পেশা বদল করেছেন শিল্প সংশ্লিষ্ট অনেকেই

0
419

খবর৭১:শেখ দীন মাহমুদ,পাইকগাছা(খুলনা)প্রতিনিধি:
প্লাষ্টিকসহ আধুনিক বিভিন্ন মাদুরের ভীড়ে বিলুপ্ত হতে চলেছে পাইকগাছার ঐতিহ্যবাহী মেলের তৈরী মাদুর শিল্প। প্রয়োজনীয় পুঁজি,কাঁচামাল ও উপকরণের দুস্প্রাপ্যতাসহ নানা সংকট মাদুর শিল্প বিলুপ্তির প্রধান কারণ বলে মনে করছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। এমন অবস্থায় অনেকেই ইতোমধ্যে পেশা বদল করেছে। বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে এখনো যারা মৃতপ্রায় শিল্পটিকে পাহারা দিচ্ছেন তারাও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশংকায় অপেক্ষা করছেন পেশা বদলের।
খুলনার পাইকগাছা উপজেলার প্রত্যন্ত নিম্নাঞ্চলে বিশেষ করে,দেলুটি,সোলাদানা,গড়াইখালী,লতা,কপিলমুনিসহ আশে-পাশের কয়েকটি ইউনিয়নে মাদুর তৈরীর প্রধান উপকরণ মেলের উৎপাদনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তৃণমূলের মাদুর শিল্প এলাকা। চাহিদার সাথে সংগতি রেখে মৌসুমের একটা বড় সময় জুড়ে শিল্পীরা ব্যস্ত থাকতেন মেলে দিয়ে মাদুর তৈরীতে। সময়ের পরিক্রমায় উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় লোনা পানির চিংড়ী চাষের ফলে মারাত্নকভাবে হ্রাস পায় মাদুরের প্রধান উপকরণ মেলের উৎপাদন। ঐসময় এলাকার চাহিদা মিটিয়েও দেশের অন্যান্য এলাকায় পাঠানো হত পাইকগাছার মেলে ও মাদুর। আর এখন পর্যাপ্ত উৎপাদন না হওয়ায় শুধুমাত্র এলাকার চাহিদা পূরণেও হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের।
মাদুর শিল্পের এমন দুরাবস্থার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে এর শিল্পীরা জানান,বলা না বলা অনেক কথা। তাদের মতে মাদুরের প্রধান উপকরণ মেলের চাষ এখন একবারেই কমে গেছে। আর দু’এক জন যারা আবাদ করেন তার দামও গগণচুম্বি। একদিকে আধুনিক প্লাষ্টিক শিল্পের আধিক্যে চাহিদা কম অন্যদিকে একটি মাদুর তৈরীতে যে পরিমাণ খরচ হয় বাজারে ঠিক সে পরিমাণ দাম পাওয়া যায়না। শিল্পীরা জানান,বানিজ্যিকভাবে আগের মত এখন আর মেলের চাষ হয়না। অপ্রয়োজনীয় পতিত জমি কিংবা মাছের পাশাপাশি সাথী আবাদ হিসেবে শিল্প সংশ্লিষ্ট কিছু এলাকায় হাতে গোনা কয়েকজন মেলের আবাদ করেন। আবার কেউ কেউ নিতান্তই শখের বশে চিংড়ী ঘেরের পাশে অনুৎপাদিত মেলে সংরক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট শিল্পীদের দিযে তৈরী করিয়ে নেন চাহিদা মাফিক মাদুর। এরপর উদ্বৃত্ত মেলে বিক্রী করে দেন শিল্পীদের কাছে। এভাবে কোন রকম জোড়া তালি দিয়ে চলছে দক্ষিণের ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি।
শিল্প সংশ্লিষ্ট অনেকেই ক্ষোভের সাথে এ প্রকিবেদককে বলেন,সবুজ শ্যামল পাইকগাছার প্রান্তর জুড়ে এখন যতদূর চোখ যায় শুধু ঘের আর ঘের। প্রাধান্য পেয়েছে চিংড়ী চাষের। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রভাবশালী চিংড়ী চাষীদের হাতে তুলে দিতে হয় সম্বল সর্বস্ব এক খন্ড চাষের জমিও। আলাদা হারি বা ইজারা নিয়ে আবাদ করতেও প্রয়োজন অতিরিক্ত টাকার। সরকার শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে অলাভজনক এশিল্পে চালু করেনি কোন প্রকার ব্যাংক ঋণ। মাদুরের দক্ষিণ খুলনার অন্যতম প্রধান মোকাম কপিলমুনির মাদুর ব্যবসায়ী সুকুমার,পবিত্র মন্ডল জানান,শিল্পীদের শ্রম বাদে একটি মাদুর বুননে কাঁচামাল বাবদ খরচ হয় ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে চাহিদা নাথাকায় মাদুর প্রতি তাদের লাভ হচ্ছে ৫০/৬০ টাকা। অথচ একটি মাদুর বননে শিল্পীদের ১ থেকে ২ দিন পর্যন্ত সময় লেগে থাকে। একই সময়ে ভিন্ন পেশায় শ্রম বিতিক্র করলেও তাদের ৫ থেকে ৬ শ’ টাকা পর্যন্ত আয় হত বলে জানান তারা।
সর্বশেষ শিল্পী পরিবারের বয়োজেষ্ঠরা জানান,মাদুর শিল্পের এমন দুরাবস্থায় ঠিক কতদিন তা টিকে থাকবে এমন আশংকা রীতিমত ভর করেছে তাদের। তাদের পরবর্তী প্রজন্মও উৎসাহ হারাচ্ছে এশিল্পে। এমন অবস্থায় শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ছবিক্যাপঃ পাইকগাছার মাদুর শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন মাদুরের প্রধান কাঁচামাল মেলে প্রক্রিয়া করণে।
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here