বাংলাদেশের নির্বাচনে উত্তেজনা তুঙ্গে: সিএনএন

0
380
Exterior view of CNN Center on Tuesday April 3, 2007 in Atlanta, Georgia. PHOTOGRAPHER: CHRIS RANK/ BLOOMBERG NEWS

খবর৭১:রোববার ভোট দিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশিরা। এদিন তারা রায় জানিয়ে দেবেন, শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মারাত্মক অভিযোগ থাকার পরও তাকে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা উপহার দেবেন কিনা।
সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে যে সহিংসতা দেখা গেছে তেমনটা প্রতিরোধ করতে দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী। সাম্প্রতিক ওইসব নির্বাচনে কম সংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে এবং সবচেয়ে বড় বিরোধীদলীয় জোট ও তাদের মিত্রদের বর্জনের কারণে কলঙ্কিত হয়েছে।
৭১ বছর বয়সী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে। বিরোধীদের বর্জনের কারণে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। কিন্তু তিনি শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পরিচালনা করা সত্ত্বেও ওই সময় থেকেই তার বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠার অভিযোগ আছে। অভিযোগ আছে, মিডিয়া ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের হয়রান করা হচ্ছে।
স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বেগ
কর্তৃপক্ষ স্বচ্ছতার প্রতিশ্র“তি দেয়া সত্ত্বেও ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতি ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো ও বিরোধীদলীয় নেতারা।
লন্ডনভিত্তিক সাংবাদিক ও ‘দ্য কর্নেল হু উড নট রিপেন্ট: দ্য বাংলাদেশ ওয়ার অ্যান্ড ইটস আনকোয়াইট লিগ্যাসি’ বইয়ের লেখক সলিল ত্রিপাঠি বলেন, অকপটতা বা খোলোমেলা থাকার প্রতিশ্র“তি দেয়া সত্ত্বেও এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (আনফ্রেল)-এর মতো নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের ভিসা বিলম্বিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। সিএনএনকে সলিল ত্রিপাঠি বলেছেন, ‘প্রশ্নটা হলো নির্বাচন চলার সময়ে সেখানে কি ঘটছে তা দেখার জন্য কোনো পর্যবেক্ষক থাকবে কিনা তা নিয়ে। আপনি চান একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু একটি সুযোগ হিসেবে সেটা হারাচ্ছে বাংলাদেশ। যদি আপনি পর্যবেক্ষকদের আসতে না দেন, তাহলে কিভাবে আপনি এটা (সুষ্ঠুতা ও অবাধ) প্রমাণ করবেন?’
গত সপ্তাহে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক রিপোর্টে বলেছে, বাংলাদেশে দমনমূলক রাজনৈতিক পরিবেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মুক্ত মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ব্যাপক নজরদারি ও দমনপীড়নসহ কর্তৃপক্ষের গৃহীত পদক্ষেপ আতঙ্কের পরিবেশে ভূমিকা রেখেছে। এতে আরো বলা হয়েছে, পুলিশ পক্ষপাতিত্বহীনভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে তারা বিরোধীদলীয় নেতাদের ওপর হামলার বিষয়কে এড়িয়ে গেছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের এমন আচরণ করা উচিত হবে না যা দেখে বোঝা যায় তারা ক্ষমতাসীন দলের সম্প্রসারিত অংশ। নির্বাচনী প্রচারণার সময় যে সহিংসতা হয়েছে তাতে প্রধান টার্গেট করা হয়েছে বিরোধীদের। তারা যে অন্যায্য আচরণ করছে তা এর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। প্রচারণা সংশ্লিষ্ট যেসব সহিংসতা হয়েছে তার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টার্গেট করা হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও বিরোধীদলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে।
মুক্ত মতপ্রকাশ দমিয়ে রাখা
এ চাপ শুধু যে বিরোধীদলীয় নেতারা অনুভব করছেন তা নয়। রোববারের নির্বাচনকে সামনে রেখে মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক গ্রুগুলো হয়রানি ও হুমকির অভিযোগ করেছে। অক্টোবরে সরকার একটি বিতর্কিত নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুমোদন করে। মানবাধিকার বিষযক গ্রুপগুলো আশঙ্কা করেন, এতে মিডিয়ার স্বাধীনতা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং অনলাইনে ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দেয়া হবে।
আন্তর্জাতিক আরেক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, এ আইন স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর ভয়াবহ বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তারা আরো বলেছে, বিরোধীদলীয় কণ্ঠকে দমিয়ে রাখতে এ আইন জোরালোভাবে ব্যবহার করা হবে। ঢাকাভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ অধিকার ভয়াবহ দিকের কিছুটা তুলে ধরেছে, যাকে বলা হয় বিরোধীদলীয় নেতা, ছাত্র ও অধিকারকর্মীদের জোরপূর্বক গুম।
অধিকার বিষয়ক এ গ্রুপটি বলেছে, শুধু সেপ্টেম্বরেই কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই আইন প্রযোগকারী সংস্থাগুলোর লোকজন তুলে নিয়ে গেছে ৩০ জনকে। এ বছরের প্রথম আট মাসে এ সংখ্যা মোট ২৮। কিন্তু তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া ওই সংখ্যা অনেক বেশি।
২০১৮ সালে যাদেরকে আটক করা হয় তার মধ্যে সুপরিচিত ফটোসাংবাদিক ড. শহিদুল আলম অন্যতম। আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমলোচনা করার কারণে তাকে কয়েক মাস জেলে রাখা হয়েছিল। তবে আন্তর্জাতিক ক্ষোভের মুখে নভেম্বরে তাকে জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষা বিষয়ক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট এবং মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ ২৫টি মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপ একটি যৌথ বিবৃতিতে শহিদুল আলমকে অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘন বলে সমালোচনা করা হয়।
বিরোধী পক্ষ
শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদে জিতে যাবেন এটা ব্যাপকভাবে ধরে নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে তার প্রধান প্রতিপক্ষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়া বর্তমানে জেলে বন্দি। দুর্নীতির অভিযোগে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষিদ্ধ হয়েছেন। তবে বিএনপির সমর্থকরা দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সলিল ত্রিপাঠি বলেছেন, যদি শেখ হাসিনা না জেতেন তাহলে আমি বিস্মিত হবো। বিরোধী দলের প্রার্থীরা রয়েছে আটকা অবস্থায় এবং তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এ অবস্থায় বিরোধীদের রয়েছে বহুবিধ সমস্যা। অন্যদিকে ক্ষমতায় থাকার সুবিধা আছে শেখ হাসিনার।
নির্বাচনের ফল যা-ই হোক, সলিল ত্রিপাঠি বলেন, মূল ফোকাস হওয়া উচিত বাংলাদেশিদের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দেয়ার অধিকার। ভোটার ও প্রার্থীদের এ ক্ষেত্রে নিশ্চয়তা পাওয়ার অধিকার আছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here