গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি : ২০১১ সালে গোপালগঞ্জ থেকে মাত্র ৪ কি.মি দূরে গোবরা গ্রামে মাত্র ৫টি বিভাগ নিয়ে ৫৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। কেটে যাচ্ছে প্রায় ৮টি বছর। ৫টি বিভাগ থেকে এখন ৩১টি বিভাগ হয়েছে ২০১৮ সাল অবধি। কিন্তু দীর্ঘ ৮ বছরেও দেখা মেলেনি কোন ছাত্র সংগঠনের। ২০১৬ সালের ২১ অক্টোবর ছাত্রলীগের কর্মী সম্মেলন হলেও আরো কেটে গেলো প্রায় দেড় বছর কিন্তু অদ্য অবধী দেখা মেলেনি ছাত্রলীগের কমিটির। এখানে সব কিছু চলে ভিসির আইন মাফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করা হয় না। এখানের শেষ কথা ভিসি যা বলবেন সেটাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন। তিনি নিজেই চান না এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোন কমিটি থাকুক। হাজার হাজার ছাত্রলীগ কর্মী আজ হতাশাগ্রস্থ। তাদের একটাই দাবী সুষ্ঠ ও পুর্নাঙ্গ একটি কমিটি হোক এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেই সাথে ছাত্রলীগ কর্মীদের শ্রম সফল হোক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ২০১১-১২ সেশনের এক ছাত্রের সাথে আলাপ করে জানা যায়, বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. খন্দকার নাসির উদ্দীনসহ একদল রাঘব বোয়াল ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি হতে দিচ্ছে না। কে এই রাঘব বোয়াল তা বলতে নারাজ তিনি। তিনি আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্রলীগের কমিটির আশায় আজ তাঁর জীবন বিপন্ন প্রায়, আজ সে নি:শ্ব প্রায়। অপরদিকে ছাত্রলীগের নিবেদিত প্রাণ আইন বিভাগের ছাত্র মুহাম্মাদ সুলাইমানের জীবন ভিসির রোষানলে বিপন্ন প্রায়। অভিভাবক মহল থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের একটাই প্রশ্ন কে নিবে সুলাইমানের দায়িত্ব? কী হবে তার ভবিষ্যৎ? কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতির কাছে বশেমুরবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মীদের একটাই দাবী অতি দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একটি কমিটি দেয়ার।
মেধাবী ছাত্র মুহাম্মাদ সুলাইমান অল্প দিনেই ছাত্র রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আচার, ব্যবহার ও সততা দিয়ে দিনে দিনে তিনি শিক্ষার্থীদের নয়নের মনি হয়ে উঠেন। ছাত্রলীগের কমিটি না থাকা সত্বেও তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে নেতা হিসেবেই বেশি পরিচিত। বশেমুরবিপ্রবির বয়স আট বছর হয়ে গেলেও এখানে এখনো দেখা মেলেনি ছাত্রলীগ কমিটির। সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটাই দাবী জাতির পিতার নামের ভার্সিটি হয়ে উঠুক ছাত্রলীগ রাজনৈতিক পাঠশালা। যেখান থেকে একঝাঁক নেতৃত্ব বেড়িয়ে আসবে বলে মনে করে সাধারন ছাত্র-ছাত্রীরা। যেখানে রাজু ও সুলাইমানসহ একাধিক ছাত্র নেতা বাংলাদেশ পরিচালনায় ভূমিকা রাখবে। সেই সাথে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে সাহায্য করবেন।
যেখানে বিপ্লবী ছাত্র নেতা সুলাইমান ও রাজুরা ন্যায্য অধিকার থেকে লাঞ্ছিত হবেন। যেখানেই সুলাইমান ও রাজুর মত ছাত্রের জীবন নিয়ে ভিসি ছিনিমিনি খেলতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মীদের একান্ত দাবী কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কাছে পারিপার্শিক দিক বিবেচনা করে অচিরেই একটি ফলপ্রসূ কমিটি দিবেন।
অপরদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোন শিক্ষক সমিতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. নাসির উদ্দীনের কাছে। শিক্ষক সমিতি করতে গেলেই ভিসি প্রফেসর ড. নাসিরউদ্দীন শিক্ষকদের বলে থাকেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন শিক্ষক সমিতি চলবে না আমি যা বলবো সেটাই হবে। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিং আমার কথার বাইরে কোন শিক্ষক গেলে তার চাকরী খেয়ে ফেলা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রতিবাদী শিক্ষক হাবিবুর রহমানকে বিনা কারনে কোন অজুহাত ছাড়াই কারন দর্শানোর নোটিশ করা হয়। এ কারনে ছাত্র-ছাত্রীসহ শিক্ষক মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের একটি মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে ৭০ জন শিক্ষককে কারন দর্শানোর নোটিশ করা হবে বলে একটি সুত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দীনের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। আমরা শিক্ষকরা তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। না পারছি কোন প্রতিবাদ করতে না পারছি অন্যায় সহ্য করতে। তিনি আরো বলেন, বাংলা একাডেমী পুরস্কার জয়ী অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক দীলিপ কুমার নাথ, প্রফেসর ড. হানিফ সিদ্দিকী, প্রফেসর ড. এম. আলাউদ্দীনসহ অনেক গুনি শিক্ষক এই ভিসি খোন্দকার নাসিরউদ্দীন যোগদান করার সাথে সাথে তারা চাকরী ছেড়ে দিয়ে চলে গেছেন। যা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকিস্বরূপ। যা ইতিমধ্যে ছাত্র-ছাত্রীরা উপলব্ধি করতে পারছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অন্য আরেকজন শিক্ষক জানান, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দীন বিগত দিনে যে সকল কর্মকান্ড ঘটিয়েছেন তা আসলেই লজ্জাজনক। তিনি অনাথ মেয়ে ঝিলিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত মহিলা কর্মচারী ও কয়েকজন শিক্ষিকার সাথে অসামাজিক কাজে প্রায় লিপ্ত হন। আমরা সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করি শুধু মাত্র চাকরী বাঁচানোর জন্য ও জাতির পিতার নামের বিশ্ববিদ্যালয় কলংকিত হবে এ সব চিন্তা করে আমরা কিছুই বলি না। শুধু চুপচাপ তার সকল অপকর্ম দেখতে থাকি। তার দালাল ও গুন্ডা বাহিনীর ভয়ে শুধু আমি না সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্কে থাকে সব সময়।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শিক্ষক সমিতির খুব প্রয়োজন। শিক্ষক সমিতি থাকলে ভিসি সাহেব অনেক অনৈতিক কাজ করতে সাহস পেতেন না। আমরা দ্রুত একটি শিক্ষক সমিতি করার চেষ্টায় আছি কিন্তু ভিসি সাহেব একটি বড় দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছেন। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যত দ্রুত একটা শিক্ষক সমিতি করা যায়।
খবর ৭১/ইঃ