‘প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমার কাছে ছিল জাহান্নাম, তা আমি বলতে পারব না।’

0
438

খবর৭১ঃ ৫ জুলাই ২০১৮, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে কথা বলছেন কোটাবিরোধীদের লাঞ্ছনার শিকার মরিয়ম মান্নান ফারাহ।

তিনি ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘… যখন দেখি ফারুক ভাইকে মারছে তখন আমি ভিড়ের মধ্যে চলে গিয়েছিলাম তাকে রক্ষা করার জন্য। যাওয়ার পর যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তা ভিডিওচিত্রে আপনারা দেখছেন। তার পুরোটা ভাষায় বলা সম্ভব না। এখন এতেও যদি আপনাদের বিবেক-বোধ না জাগে… আমার সঙ্গে কী ঘটেছিল…।’

সেই নির্মম পাশবিক পরিস্থিতির বিবরণ এভাবেই দিচ্ছিলেন নির্যাতিত-লাঞ্ছিত মরিয়ম মান্নান ফারাহ।
গত ২ জুলাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সমাবেশে হামলা চালানো হয়। সেদিন আন্দোলনে যোগ দিতে এসেছিলেন তেজগাঁও কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মরিয়ম। আন্দোলনকারীদের ওপর বিরোধীদের হামলার সময় তিনি এগিয়ে যান মার খাওয়া মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্যে। উল্টো তিনি হন বর্বর লাঞ্ছনার শিকার।

সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মরিয়ম তুলে ধরেন বৃহস্পতিবারে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে। জানান, কীভাবে তাকে অপমানিত করা হয়েছিল। বলেন, কীভাবে প্রথমে তাকে লাঞ্ছিত করেছিল হামলাকারীরা, পরে পুলিশ সদস্যরা।

সেই পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে মরিয়ম বলেন, ‘ওরা (লাঞ্ছনাকারীরা) যখন বলেছিল থানায় নিয়ে চল (…)টাকে, মনে হয়েছে যে থানায় নিয়ে গেলে আমি সেফ। কিন্তু, মনে হলো থানা আমার জন্য সেকেন্ড জাহান্নাম।’

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ফেসবুকে পোস্ট দেখে স্বপ্রণোদিত হয়েই আন্দোলনে যোগ দিতে এসেছিলেন। তারপর এসে দেখেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ-এর যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসানকে আন্দোলনবিরোধীরা পেটাচ্ছে।

মরিয়ম বলেন, ‘এটা একটি যৌক্তিক আন্দোলন। একজন মানুষ হিসেবে আমার কিছু অধিকার আছে। এখানে আসার অধিকার আমার আছে। বেঁচে থাকার অধিকার আমার আছে।’

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘বাইরের ছেলেরা আমাকে কেন ধরলো? কেন তারা আমার গায়ে স্পর্শ করলো?’ মরিয়ম বলেন, ‘আমি সিএনজিতে উঠেছিলাম বাসায় যাওয়ার জন্য। সেই সিএনজিটা ঘিরে ধরেছিল অন্তত ২০০ মোটরসাইকেল। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারা আমার ফোন-ব্যাগ নিয়ে যায়।’

এরপর তারা সিএনজির ভেতরেও ঢুকছে, তাকে নোংরা কথাগুলো বলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘… এরপর আমাকে ওখান থেকে শাহবাগ থানায় নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু, সিএনজির প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমার কাছে ছিল জাহান্নাম। তা আমি বলতে পারব না।’

থানায় নিয়ে যাওয়ার পর তার ব্যাগ খোলা হয় বলে জানান মরিয়ম। সেসময়ের পরিস্থিতি ও পুলিশ কর্তৃক মানসিক নিপীড়ন-লাঞ্ছনার বর্ণনা দেন তিনি। মরিয়ম বলেন, তার ব্যাগে ছিল একটি পানির বোতল ও দুইটা মেকআপ বাক্স। “(অথচ) পুলিশ আমার ব্যাগ থেকে বের করলো একটা ছুরি…,” যোগ করেন লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষার্থী।

ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রীরা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ছাত্রীরা। বৃহস্পতিবার এক বিক্ষোভ মিছিল শেষে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্রী শেখ মৌসুমী বলেন,‘কোটা আন্দোলনের নেতা রাশেদ রিমান্ডে, নূর হাসপাতালে, ফারুক কারাগারে। তাদের এই অবস্থায় রেখে আমরা ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারি না। তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরববো না।’

এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন,‘আজকের বিক্ষোভ শেষে আমরা যখন গ্রন্থাগারের সামনে আসি, তখন অনেক ছেলে আমাদের কটূক্তি করেছে। আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপদ থাকতে চাই। কোনও ধরনের হামলা চাই না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও প্রক্টরের কাছে নিরাপত্তা দেওয়ার আহ্বান জানাই।’

এর আগে নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া ও শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে শামসুন্নাহার হলের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা, ভিসি চত্বর হয়ে টিএসসিতে এসে শেষ হয়।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার ঢাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ও আশপাশের এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের বেশ কয়েকজন নেতাকে মারধর করা হয়। সোমবারও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে কোটা আন্দোলনের সমর্থকদের ওপর হামলা হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের দাবি, ছাত্রলীগ এসব হামলা চালাচ্ছে। তবে ছাত্রলীগ নেতারা দাবি করছেন, কোটা আন্দোলনকারীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here