প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতুর অগ্রগতি কাজের উদ্বোধন করবেন কাল

0
263

খবর৭১:এস. এম. রাসেল, মাদারীপুর ॥প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর কাজ পরিদর্শন ও বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করতে আসছেন আগামীকাল রোববার। ঘূর্ণিঝড় তিতলির কারণে এ সফর শনিবারের পরিবর্তে রোববার পূনঃনির্ধারণ করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী মাওয়ায় এসেছিলেন।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার বেলা ১১ টায় মাওয়া দোগাছিয়ায় পদ্মা সেতুর সার্ভিস এরিয়া-১ এর মাঠে হেলিকপ্টারযোগে এসে অবতরণ করবেন। এরপর গাড়িযোগে মাওয়া সেতু এলাকায় পদ্মা সেতু নামফলক উম্মোচন, রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন ও পদ্মা সেতুর ৬০ ভাগ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ঘোষনা করবেন। এ ছাড়া ১৩০০ মিটার দৈর্ঘের স্থায়ী নদীতীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ উদ্বোধন এবং ১০ হাজার ৮৪ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে রোডের চলমান কাজ পরিদর্শন করবেন। পরে ঢাকা-মাওয়া টোলপ্লাজা সংলগ্ন গোলচত্বর এলাকায় আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন বলে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিকেলে মাদারীপুর জেলার শিবচরে কাঠালবাড়ীতে জনসভায় বক্তব্য রাখবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ব্যানার-ফেস্টুন আর উন্নয়নমূলক কাজের পরিচিতি সম্বলিত প্রচারপত্রে এলাকা ছেয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরকে স্বার্থক করতে স্থানীয় নানা পর্যায়ের নেতা-কর্মী দফায়-দফায় বৈঠক করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। স্থানীয় প্রশাসন প্রধানমন্ত্রীর সফর সূচারু রুপে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে। এলাকা জুড়ে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকায় দেশীয় অর্থায়নে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। প্রায় ৩১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এ প্রকল্পের নির্মাণকাজের ৬০ ভাগ এবং মূল সেতুর ৭০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে ২০০১ সালের ১২ জুলাই মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের কুমারভোগ এলাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে ৯ বছর কাজের কোনো অগ্রগতি হয়নি। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর ফের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ঋণ চুক্তি বাতিল করে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে ২০১৩ সালের ৪ মে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে এ অঞ্চলের মানুষ বেশ খুশি। মাওয়ায় ৪ ও ৫ নং খুঁটির সামনে ষষ্ঠ স্পান স্থাপনের কাজ চলছে এখন। এছাড়া জাজিরা প্রান্তে আরা ৫ টি স্পান উঠেছে। ইতোমধ্যে ৩৭ থেকে ৪২ পর্যন্ত ৬ টি খুঁটিতে ৫ টি স্পান বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। পদ্মা সেতুর ৪২টি খুঁটিতে ৪১ টি স্পান বসানো হবে। এর মধ্যে ১৪ টি খুঁটি বসানোর কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আর নদীতে ১৮০ টি পাইল স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে ঢাকা থেকে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, যশোর, খুলনা ও দর্শনার সঙ্গে সংক্ষিপ্ত রুটে রেল যোগাযোগ উন্নীত হবে। এ রুটে জাতীয় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ব্রডগেজ মালবাহী ও কন্টেইনার ট্রেন চলাচল করবে। এর ফলে সংশিষ্ট এলাকায় মানুষের জীবনমানে ব্যাপক অগ্রগতি হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভা ঘিরে নেতা-কর্মী আর সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ- উদ্দীপনা কাজ করছে। জনগণের দাবী, পদ্মা সেতুর এ অগ্রগতিতে স্বপ্ন পূরণের পথে একধাপ এগিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর। দলীয় নেত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতে আওয়ামীলীগ দলীয় নেতা-কর্মীরা সভা-সমাবেশ করছেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন, পৌরসভা ও আশ-পাশের জেলা-উপজেলা থেকে প্রায় লক্ষাধিক লোক জমায়েত হবে বলে নেতা কর্মীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মেদ মোল্লা জানান, প্রধানমন্ত্রীর এ সফর বিশেষ বার্তা বহন করবে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্যে। বহুল কাঙ্খিত পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। সেতুর কাজের অগ্রগতি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা এ সভা থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেরও দিক নির্দেশনা পাবো। আশা করছি, এ সভায় মাদারীপুর থেকে লক্ষাধিক মানুষ জমায়েত হবে। এ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দিক-নির্দেশনা দেবেন বলে নেতা-কর্মীরা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন নিয়ে আইন-শৃংঙ্খলা বাহিনী থেকে নেয়া হয়েছে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাদারীপুর জেলার পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার জানান, আমরা আট স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা পোশাক পরিহিত ও সাদা পোশাকে টহল দেবে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় সার্বিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ইতিমধ্যেই চূড়ান্ত নিরাপত্তা সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমনে সব ধরনের প্রস্তূতি গ্রহণ করা হয়েছে।

খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here