বজায় রাখা হচ্ছেনা সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা সৈয়দপুরে টিসিবি’র পণ্য কিনতে হুড়াহুড়ি

0
419
বজায় রাখা হচ্ছেনা সামাজিক দূরত্বের নির্দেশনা সৈয়দপুরে টিসিবি'র পণ্য কিনতে হুড়াহুড়ি

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর প্রতিনিধি:
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টা। নীলফামারীর সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ মাঠ। টিসিবি’র ডিলার শহরের শেরে বাংলা সড়কের মেসার্স সাকিল ট্রেডার্সের একটি মিনি ট্রাকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করা হচ্ছিল। সেখানে পণ্য কিনতে লাইনে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার শত শত নারী পুরুষ। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার লেশ মাত্র ছিল না সেখানে। একজনের সঙ্গে আরেকজন একেবারে গাঁ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনতে হুড়াহুড়ি করছেন। আর টিসিবি’র ডিলারের পণ্য বিক্রির তদারকি করছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সৈয়দপুর উপজেলা ভেটেরিনারী সার্জন ডা. মো. রফিকুল ইসলাম। সেখানে তিনিসহ ডিলারের লোকজন পণ্য কিনতে আসা মানুষজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে লাইনের দাঁড়ানো জন্য বার বার অনুরোধ করলেও কেউ মানছিলেন না সেসব কথা। এমন পরিস্থিতিতে তদারকি কর্মকর্তা টিসিবি’র পণ্য বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন ডিলারের কর্মচারিদের। পরে তিনি উপজেলা প্রশাসনকে মুঠোফোনে বিষয়টি অবহিত করেন। খবর পেয়ে কিছু সময়ের মধ্যে সেখানে উপস্থিত হন সৈয়দপুর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার। অবশ্য তাঁর আগে সেখানে সৈয়দপুর থানা পুলিশের সদস্যরা অবস্থান নেন। উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসে পণ্য কিনতে আসা লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন। পরে সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইনের দাঁড়ানোর পর পুনরায় পণ্য বিক্রি শুরু হয় সেখানে। তবে তার আগেই বরাদ্দকৃত অর্ধেকেরও বেশি পন্য বিক্রি শেষ হয়ে গেছে।

জানা যায়, ডিলার মেসার্স সাকিল ট্রেডার্সের মো. সাকিলকে প্রথম পর্যায়ে ৩ হাজার কেজি চিনি, ৪ হাজার ৫শ’ লিটার সোয়াবিন তেল, ৬ শ’ কেজি মশুর ডাল, এক হাজার ৫শ’ কেজি ছোলা ডাল (বুট) এবং ৬০ কেজি খেজুর বরাদ্দ দেয় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি’র বংপুর বিভাগীয় দপ্তর। বরাদ্দকৃত ওইসব পণ্য গত তিন দিনে শহরের তিনটি পয়েন্টে বিক্রির নির্দেশ দেন উপজেলা প্রশাসন। সে নির্দেশনা অনুযায়ী টিসিবি’র ওইসব পণ্য গত ২৯ ও ৩০ এপ্রিল যথাক্রমে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের পার্বতীপুর মোড়ে এবং শহরের উপকন্ঠ ওয়াপদা মোড়ে বিক্রি করা হয়। আর গতকাল শুক্রবার বিক্রি করা হয় সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ চত্বরে। সরকারি নির্দেশে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ৮০ টাকা লিটার দরে ৫ লিটার তেল, ৫০ টাকা কেজি দরে ২ কেজি চিনি, ৫০ টাকা কেজি দরে ১ কেজি মশুর ডাল এবং ৬০ টাকা কেজি দরে ২কেজি ছোলা ডাল (বুট) কিনতে পারবেন।
একজন ক্রেতার জন্য ওইসব পণ্য স্বাভাবিক হলেও চাহিদার তুলনায় অনেক কম। আর বিষয়টি লক্ষ্য করা গেছে আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ চত্বরে।

সরেজমিনে গিয়ে সেখানে দেখা যায় , বরাদ্দকৃত পণ্যের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা কয়েক গুন বেশি। ফলে মানুষজন সূলভমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। আর লাইনে দাঁড়িয়েও কে কার আগে পন্য নিবেন তা নিয়ে রীতিমতো হুঁড়োহুঁড়ি করছেন। ফলে ক্রেতা বেশি হওয়ায় ডিলাররা চাহিদা মতো পণ্য সরবরাহ দিতে পারছেন না। শুক্রবার সৈয়দপুর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ চত্বরে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছিলেন শহরের আদানীর মোড়ের বাসিন্দা মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি জানান, গত ২৯ এপ্রিল পার্বতীপুর মোড়ে পণ্য কিনতে লাইনের দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ‘ওই দিন মানুষের ভিড়ে আগেভাগেই ডিলারের বরাদ্দকৃত পণ্য শেষ হওয়ার সেখানে কিনতে পারেননি তিনি। তাই তিনি সকালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। পণ্য কিনতে ঢেলাপীর উত্তরা আবাসন থেকে এসেছিলেন টেইলার্স কারিগর আশরাফ আলী।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দোকানপাট বন্ধ। তাই বর্তমানে তিনি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সঞ্চিত টাকা পয়সাও প্রায় শেষ। তাই সূলভমূল্যে পণ্য কিনতে এসেছেন তিনি। মুন্সীপাড়া থেকে পণ্য কিনতে এসেছিলেন রাজমিস্ত্রী শরীফ। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কোন কাজ না থাকায় এক মাস থেকে বসে আছেন। পৌরসভা এলাকার ভোটার না হওয়ার সরকারি খাদ্য সহায়তাও মিলছেন না। তাই পরিবার পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এসময় সেখানে দেখা যায়, পণ্য কিনতে না পেরে অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন। এমনই একজন পত্রিকা হকার হায়দার আলী। তিনি পত্রিকা বিলি না করে সকালে এসেও পণ্য কিনতে না পেরে ফিরে যাচ্ছিলেন। টিসিবির পণ্য বিক্রি তদারকি কর্মকর্তা ও সৈয়দপুর উপজেলা ভেটেরিনারী সার্জন ডা. মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দিনটি শুক্রবার হওয়ায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের আসার আগে টিসিবর পণ্য বিক্রি শুরু করা হয়। তাই শুরুতেই একটি বিশৃংখলা দেখা দিয়েছিল। পরবর্তীতে সামাজিক দূরত্ব মেনে সুশৃংখলভাবে পণ্য বিক্রি সম্পন্ন হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here