ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক চাঁদাবাজি’ বলে মন্তব্য হামাস

0
274

খবর৭১:ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার মার্কিন সিদ্ধান্তকে ‘রাজনৈতিক চাঁদাবাজি’ বলে মন্তব্য করেছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। দলটি বলছে, এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনি জাতির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অনৈতিক আচরণের বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছে। শনিবার গাজা উপত্যাকায় এক বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন হামাসের মুখপাত্র ফৌজি বারহুম।

ফৌজি বারহুম বলেন, ফিলিস্তিন সংকটকে মুছে ফেলার মার্কিন-ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন এবং ফিলিস্তিনি জাতির ওপর কথিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ চাপিয়ে দেওয়ার অশুভ লক্ষ্যে এই চাঁদাবাজির সিদ্ধান্ত নিয়ে আমেরিকা।

তিনি মার্কিন ও ইহুদিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে ফিলিস্তিনি জাতির ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহায়তার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথিত ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামের শান্তি পরিকল্পনা মেনে নিতে ফিলিস্তিনের ওপর জোর জবরদস্তি করছে ইসরায়েল। এমনটাই অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ইউসেফ আল-মাহমুদ বলেন, দুনিয়ার কোনও শক্তিই ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের নেতৃত্বের ওপর এ পরিকল্পনা চাপিয়ে দিতে পারবে না।

তিনি বলেন, একের পর ফিলিস্তিনি শহরগুলো দখল করে নেওয়ার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাতের চক্রান্ত করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’-তে দুই রাষ্ট্রের প্রস্তাব করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দখলকৃত গাজা উপত্যকা চলে যাবে মিসরের অধীনে। আর দখলকৃত পশ্চিম তীরের একাংশে থাকবে জর্ডানের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব। পশ্চিম তীরের অবশিষ্ট অংশ শাসন করবে ইসরায়েল। এখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েল রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। তবে ফিলিস্তিনি নেতারা ট্রাম্পের এ পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করলে ফিলিস্তিনকে রাজি করাতে এগিয়ে আসেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি ট্রাম্পের কথিত শান্তি পরিকল্পনা ফিলিস্তিনের ক্ষমতাসীন দল পিএলও-র কাছে তুলে ধরেন।

হামাসের পলিট ব্যুরোর সদস্য ওসামা হামদান আল জাজিরা’কে বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ফিলিস্তিনকে চাপ দিতে আরব দেশগুলোকে ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা যে সমাধানের কথা বলছে সেটা আসলে ইসরায়েলের স্বার্থ সংরক্ষণ করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিরসনে শতাব্দীর সেরা শান্তি পরিকল্পনা উপস্থাপনের কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্পের ইসরায়েল ঘেঁষা নীতি, ইসরায়েলের সঙ্গে তার জামাতা ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক, আরব রাষ্ট্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ভূমিকাসহ সার্বিক দিক বিশ্লেষণ করে ট্রাম্পের আসন্ন শান্তি পরিকল্পনায় ভরসা করা কঠিন বলে মনে করে ফিলিস্তিনিরা।

ঐতিহাসিকভাবেই মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ইসরায়েলঘেঁষা। এ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের বিভিন্ন প্রস্তাবে যতোবার ফিলিস্তিনি সুরক্ষার প্রশ্ন হাজির হয়েছে, ওবামা প্রশাসনের সময়কার একটি ঘটনার কথা বাদ দিলে সব ক্ষেত্রেই ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওবামা প্রশাসনের শাসনামলে ২০১৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙ্গে জাতিসংঘের ইসরায়েলি বসতিবিরোধী প্রস্তাবে ভেটো না দিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে যুক্তরাষ্ট্র। নিরাপত্তা পরিষদে অবৈধ বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে এই প্রস্তাব পাসের পর ফিলিস্তিন প্রশ্নে ট্রাম্প-ওবামা দ্বন্দ্ব প্রকট হয়। ট্রাম্প ওই সময়ই ইঙ্গিত দেন, তার দায়িত্ব গ্রহণের পর পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। টুইটারে তিনি লিখেছিলেন, ‘২০ জানুয়ারির পর পরিস্থিতি ভিন্ন হবে।’ কথা অনুযায়ীই ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর না যেতেই ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জেরুজালেমকে ইসরায়েলি রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। ঘোষণা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে চলতি বছরের মে মাসে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেন তিনি।
খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here