বাগেরহাটে পর্যাপ্ত ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় আতংকে কয়েক লাখ উপকূলবাসি

0
268

বাগেরহাট প্রতিনিধি :
বাগেরহাটে পর্যাপ্ত ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নির্মিত না হওয়ায় আতংকে রয়েছে উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। সুপার সাইক্লোন সিডর ও আইলা বিধ্বস্ত বাগেরহাটের উপকুলীয় এলাকার মানুষ এখন জীবন বাঁচাতে দুর্যোগকালিন ও পরবর্তী করনীয় বিষয় প্রশিক্ষন নিয়ে সচেতন হচ্ছেন। সিডরের ১১ বছর পার হলেও বাগেরহাটে গড়ে উঠেনি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। এতে উপকুলিয় বাসির মধ্যে ক্রমস ক্ষোভ বাড়ছে। বাগেরহাটে চাহিদার তুলনায় যেঅপ্রতুল ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নির্মান হয়েছে সেগুলোতেও বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্যঝুকিঁতে রয়েছে উপকূলবাসী।
বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলার প্রায় ৬লাখ মানুষের অভিমত, সিডরের সময়ে পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে এই জেলায় ২ হাজারের অধিক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তখন থেকেই এই জেলার উপকূলবাসীর অন্যতম প্রধান দাবি ছিল পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ।
সিডরের পর কিছু এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার হলেও এতে ধারণ ক্ষমতা অনেক কম। একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬-৭ শ লোকের ধারন ক্ষমতা থাকলেও সেখানে আশ্রয় নিতে হয় আড়াই থেকে ৩ হাজারের অধিক। ঘূর্ণিঝড় সতর্ক সংকেত ঘোষণা হলে এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। অনেকে আবার আশ্রয় কেন্দ্র জায়গায়ও পান না। আবার অনেক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মান করা হয়নি। অনেকগুলো আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহার অনুপযোগী। অনেক স্থানে আশ্রয় কেন্দ্র যাওয়ার রাস্তাঘাটের অবস্থা খারাপ।
সিডরের পর শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, মোংলা ও রামপাল উপজেলায় বেশকিছু স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে রাস্তাঘাট। সুপেয় পানির ব্যবস্থার জন্য ট্যাঙ্কি, টিউবওয়েল, বাথরুম টয়লেটের ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো ব্যবহার অনুপযোগি হওয়ায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা চরম আকার ধারন করেছে। ওই সকল সাইক্লোন শেল্টারে পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা না থাকায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ও শিক্ষকরা চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। উদ্বিগ হয়ে পড়েছে অভিবাবকেরা।
শরণখোলার সাইথখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির, তন্নী , নাজমুল বলেন, ‘ভবনে টিউবওয়েল আছে পানি নেই। আমরা স্কুলে আসার পর টয়লেটে যেতে পারি না। অন্যের বাড়ির টয়লেটে যেতে হয়। তারপর খাবার পানি খেতে পারি না’। মোরেলগঞ্জের বানিয়াখালী গ্রামের মমতারানী ও শাহানাজ বেগম বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র অনেক কম। যা আছে তাতে সংকুলান হয় না। পর্যাপ্ত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় আমরা দুর্যোগকালিন ও পরবর্তী করনীয় বিষয় প্রশিক্ষন নিয়েছি। আমাদের মত অনেকেই প্রশিক্ষনে অংশ গ্রহন করেছে।’
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জেজেএস’এর মহড়া প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘আমরা ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে কাজ করছি। সিডরের পর বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় সরকারী ও বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে উপকুলিয় এলাকাবাসিকে দুর্যোগকালিন প্রস্তুতি ও পরবর্তী করনীয় বিষয় প্রশিক্ষন দিয়ে থাকি। বর্তমানে অধিকাংশ মানুষ প্রশিক্ষন পেয়ে সচেতন হয়েছে। দূর্যোগের বিপদ সংকেতের খবর পেলে তারা দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে যান। তবে বাগেরহাটের দূর্যোগ প্রবন এলাকা শরনখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রে নেই।
মোরেলগঞ্জ উপজেলার খাউলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের বলেন,‘ঘুর্ণিঝড় সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলাতে। এখনও পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রে গড়ে না ওঠায় এসব এলাকার মানুষ আতংকে থাকে। দ্রুত আশ্রয় কেন্দ্রে নির্মানের দাবী জানান তিনি’।
শরণখোলা উপজেরার সাউথখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোজ্জাম্মেল হেসেন বলেন, তার ইউনিয়ন সিডরে দেড় হাহারের অধিক মানুষ মারা যায়। এখনও এই ইউনিয়নে প্রয়োজনের তূলনায় আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক কম। দ্রুত এই এলাকায় নতুন ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা দরকার। যেগুলো আছে সেগুলোর অধিকাংশই সংরক্ষনের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সংস্কার করা জরুরী’।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে জেলায় বর্তমানে ২৩৪ টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে রয়েছে। নতুন করে আরও ২০টি নির্মান করা হচ্ছে। জনসংখ্যার অনুপাতে পর্যায়ক্রমে জেলায় আরও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের পাশাপাশি এসব কেন্দ্রে যেতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ সুবিধারসহ গৃহপালিত পশু-পাখি রাখার সুব্যবস্থা থাকে এখন থেকে এমন ডিজাইনে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ নির্মাণে জোর দেওয়া হবে’।

খবর ৭১/ ই:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here