প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিধবাকে গণধর্ষণ, আ’লীগ নেতাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

0
243

খবর ৭১ঃব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে বিয়ের কথা বলে এক বিধবাকে বাড়িতে ডেকে এনে গণধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ওই নির্যাতিতা এক ইউপি সদস্যসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

মামলার আসামিরা হলেন শরীফপুরের জাকির হোসেন (৩০), আমির হোসেন (২৮), বাচ্চু মিয়া (৪০), শহিদুল হক (৩৬) ও লালপুর গ্রামের নাজির মিয়া (৩৮)। এর মধ্যে আমির হোসেন শরীফপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ গত ৯ জুলাই মামলাটি দায়ের করেন নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ওই নির্যাতিতা। পরে আদালতের নির্দেশে ১২ জুলাই মামলাটি আশুগঞ্জ থানায় রেকর্ড হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই নির্যাতিতার স্বামী গত ৮ বছর আগে মারা যান। দুই পুত্রসন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই বসবাস করছিলেন তিনি। সেখানে থাকা অবস্থায় ১ বছর আগে তার মোবাইল ফোনে ভুল নম্বর থেকে একটি কল আসে। সেই কলের সূত্র ধরে আশুগঞ্জ শরীফপুর গ্রামের জাকির হোসেনের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

২ মাস আগে আশুগঞ্জে তাদের দেখাসাক্ষাৎ হয়। নির্যাতিতা আগে লেবানন ও সৌদি আরব ছিলেন এবং তার কাছে প্রচুর নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার রয়েছে, তা জানতে পেরে জাকির নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এবং তার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করে।

এরপর ওই নির্যাতিতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের একটি পার্লারে চাকরি নিয়ে বাসাভাড়া করে বসবাস করতে থাকেন।

গত ২ জুলাই দুপুরে জাকির নির্যাতিতার মোবাইল ফোনে কল করে বিয়ে করবে জানিয়ে স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকাসহ তার বাড়িতে যেতে বলে। এ আশ্বাসে ওই নির্যাতিতা সাড়ে ৬ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ৩০ হাজার টাকা, ১টি স্যামসাং মোবাইল ফোন সেট, বিয়ের কাপড়চোপড় ও কসমেটিকস নিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় শরীফপুর গ্রামে জাকিরের বাড়িতে পৌঁছেন।

জাকির তার তালাবদ্ধ ঘর খুলে তাকে সেখানে বিশ্রাম নিতে বলে এবং রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে কাজি এসে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করবে বলে জানায়।

এরপর রাত ১২টার দিকে সেখানে আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন (২৮), বাচ্চু মিয়া (৪০), শহিদুল হক মিমমা (৩৬) ও নাজির মিয়া (৩৮) এলে জাকির তাকে বিয়ে করবে না বলে জানায়। পরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হাত ও মুখে গামছা বেঁধে তারা পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এর মধ্যে আমির হোসেন তাকে দুবার ধর্ষণ করেন।

পরে আসামিরা তার কাছ থেকে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৩টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে সেখান থেকে বের করে দেয়। পরে গ্রামের মোহাম্মদ আলীর সহায়তায় নির্যাতিতা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি হন।

২০১৩ সালেও আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেনের বিরুদ্ধে এক বিধবাকে ধর্ষণের মামলা হয়েছিল বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এছাড়া জাকির হোসেন ২ মাস আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সুপার মার্কেটে কাপড়ের ব্যবসা করবে বলে তার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেয় বলেও অভিযোগ করেন ওই নির্যাতিতা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেজবাহ উদ্দিন জানান, ঘটনার তদন্ত চলছে। এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কিনা তা-ও দেখা হচ্ছে।

তবে মামলার বাদী ওই নির্যাতিতা বলেন, মামলার ১৫ দিন পর হলেও কোনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় তিনি আতংকে আছেন এবং আসামিরা তাকে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফ উদ্দিন চৌধুরী গণধর্ষণের কথা স্বীকার করে বলেন, খোঁজখবর নিয়ে ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা পেয়েছি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
খবর ৭১/ইঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here