প্রথম দিনটি দু দলের

0
283
Bangladesh cricketer Abu Jayed (2nd L) celebrates with his teammates after the dismissal of the Zimbabwe cricket captain Hamilton Masakadza during the first day of the first Test cricket match between Bangladesh and Zimbabwe in Sylhet on November 3, 2018. (Photo by MUNIR UZ ZAMAN / AFP) (Photo credit should read MUNIR UZ ZAMAN/AFP/Getty Images)

খবর ৭১: দিনের শুরুতে প্রথম উইকেট পেতে প্রায় ঘণ্টাখানিক সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। সে ধারা চলমান থেকেছে পুরোটা দিন ধরেই। তবে সারাদিনে পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের চালকের আসনটা প্রতিপক্ষের হাতে যেতে দেয়নি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। তেমনিভাবে ২৩৬ রান করে খুব একটা অস্বস্তিতে নেই সফরকারী জিম্বাবুয়েও।

সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রথম টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিন শেষে পিছিয়ে নেই কোনো দলই, আবার এগিয়ে নেই কোনো দল। দুদলই লড়েছে সমানে সমান। তবে আড়াইশ রানের মধ্যে ৫ উইকেট তুলে ফেলায় দ্বিতীয় দিন সকালে জিম্বাবুয়েকে অল্পতেই অলআউট করতে বাড়তি প্রেরণা পাবে টাইগাররা। দিন শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২৩৬ রান।

সিলেটের ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কিংবদন্তি ক্রিকেটার ও সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান ঘণ্টা বাজিয়ে শুরু করেন প্রথম দিনের খেলা। বাংলাদেশের পক্ষে অভিষেক হয় আরিফুল হক ও নাজমুল ইসলাম অপুর। জিম্বাবুয়ের পক্ষে প্রথমবারের মতো নামেন ব্রেন্ডন মাভুতা ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।

ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ের শুরুটা ভালোই ছিল। দুই ওপেনার হ্যামিল্টন মাসাকাদজা আর ব্রায়ান চারি মিলে সত্যিকার টেস্ট খেলার দিকেই মনযোগ দিয়েছিলেন। সিলেটের লোকাল বয় আবু জায়েদ রাহি এবং বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের বল প্রথম থেকেই টার্ন করা শুরু করেছিল। ক্রিকইনফোর কমেন্ট্রিতে খেলা শুরুর আগে বলা হয়েছিল, বল টার্ন করার সম্ভাবনা বেশি।

সে কারণেই শুরু থেকে বিধ্বংসী হয়ে ওঠার চেষ্টা আবু জায়েদ আর তাইজুল ইসলামের। আবু জায়েদের একটি বলে হ্যামিল্টন মাসাকাদজা পরাস্ত হলে আউটের আবেদন করে বাংলাদেশ দলের ফিল্ডাররা। পরে রিভিউও নিয়েছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। যদিও তখন দেখা গেলো বল ব্যাটের প্রান্ত ছুঁয়েছিল। ফলে বেঁচে যান জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক।

তবে মাসাকাদজা আর চারি জুটিকে খুব বেশিদুর এগুতে দেননি তাইজুল ইসলাম। ইনিংসের ১১তম ওভারে এসে ৩৫ রানের জুটিটা ভেঙে দেন তিনি। সরাসরি বোল্ড করে দেন ব্রায়ান চারিকে। খুব বাজেভাবে স্লগ করতে গিয়েছিলেন চারি। বল ব্যাট মিস করে সোজা মিডল স্ট্যাম্প ভেঙে দেয়। বলা যায়, তাইজুলকে উইকেটটা উপহারই দিয়ে আসেন ব্রায়ান চারি।

ওয়ানডাউনে ব্যাট করতে নামেন জিম্বাবুয়ের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ব্রেন্ডন টেলর। ওয়ানডে সিরিজে দারুণ ব্যাটিং করেছিলেন তিনি। এ কারণে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার সঙ্গে তার জুটিটা ভালোই হবে- এটাই কাম্য ছিল জিম্বাবুইয়ানদের। কিন্তু তাইজুলের ঘূর্ণির কাছে আবারও পরাস্ত হতে হয় জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপকে।

মাসাকাদজার সঙ্গে মাত্র ১২ রানের জুটি গড়েন টেলর। এরই মধ্যে ইনিংসের ১৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলটিকে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন টেলর। কিন্তু শর্ট লেগে দাঁড়ানো নাজমুল হোসেন শান্ত মাটি কামড়ানো শটটি তালুবন্দী করে ফেলেন। আম্পায়ার আউট দিলেও কিছুটা সংশয় ছিল টেলরের মনে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় সত্যি সত্যি আউট। ৬ রান করে বিদায় নেন ব্রেন্ডন টেলর।

৮৫ রানে ২ উইকেট নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। বিরতি থেকে ফিরে প্রথম ওভারেই জিম্বাবুইয়ান অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন আবু জায়েদ রাহি। ১০৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কার মারে ৫২ রান করে ফেরেন মাসাকাদজা। লেগ বিফোরের ফাঁদে ধরা পড়েন তিনি।

পরে দ্বিতীয় সেশনের প্রথম পানি পানের বিরতির এক ওভার পরেই টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট তুলে নেন বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। তার সোজা এক ডেলিভারিতে ভুল লাইনে খেলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফিরেছেন সিকান্দার রাজা। আউট হওয়ার আগে করেন ১৯ রান।

এরপর চা পানের বিরতি পর্যন্ত জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১৪৯ রান। প্রথম সেশনে ৩১ ওভার খেলে ২ উইকেট হারিয়ে ৮৫ রান করতে পেরেছিল সফরকারীরা। দ্বিতীয় সেশনে সমান ওভার খেলে সমান উইকেট হারালেও রান তুলতে পেরেছিল কেবল ৬৪।

তবে তৃতীয় সেশনেই ঘুরে দাঁড়ায় তারা। এ সেশনে ৩০ ওভার ব্যাট করে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৮৭ রান করেছে তারা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে উইকেটেই ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলেছিলেন শন উইলিয়ামস ও পিটার মুর। নিয়মিত বোলারদের সবাইকেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বোলিং করান বাংলাদেশ অধিনায়ক, কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছিলো না কিছুই।

শেষ পর্যন্ত নিজেই তুলে নেন বল, চলে আসেন আক্রমণে। বোলিংয়ে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই এনে দেন মহামূল্যবান ব্রেকথ্রু। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাজিতে সাজঘরে ফিরে যান জিম্বাবুয়ের বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস। দিনের শেষ সেশনের পানি পানের বিরতির ঠিক আগের ওভারেই আউট হন উইলিয়ামস। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১২ রান দূরে ছিলেন তিনি।

দ্বিতীয় সেশনের পানি পানের বিরতির এক ওভার পরেই সিকান্দার রাজার উইকেট তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর পিটার মুর ও উইলিয়ামস মিলে খেলেছেন পাক্কা ২৯ ওভার, পঞ্চম উইকেট জুটিতে যোগ করেছেন ৭২ রান। জুটিতে বেশি আগ্রাসী ছিলেন উইলিয়ামসই।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওভারে অফসাইডের ডেলিভারিতে কাট শট খেলতে গিয়ে স্লিপে থাকা মেহেদি হাসান মিরাজের হাতে ক্যাচে পরিণত হন বাঁহাতি উইলিয়ামস। স্লিপে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় ক্যাচটি লুফে নেন তরুণ মিরাজ। আউট হওয়ার আগে ৯ চারের মারে ১৭৩ বলে ৮৮ রান করেন উইলিয়ামস।

কিন্তু এরপর আর বিপদ ঘটতে দেননি পিটার মুর ও রেগিস চাকাভা। দিনের শেষ ঘণ্টায় প্রায় ১৫ ওভার (১৪.৩) খেলে দুজন মিলে যোগ করেছেন মাত্র ৩৫ রান। তবে হারাতে দেননি কোনো উইকেট। দিনশেষে মুর ৩৭ ও চাকাভা ২০ রানে অপরাজিত রয়েছেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৯১ ওভারে ২৩৬/৫ (মাসাকাদজা ৫২, চারি ১৩, টেলর ৬, উইলিয়ামস ৮৮, রাজা ১৯, মুর ৩৭*, চাকাভা ২০; আবু জায়েদ ১৮-৩-৬১-১, তাইজুল ২৭-৩-৮৬-২, আরিফুল ৪-১-৭-০, মিরাজ ২১-৬-৩৭-০, অপু ১৯-৫-৪২-১, মাহমুদউল্লাহ ২-০-২-১)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here