পুলিশঘেরা বি এন পি কার্যালয়

0
255

খবর৭১:একটি খাবার হোটেলের সামনের ফুটপাতে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশের দাঙ্গা বিভাগের সদস্যরা। তাঁরা সতর্ক।

কিছু দূরে ডান ও বাঁ পাশে পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি। বাঁ পাশে পূবালী ব্যাংকের সামনেও পুলিশের সাঁজোয়া যান। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন পুলিশের আরো বেশ কিছু সদস্য। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের চিত্র এটা।
কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বলতে গেলে নেই। কার্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেখা গেল না। স্বল্পসংখ্যক নেতাকর্মী আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। রাজনীতি নিয়ে আলোচনা নেই তাদের কারো মুখেই।

গতকাল শনিবার দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এমন চিত্র দেখা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। মাঝে এক দিন গেছে। কিন্তু এখনো বিএনপি কার্যালয়ে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি নেই। অন্যদিকে ধানমণ্ডিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তার উল্টো চিত্র। দ্বিতীয় দিনের মতো দলটি নিজেদের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করেছে। সেখানে নেতাকর্মীদের তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এমনকি আশপাশের সড়কগুলোও লোকে লোকারণ্য।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছে, মূলত আটক বা গ্রেপ্তারের ভয়েই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আসছে না। তবে যেকোনো দলীয় ঘোষণা বা কর্মসূচিতে তারা মাঠে নামতে প্রস্তুত।

দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীও গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘সিইসি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) তফসিল ঘোষণার সময় বলেছেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করতে, রাজনৈতিক মামলা না দিতে। কিন্তু শুধু গত শুক্রবারই আমাদের তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দায়ের হচ্ছে নতুন নতুন মামলাও। ’

বিএনপি কার্যালয়ের পাশের একটি চায়ের দোকানের সামনে বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কথা হয় দলের নরসিংদী জেলার একজন নেতার সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নেতা , ‘সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড় চলছে। তাই রিস্ক নিয়ে কেউ কেন্দ্রীয় অফিসে আসতে চায় না, যদি পুলিশ আটক করে। আমিও অফিসে ঢুকিনি। একজন নেতার সঙ্গে দেখা করব। তিনি একটি রেস্টুরেন্টে সময় দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরে তাঁর সঙ্গে দেখা করেই চলে যাব। ’

কার্যালয়ের পাশে বিএনপির একজন শুভানুধ্যায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি লন্ডনে থাকেন। তিনিও নাম প্রকাশ করতে চাননি। তিনি বলেন, ‘দেশে আছি, তাই ভালোবাসার টানে এসেছিলাম। কিন্তু পুলিশের যে ব্যারিকেড তাতে আর সামনে যাওয়ার সাহস পেলাম না। ’ কথা বলার মধ্যেই কয়েকজন ব্যক্তি সেখানে আসে। তিনি চলে যান তাদের সঙ্গে।

গতকাল সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সেখানেও নেতাকর্মীদের খুব একটা উপস্থিতি দেখা যায়নি। সংখ্যায় সাংবাদিকই বেশি ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা এ বি এম মোশাররফ হোসেন, আবেদ রাজা প্রমুখ। তাঁরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উপস্থিতির মধ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আগে কার্যালয়ে আসেন। আর রুহুল কবীর রিজভী, সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেনসহ কয়েকজন নেতাকর্মী আগের রাতে কার্যালয়ে ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে বিএনপির এই নেতারা কার্যালয় ত্যাগ করেন। রিজভী শাহবাগে কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে মিছিল করেন। দুপুরের পর আবার তিনি কার্যালয়ে আসেন।

বিএনপি কার্যালয়ের আশপাশে বেশ কয়েকটি চায়ের টং দোকান থাকলেও গতকাল সেগুলো দেখা যায়নি। কার্যালয়ে মূল ফটকে বিএনপির নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মীদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

গুলশানে অন্য চিত্র : বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সরব না থাকলেও দীর্ঘদিন পর দলীয় নেতাকর্মীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে ওঠে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি না তা জানতে নেতাকর্মীরা ছুটে এসেছে।

বিকেল সাড়ে ৩টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা গুলশান কার্যালয়ে আসতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় নির্বাচন ও আন্দোলন নিয়ে করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

বিএনপি তাদের আগামী দিনের করণীয় ঠিক করার জন্য মতামত নিতে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বৈঠকে বসে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বৈঠকটি শেষ হয়। এরপর রাত ৮টায় শুরু হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ‘আমাদের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ ও তাদের জোট নির্বাচন নিয়ে উৎসব করে যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা এত নির্যাতন, হামলা-মামলার পরও চেষ্টা করছে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তাঁর কার্যালয়কে সরগরম রাখতে। ’
খবর৭১/জি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here