প্রথম কিস্তির ৩২শ’ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন

0
281

খবর৭১: বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে বাস্তবায়নের দিকে। দীর্ঘদিন চীনের ঋণ আটকে থাকলেও এখন সেসব জটিলতা কেটে গেছে। চলতি মাসেই ছাড় শুরু হচ্ছে বৃহৎ এ ঋণের অর্থ। প্রথম কিস্তি হিসেবে পাওয়া যাবে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

৩০ জুনের মধ্যেই এই কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে ব্যাপক আশাবাদী অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। সে লক্ষ্যেই পরিচালিত হচ্ছে সব কার্যক্রম। মঙ্গলবার পাওয়া গেছে ঠিকাদারদের গ্যারান্টিপত্র। সেটি এখন যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পাঠিয়ে দেয়া হবে চীনা এক্সিম ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট ফি। তাহলেই সব প্রক্রিয়া শেষ হবে। তারপর চীন ছাড় করবে বহুল প্রত্যাশিত প্রথম কিস্তির অর্থ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব ও চীনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এশিয়া উইংয়ের প্রধান মো. জাহিদুল হক যুগান্তরকে জানান, প্রথম কিস্তির অর্থছাড় প্রক্রিয়া শেষ করতে মোটামুটি ১০ ধরনের বিষয় শেষ করতে হয়।

এর মধ্যে ৮টিই সমাপ্ত হয়েছে। এখন বাকি দুটির মধ্যে ঠিকাদারদের কাছ থেকে গ্যারান্টিপত্র পাওয়া গেছে মঙ্গলবার। ম্যানেজমেন্ট ফির অর্থ পাঠানো হবে চলতি সপ্তাহেই। এর মধ্য দিয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। চলতি মাসের মধ্যেই আশা করছি প্রথম কিস্তি ছাড় করবে চায়না এক্সিম ব্যাংক।

অর্থছাড়ের ধাপগুলো সম্পর্কে ইআরডি সূত্র জানায়, পাওয়ার অব অ্যান্টর্নি প্রদান, লিগ্যাল ওপেনিয়ন, টাকা উত্তোলনের ক্ষমতা প্রদান, এনবিআর থেকে প্রিপারেনশিয়াল পলিসি পেপার সংগ্রহ, প্রকল্প পরিচালককে ক্ষমতা অর্পণ, ঋণ চুক্তির সার্টিফাইড কপি পাঠানো, বেইজিংয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রসেস এজেন্ট নিয়োগ দেয়া ইত্যাদি।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময়ই পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পে অর্থায়নে সমঝোতা স্মারক সই হয়। কিন্তু নানা কারণে পরবর্তী সময়ে অর্থায়ন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা।

এজন্য চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্বিত হতে থাকে। গত বছরের নভেম্বর মাসে এ প্রকল্পে চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। সেটি না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে ডিসেম্বরে চুক্তি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে ইআরডি। সে সময় চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ঋণ চুক্তির জন্য স্টেট কাউন্সিলের অনুমোদনের পর চীনের প্রেসিডেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন। এভাবে কেটে যায় জানুয়ারি, ফেব্র“য়ারি এবং মার্চ মাস। এই ফাঁকে চীনা এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে চলে চিঠি চালাচালি এবং বৈঠক। এসব বৈঠকে ঋণের বিভিন্ন শর্তসহ নানা দিক সমঝোতা হওয়ায় অবশেষে ২৭ এপ্রিল বেইজিংয়ে চুক্তিটি সই হয়।

এরই মধ্যে মেয়াদ ও ব্যয় বেড়ে যায় ফাস্টট্র্যাকভুক্ত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পে। ২০২২ সালের মধ্যে প্রকল্পটি সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও তা আর হচ্ছে না। মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। তাছাড়া ব্যয়ও বেড়েছে ৪ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। সম্প্রতি এই ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

প্রথম কিস্তি ছাড় হতে যাওয়া চীনের এ ঋণের ক্ষেত্রে যেসব শর্ত মানতে হচ্ছে সেগুলো হল পুরো ঋণটিই হবে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট অর্থাৎ এ ঋণের ক্ষেত্রে চীন দেবে ৮৫ শতাংশ অর্থ আর বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে ১৫ শতাংশ অর্থ। তবে যদি গভর্নমেন্ট কনসেশনাল ঋণ হতো তাহলে পুরোটাই চীনা অর্থায়ন হতো।

কিন্তু তাদের নতুন নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণ একসঙ্গে দুটো অপশন থাকতে পারবে না। এছাড়া সুদের হার হবে ২ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ হবে ৬ বছরের রেয়াতকালসহ ২০ বছর। ব্যবস্থাপনা ফি গুনতে হবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে।

প্রতিশ্রুতি ফি দিতে হবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে। সেই সঙ্গে চুক্তি কার্যকর হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই ব্যবস্থাপনা ফি বাবদ ৬৬ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৩ দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলার দিতে হবে চীনা এক্সিম ব্যাংককে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here