পুণ্যময় রমজান মাসে ঈমানদারের রিজিক বাড়ে

0
972

খবর৭১ঃমহানবী (সা.)-এর অভ্যাস ছিল, বিশেষ ঘটনা, সময় ও মৌসুমে তিনি সাহাবায়ে কেরামকে বিশেষ নির্দেশনা দিতেন। যখন যে কথা বলা প্রয়োজন মনে করতেন, সেটা তিনি বলে দিতেন। একবার যখন রমজানের চাঁদ ওঠার সময় ঘনিয়ে এলো, রমজান সম্পর্কে তিনি এক ভাষণ দিয়েছেন। সে ভাষণে রমজানের ব্যাপারে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা তিনি বলেছেন।

‘রমজান এক-এ সত্তরের মাস’—এ কথা ওই হাদিস থেকেই জানা যায়। সেই নাতিদীর্ঘ ভাষণ হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে এসেছে। যেমন—সহিহ ইবনে খুজাইমা, হাদিস নম্বর : ১৮৮৭; বাইহাকি, শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৩৩৬; আল-কামেল লি ইবনিল আদি : ৬/৫১২; আত তাকয়িদ লি মারিফাতিস সুনানি ওয়াল মাসানিদ, পৃষ্ঠা-২০৫।

এই হাদিসের একটি টুকরো হলো—‘শাহরুন ইউজাদু ফি রিজকিল মু’মিনি ফিহি’। অর্থাৎ এই পুণ্যময় রমজান মাসে ঈমানদারের রিজিক বাড়ে। এ কথার কয়েকটি ব্যাখ্যা হতে পারে। এক. রমজানে ঈমান ও আমল বৃদ্ধি পায়। সব মুসলমান কমবেশি ইবাদত-বন্দেগি করে থাকেন। এটা আল্লাহর নিয়ামত। এটাও এক ধরনের রিজিক। রমজানে এ রিজিক ও নিয়ামত বৃদ্ধি পায়। দুই. রমজানে মুসলমানরা বেশি বেশি দান-সদকা করে থাকেন, তাঁরা আত্মীয়-স্বজনের অধিকার বিষয়ে সচেষ্ট হন, এ কাজগুলো রিজিক বাড়ার অন্যতম উপায়। একাধিক হাদিসে এ বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। তিন. বাহ্যিকভাবে রমজানে তুলনামূলক ভালো খাবারের ব্যবস্থা হয়, অনেক দেশে রমজানে শ্রমিকদের বেতনের সঙ্গে বোনাসও দেওয়া হয়, রমজানে বিভিন্ন জায়গা থেকে হাদিয়া-তুহফা আসে, বিত্তবানরা দান করে থাকেন—এসবের দিকে তাকালে মহানবী (সা.)-এর এ কথা খুব সহজেই বুঝে আসে যে রমজানে মুসলমানদের রিজিক বাড়ে।

অভিধান মতে, রিজিক এমন বস্তু, যা কোনো প্রাণী আহাররূপে গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে সে দৈহিক শক্তি অর্জন, প্রবৃদ্ধি সাধন ও জীবন রক্ষা করতে পারে। রিজিকের জন্য মালিকানাস্বত্ব শর্ত নয়। জীবজন্তু রিজিক ভোগ করে থাকে, কিন্তু তারা সেটার মালিক হয় না। তাই রিজিক শব্দটির অর্থ ব্যাপক। রিজিক হালালও হতে পারে, আবার হারামও হতে পারে।

আল্লাহ তাআলা গোটা সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক। তিনি একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও রিজিকদাতা। তিনি সারা বিশ্বের ব্যবস্থাপক। আল্লাহ তাআলা সব প্রাণীকে উত্তম রিজিক দান করেন, এমনকি কখনো কখনো অন্যান্য সৃষ্টজীবকে মানুষের চেয়ে বেশি রিজিক দিয়ে থাকেন। পৃথিবীতে বিচরণকারী সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহ তাআলা নিজেই গ্রহণ করেছেন। এটি সৃষ্টিজগতের প্রতি তাঁর করুণা ছাড়া আর কিছুই নয়। কোনো প্রাণীকে যতক্ষণ তিনি জীবিত রাখার ইচ্ছা করেন, ততক্ষণ তার রিজিক যেকোনো উপায়ে তার কাছে পৌঁছতে থাকে। ক্ষুধার কারণে যদি কোনো প্রাণীর মৃত্যু হয়, তার অর্থ এই নয় যে আল্লাহর ভাণ্ডারে রিজিক কমে গেছে। বরং এর অর্থ হলো ওই প্রাণীকে জীবিত রাখা আল্লাহর ইচ্ছা ছিল না। তাই অন্যান্য দুর্ঘটনার মতো অনাহারও কারো মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা আল্লাহ রিজিক বৃদ্ধি করেন, আর যাকে ইচ্ছা দারিদ্র্যপীড়িত করেন। জীবিকার ক্ষেত্রে সব মানুষ সমান নয়। আল্লাহর ইচ্ছা ও বিশেষ হিকমতে রিজিক বণ্টন করা হয়। একজন বিরাট সম্পদশালী হয়, আরেকজনের জীবন দুর্বিষহ হয় দারিদ্র্যের কশাঘাতে।

রিজিক কমবেশি হওয়ার কারণ কী? এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর সব বান্দাকে প্রচুর রিজিক দিতেন, তাহলে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা, সেই পরিমাণ (রিজিক) অবতীর্ণ করেন।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২৭)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here