। বস্তাভর্তি ধান গাড়িতে বয়ে নিয়ে যেতে হবে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দুরে পার্শ্ববর্তী মোল্লাহাট কিংবা কচুয়া উপজেলায়। সেখানে ন্যায্যমূল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়। রয়েছে দালালচক্র।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, নানা শঙ্কা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে এ বছর বোরো ধানের রেকর্ড বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর চিতলমারীতে চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। ৯ উপজেলার এ বছর ক্ষেতে যেমন রোগ-বালাই কম। তেমনি নেই কোনো পোকার উপদ্রব। তাই প্রতিটি ধানের ক্ষেত যেন এক নয়নাভিরাম সবুজের সমাহার। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ বছর বেরো ধানের বাম্পার ফলন হবে। আর এ ফলন ঘরে তুলতে পারলে ধান বিক্রি করে মিটবে তাদের ধারদেনা। ১০মে দুপুরে সরে জমিনে আলাপ কালে এমনটিই জানিয়েছেন এলাকার অনেক কৃষক।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ৯টি উপজেলার ইউনিয়নে মোট ব্লকের সংখ্যা ২২৫টি । এরমধ্যে বড়বাড়িয়া ব্লকে এক হাজার ৯০১ একর, হাড়িয়ারঘোপ ৯২৬ একর, মাছুয়ারকুল এক হাজার ৮৭৭ একর, কলাতলা এক হাজার ৩৫৮ একর, রহমতপুর এক হাজার ২৯৬ একর, শৈলদাহ এক হাজার ৩০৯ একর, হিজলা এক হাজার ৯৯ একর, কুড়ালতলা এক হাজার ৩৩৩ একর, শান্তিপুর এক হাজার ১৯৭ একর, শিবপুর ৬১৭ একর, বড়বাক ৬১৭ একর, চিতলমারী দুই হাজার ৭৪ একর, শ্রীরামপুর ৩ হাজার ৩০৯ একর, রায়গ্রাম ৩ হাজার ৮০৩ একর, চরবানিয়ারী ৯৮৮ একর, খড়মখালী এক হাজার ১১১ একর, চরডাকাতিয়া ৯২৬ একর, সন্তোষপুর ৭৯০ একর, দড়িউমাজুড়ি এক হাজার ২২২ একর ও কচুড়িয়া ব্লকে ৯৬৩ একর মোট ২৯ হাজার ৪৩০ একর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে ২৮ হাজার ৬৬০ একর জমিতে হাইব্রিড, উফশী ৬৫২ ও স্থানীয় জাতের ধান ১১৮ একর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।মোরেলগঞ্জ কৃষক দুলাল চাপরাশি ,হেমায়েত হোসেন বলেন, শোনা যাচ্ছে এ বছর উপজেলা পর্যায়ে ধান ক্রয় না করে জেলা পর্যায়ে একটি সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে কেনা হবে। তাছাড়া কৃষকরা ধান নিয়ে গোডাউনে গিয়ে বার বার ফেরত আসছে। খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এলাকায় গিয়ে ধানের সঠিক আদ্রতা যাচাই করলে কৃষক হয়রানি থেকে মুক্তি পাবে।.আড়–য়াবর্নী গ্রামের কৃষক রিয়াদমুন্সী, কামরুল মুন্সী, সনাতন বৈরাগী, নান্নু মিয়া, কুরমনির রোকামিয়া, শ্যাম পাড়ার আফজাল শেখ, আকবার শেখ, শ্রীরামপুরের হরেন মন্ডল, উদয়ন বালা পাটরপাড়ার রুহুল তালুকদার এবং শান্তি খালীর আউয়াল মুন্সী সহ অনেকে জানান, এ বছর চাষিরা স্বতস্ফর্ত ভাবে বোরোরচাষ করছে। তাই সারামাঠে এখন ধান আর ধান। তবে আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ বছর বেরো ধানের বাম্পার ফলন হবে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপম রায় জানান, বিগত বছর গুলোর তুলনায় ১৩৫.৮৫ একর বেশী জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান জানান, সরকারের নির্ধারিত মূল্যে যাতে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here