প্রতাপশালী যুবরাজ কুপোকাত আজ!

0
234

খবর৭১ঃ মাত্র এক বছর আগে সৌদি আরবে যুবরাজের আসনে বসেন মোহাম্মদ বিন সালমান। এরই মধ্যে দেশ-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।

এক দিকে প্রতাপশালী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন অন্যদিকে সব সমালোচক ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের শেকড় উপড়ে ফেলতে নিজের পরিবারের সদস্যদেরও ছাড় দেননি তিনি।

সালমানের স্বৈরাচারীমূলক নানা কর্মাণ্ডের ফলে দেশ-বিদেশে তার সমালোচকের সংখ্যা বেড়েছে। অনেক বন্ধু তার শত্রুতে পরিণত হয়েছে।

ক্ষমতায় এসেই কাতারের ওপর অবরোধ দিয়ে আলোচনায় আসেন যুবরাজ সালমান। কাতারের ওপর সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশের অবরোধ এখনো অব্যাহত রয়েছে।

আর গত বছরের শেষের দিকে দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের নামে রাজপরিবারের বহু সদস্যকে আটক ও নির্যাতন চালানো হয়। এসব বিষয় নিয়ে পশ্চিমারা যুবরাজের প্রশংসা করলেও মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক সালোচনা সৃষ্টি হয়।

সৌদি আরবের ভেতরেও যে যুবরাজ সমর্থন হারিয়েছেন তা প্রকাশ পায় চলতি বছর এপ্রিল মাসে। ২৩ এপ্রিল রাতে সৌদি রাজপ্রাসাদে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সেটি অভ্যুত্থানচেষ্টা ছিল বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।

২৩ এপ্রিলের ঘটনায় যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। অবশ্য এর পরে প্রায় ১ মাস তাকে প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়ায় তার মৃত্যুরও গুঞ্জন শুরু হয়েছিল। তবে সে যাত্রায় সালমান বেঁচে গিয়েছিলেন।

ইতিমধ্যে সৌদি আরবে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন সালমান। বাণিজ্যিক শহর গড়ে তোলা, দেশকে তেল সম্পদের ওপর নির্ভরশীলতা থেকে সরিয়ে আনা, নারীদের স্বাধীনতা দেয়া এমনকি সিনেমা হলের যাত্রা শুরু করার উদ্যোগ নেন তিনি।

প্রিন্স সালমানের এসব পদক্ষেপে অনেকেই খুশি হয়েছিলেন। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো তাকে সর্বাত্মক সহায়তা করে যাচ্ছে। তবে মুসলিম বিশ্বের তার এসব পদক্ষেপকে বাঁকা চোখেই দেখা হয়।

তবে একক ক্ষমতাধর হয়ে ওঠা প্রতাপশালী যুবরাজর বিরুদ্ধে কেউ কোনো রকম সমালোচনার সাহস রাখে না। দেশের বাইরে হাতে গোনা কয়েকজন সমালোচক তার ও রাজপরিবারের সমালোচনা করছিল। এদের মধ্যে একজন ছিলেন সৌদি আরব থেকে নির্বাসিত সাংবাদিক জামাল খাশোগি।

বর্তমান বাদশাহ ও যুবরাজের কঠোর সমালোচক সাংবাদিক জামাল খাশোগি গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন।

খাশোগিকে দূতাবাসের ভেতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং এই হত্যাকাণ্ড যুবরাজ সালমানের সরাসরি নির্দেশে হয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশ করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর এ পর্যন্ত তার সব কর্মকাণ্ড সফল হলেও জামাল খাশোগির ঘটনায় তিনি বিপাকে পড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ ঘটনায় তার পদ হারানোর শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জামাল খাশোগির হাতে থাকা অ্যাপল ওয়াচে ঘটনার সময়কার অডিও রেকর্ড পাওয়া গেছে। এছাড়া ওই দিন সৌদি থেকে ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড দল তুরস্কে গিয়েছিলেন; যার সব তথ্য ইতিমধ্যে প্রকাশ হয়েছে। ওই দলে যারা ছিলেন তারা প্রায় সবাই যুবরাজের খুবই ঘনিষ্ঠ এবং তার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত।

ফলে খাশোগি হত্যার যুবরাজ সালমান জড়িতে তা প্রমাণিত হওয়ার আগেই মানুষ বিশ্বাস করে নিয়েছে। গণমাধ্যম ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার ব্যাপক ভূমিকার কারণে খাশোগির বিষয়টি যুবরাজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।

ফলে ইতিমধ্যে সৌদি আরবের ওপর এ ঘটনার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামী সপ্তাহে দেশটিতে অনুষ্ঠিতব্য বিনিয়োগবিষয়ক সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ।

এছাড়া বিশ্বের বড় বড় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানও এ সম্মেলন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, গুগল, ফোর্ড, উবার, জেপি মর্গান, সিএনএন, দ্যা ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, নিউইয়র্ক টাইমস, সিএনবিসি, ব্লুমবার্গ, ফক্স নিউজ।

এমন প্রেক্ষাপটে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে খবর প্রকাশ করা হয়েছে। তার স্থলে ছোট ভাই খালিদ বিন সালমানকে বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে বিষয়টি ধীরগতিতে সম্পন্ন করা হতে পারে।

ফ্রান্সের দৈনিক পত্রিকা লা ফিগারো বৃহস্পতিবার প্যারিসের একটি কূটনৈতিক সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে।

খবরে বলা হয়েছে, ইস্তাম্বুলে সৌদি দূতাবাস থেকে সাংবাদিক জামাল খাশোগির গুম হয়ে যাওয়া নিয়ে সৌদি আরবের প্রভাবশালী এলিজেন্স কাউন্সিল গোপনে বৈঠক করেছে। এই এলিজেন্স কাউন্সিল গত বছর বিন সালমানকে যুবরাজ পদে নিয়োগ দিয়েছিল।

কিন্তু ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে এরই মধ্যে যুবরাজ বিন সালমান কয়েকজন প্রিন্সের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে এই কাউন্সিলের বিরাগভাজন হয়েছেন।

ফরাসি পত্রিকায় বলা হয়েছে, এই কাউন্সিল এখন ২৮ বছর বয়সী মোহাম্মাদ বিন সালমানের ছোট ভাই খালিদ বিন সালমানকে উপযুবরাজের দায়িত্ব দিতে চাইছে। পর্যায়ক্রমে তাকে যুবরাজের পদে অভিষিক্ত করা হবে। খালিদ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বপালন করছেন।

খালিদকে উপযুবরাজের পদে বসানোর অর্থ হবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যুবরাজের পদ হারাবেন মোহাম্মাদ বিন সালমান। এভাবে সৌদি রাজতন্ত্রের ক্ষমতা সালমান পরিবারের কাছেই রেখে দেয়া সম্ভব হবে।
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here