বাগেরহাটে পুলিশ সদস্যকে মারধরের ঘটনায় ৩ বসত বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ

0
371

বাগেরহাট প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাটের রামপালে পুলিশ কনস্টেবলকে মারধরের ঘটনার জের ধরে পুলিশের বিরুদ্ধে ৩টি বসত ঘর ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। রামপাল উপজেলার গিলাতলা বাজার সংলগ্ন ইলিয়াস আহমেদের বাড়িতে পুলিশ সদস্যরা তান্ডব চালায় বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার। ঘটনার পর থেকে বসত বাড়ি পুরুষ শুন্য হয়ে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছে ওই বাড়িতে অবস্থান করা নারী ও শিশুরা। তবে ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।
ইলিয়াস আহমেদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৩) জানান, বুধবার সন্ধ্যায় তিনি ঘরের পাশের বাথরুমে প্রাকৃতিক কাজ সারতে যান। এরমধ্যে ক্যাপ পড়া একটি লোক (রামপাল থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মোঃ ইউসুফ শিকদার) এসে বাথরুমের দরজায় ধাক্কাতে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি বাথরুম থেকে বের হলে ওই পুলিশ সদস্য রাথরুম ব্যবহার করে বাড়ি থেকে বের হয়। এসময় তার স্বামী কাউন্টার ব্যবসায়ী ইলিয়াস আহমেদ ইউসুপের কাছে তার পরিচয় জানতে চায়। পরিচয় না দিয়ে ইউসুপ তার স্বামীকে বলে, তোকে কেন পরিচয় দিব? তুই কে? এভাবে বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে আমার স্বামীর চুল ধরে পুলিশ সদস্য মারধর করে। পরে পিতার অপমান সইতে না পেওে তার দুই ছেলে শেখ মামুন (৩৫) ও শেখ রাসেল (৩০) ঐ পুলিশ সদস্যকে চর থাপ্পর মারে। এসময় বাজারের কয়েকজন দোকানদারও পুলিশ সদস্যকে ধাক্কা দেয়। পরে ওই পুলিশ সদস্য তাদের মাদক ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ক্রসফায়ার দেয়ার কথা বলে বাজার থেকে চলে যায়। কিছুক্ষন পরে বাজারে অনেক পুলিশ অবস্থান নেয়। ওই সময় বাজারের দোকানদার রাকিব শেখ (২৮) কে পুলিশ সদস্যরা প্রচুর মারধর করে।
তিনি আরো বলেন, পরে ঐদিন রাতে ৭-৮ জন পুলিশ সদস্য তাদের বাড়িতে আসে। পুলিশের মারমুখি উপস্থিতি টের পেয়ে তার দুই ছেলে প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাদের বাড়ি ভাংচুর করে। এসময় বাড়ির আলমিরাতে থাকা নগদ ২ লক্ষ ১২ হাজার টাকা নিয়ে যায় পুলিশ। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ৩২  ইঞ্চি       এলইডি টেলিভিশন ও ১টি বাজাজ (ডিসকভার-১২৫) মটর সাইকেল নিয়ে যায় তারা। যাওয়ার সময় তার ছেলেদের না পেয়ে তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে আদালতের মাধ্যমে তিনি মুক্তি পান। পরের রাতেও পুলিশ এসে তাদের বাড়ির ৩টি ঘর ভাংচুর করেছে।
পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে থাকা গৃহকর্তা ইলিয়াস আহমেদ (৫৮) জানান, ‘আমার ছেলেরা ব্যবসা করে। কোন প্রকার অবৈধ কাজের সাথে তারা কখনও জড়িত নয়। আমার গায়ে হাত দেয়ায় তারা ওই পুলিশ কনস্টেবলকে চরথাপ্পর দিয়েছে। তারপর থেকে আমার স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। প্রতিদিন বাড়িতে এসে তান্ডব চালাচ্ছে। আমার ও আমার ভাইয়ের ঘরের মালামাল ভাংচুর করেছে। বাড়িতে থাকা আমার দুই ছেলের স্ত্রী ও তাদের সন্তানদেরকেও মারপিট করেছে পুলিশ সদস্যরা। এ অত্যাচার আমরা আর সইতে পারছি না।’
বাড়িতে থাকা শেখ মামুনের স্ত্রী তুলি বেগম (৩৩) বলেন, ঘটনার দিন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আমার স্বামী ও দেবর বাড়ি থেকে চলে গেছে। কোথায় গেছে জানি না। কিন্তু পুলিশ আমাদেরকে গালিগালাজ করছে, মারধর করেছে। ভয়ে আমার ছোট্ট ছেলেটি স্কুলে যেতে পারছে না। পরের রাতেও পুলিশ আসছিল। যাওয়ার সময় আমাদের ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়েছে।
প্রতিবেশি নাইমা আক্তার বলেন, পুলিশ কনস্টেবল পরিচয় দিলে ঘটনা এ পর্যন্ত গড়াতো না। বাজারের পাশে অনেক লোকজন এ বাড়িতে বাথরুমে আসে। সাদা পোশাকে থাকায় তাকে চিনতে পারেনি ফাতেমা বেগম। তবে ঐদিনের পরে এ বাড়িতে যা ঘটছে তা কল্পনা করা যায় না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাটের পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় সোমবার দুপুরে এই প্রতিবেদককে জানান, এই ঘটনার পর একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার সাথে যারা জড়িত এবং যে পুলিশ সদস্য ওখানে গিয়েছিলেন সব বিষয়ে খোজখবর নেয়া হচ্ছে। তদন্ত শেষে কে দোষী তা জানা যাবে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here